নীলফামারীর সৈয়দপুরে বহুল আলোচিত বোতলাগাড়ী ইউনিয়নে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ঘরগুলোর কিছু মানুষ হতদরিদ্র না হওয়ায় এবং তাদের জীবনে সচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও তারা এ প্রকল্পের আওতায় ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন। ফলে তারা তাদের নামে বরাদ্দকৃত ঘর অন্যকে ভাড়া দিয়েছেন, আবার কেউ কেউ অন্যের কাছে বিক্রিও করেছেন।
এমনটি অভিযোগ পাওয়া গেছে এলাকাবাসীর কাছ থেকে।
সরেজমিন দেখা গেছে, কেউবা বরাদ্দ নিয়ে অন্যের কাছে ভাড়া কিংবা বিক্রি করেছেন। এমন চিত্র নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের খোর্দ্দ বোতলাগাড়ী আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৈরি করা ঘরের।
অভিযোগ রয়েছে, যারা সচ্ছল ও জমি আছে, তাদের নামে ঘর বরাদ্দ দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন মোবারক হোসেন (৪২)। তিনি জানান, তার বাড়ি দিনাজপুরের রানীবন্দরে। গভীর রাত পর্যন্ত সৈয়দপুর শহরে তিনি রিকশা চালান। প্রতিদিন বাড়িতে যাতায়াতে তার সমস্যা হতো। আশ্রয়ণে স্বল্প টাকায় ঘর ভাড়া পেয়েছেন। তাই স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে এখন সেখানেই থাকছেন।
জানা যায়, ২০১৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ আওতায় বোতলাগাড়ী ইউনিয়নে খোর্দ্দ বোতলাগাড়ীতে আবাসনের ঘর তৈরি করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মাধ্যমে প্রকল্পে সুবিধাভোগীদের জন্য নির্মাণ করা হয় ১০৯টি আধাপাকা ও টিনশেড বাড়ি। একই বছর ইউনিয়নের ভূমিহীন ও দুস্থদের মধ্যে ঘরগুলো বরাদ্দ দেয় স্থানীয় প্রশাসন। তবে যাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেই বরাদ্দ পাওয়ার পর আশ্রয়ণের বাড়িতে উঠেননি। এর মধ্যে আধাপাকা বাড়ির ১/৫ নম্বর নাসিমা বেগম, ৮/৩ নম্বর মো. বাবু, ১৫/২ নম্বর বুলবুল, ১১/১ নম্বর আব্বাস আলী, ১১/৪ নম্বর ছকিনা বেগম। ২১ নম্বর টিনশেড বাড়ির হোসনে আরা ঢেপো, ৬ নম্বর আছিউল, ৭ নম্বর হাকিম, ১৯ নম্বর সেকেন্দার আলী ও ২৩ নম্বর মঞ্জু আরার নামে বরাদ্দ হয়। কিন্তু তারা নিজেরা না থেকে ওই ঘরগুলো ভাড়া দিয়েছেন।
অন্যদিকে যেসব বাড়ি বিক্রি হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে— নুর ইসলামের বাড়ি নম্বর ৭/৩, আকলিমার বাড়ি নম্বর ১২/৫, জাহিদুল ইসলামের বাড়ি নম্বর ৩/৫ ও খলিলের বাড়ি নম্বর ৯/২।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশ্রয়ণের এক বাসিন্দা বলেন, ‘আশ্রয়ণের ২১ নম্বর বাড়িটি বরাদ্দ পেয়েছিলেন ২ নম্বর ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা হোসনে আরা ঢেপো নামে পঞ্চাশোর্ধ্ব এক নারী। তবে তিনি সচ্ছল ও নিজস্ব জমি-বসতবাড়ি থাকায় আশ্রয়ণের বাড়িটিতে কখনও থাকেননি। বরাদ্দের দিন থেকে এটি পরিত্যক্ত থাকায় এর বিভিন্ন অংশে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে এখন শিয়াল-কুকুরের বসবাস।’ প্রকল্পের আরও কয়েকটি বাড়ির অবস্থা প্রায় একই। বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে কেউ কেউ একদিনের জন্যও বাড়ির তালা খোলেননি। ফলে দীর্ঘদিন বাড়িগুলো পরিত্যক্ত থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
বোতলাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান জুন বলেন, ‘আমার জানামতে ইতোমধ্যে আশ্রয়ণের ঘর বরাদ্দ নিয়ে যারা থাকছেন না, ভাড়া কিংবা বিক্রি করেছেন, তাদের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। এর পরও এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে তাদের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হবে।’
তবে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ নিয়ে না থাকা, ভাড়া কিংবা বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই। যদি কেউ এমনটি করে থাকেন, তবে অবশ্যই তদন্তসাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।