মরুর শহর শারজা-দুবাই রীতিমতো ‘বেদনার বালুচর’ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য। গত বিশ্বকাপ থেকে পদস্খলনের শুরু। তারপর থেকে আর নেই অগ্রগতি, শুধুই পশ্চাদপসরণ। আরব আমিরাতে টানা ৬ টি২০ খেলে সবই হেরেছে বাংলাদেশ।
এবার দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। হারতে হারতে জিম্বাবুইয়ে-আফগানিস্তানের কাছেও নিয়মিত পরাভূত হয়ে ‘টাইগার’ নামে পরিচিত দলটি এখন রক্তাক্ত-আহত। ঘুরে দাঁড়িয়ে গৌরব কিছুটা পুনরুদ্ধারের শেষ সুযোগ আজ দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
তবে দুইবারই সুপার ফোরের ৩ ম্যাচেই হার দেখে। ২০০৪ থেকেই মূলত ফরম্যাট বদলে সুপার ফোর পর্বের শুরু হয়। কিন্তু ২০১০ সালের আসরে আবারও রবিন লীগ পদ্ধতির গ্রæপ পর্ব থেকে বিদায় নেয় বাংলাদেশ ৩ ম্যাচেই ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে। সেই দলটি বিস্ময় জাগানিয়া পারফর্মেন্স দেখায় ২০১২ সালে।
এবার রবিন লীগ পদ্ধতিতে হওয়া গ্রুপ পর্বে নিজেদের মাঠে ভারত ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বিশ্বকে চমকে দেয় বাংলাদেশ। উঠে যায় প্রথমবারের মতো ফাইনালে। অন্যতম ফেবারিট হয়েও সেবার পাকিস্তানের কাছে ২ রানের হৃদয় বিদারক হারে স্বপ্নভঙ্গ হয়। ২০১৪ সালে গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ এমনকি আফগানিস্তানের কাছেও হেরে যায়। এছাড়া ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে আবার স্বাগতিক হয়েও ফাইনাল খেলতে পারেনি। ৮ বছর পর আবারও গ্রæপ পর্ব থেকেই ছিটকে যাওয়ার জোর শঙ্কায় পড়েছে বাংলাদেশ। কারণ একমাত্র টি২০ ফরম্যাটের এশিয়া কাপ ২০১৬ সালে এবং সর্বশেষ ওয়ানডে ফরম্যাটের ২০১৮ এশিয়া কাপে ফাইনাল খেলে বাংলাদেশ। কিন্তু এবার টানা ১৬ টি২০ ম্যাচে মাত্র ২ জয় নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ দল।
ব্যাটারদের বিগ হিটিং সমস্যা, টপঅর্ডারদের ব্যাটিং ব্যর্থতা বারবারই ডুবিয়েছে বাংলাদেশকে। আর সেই দুর্বলতা দেখা গেছে এবার প্রথম ম্যাচে আফগানদের বিপক্ষেও। টপঅর্ডাররা যথারীতি ব্যর্থ হয়েছেন। ৬.২ ওভারে মাত্র ২৮ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আর এ বিষয়টিকে পরাজয়ের জন্য দুষেছেন সাকিবও। তিনি বলেন, ‘৭-৮ ওভারের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচে থাকা কঠিন।’ এবার বাংলাদেশের অবস্থা বেশ নাজুক হলেও ২০১৬ সালে হওয়া একমাত্র টি২০ এশিয়া কাপে ফাইনাল খেলে আরব আমিরাত ও পাকিস্তানকে হারিয়ে।
তবে গত বছর আরব আমিরাতে হওয়া টি২০ বিশ্বকাপে খুবই বাজে কেটেছে বাংলাদেশের। ওমানে হওয়া প্রাথমিক রাউন্ডে ২ ম্যাচ জিতলেও স্কটল্যান্ডের কাছে হেরেছে। পরে আরব আমিরাতের মাটিতে হওয়া সুপার টুয়েলভ পর্বের ৫ ম্যাচেই হার দেখেছে। অবশ্য শ্রীলঙ্কাও বিশ্বকাপে ভাল করতে পারেনি। ২০১৬ টি২০ এশিয়া কাপে লঙ্কানদের ২৩ রানে পরাজিত করে বাংলাদেশ, কিন্তু গত বিশ্বকাপে হেরে যায় ৫ উইকেটে। এবার এশিয়া কাপ মঞ্চে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রতিশোধ নেয়ার পালা লঙ্কানদের। দুই দলেরই আজ বড় চ্যালেঞ্জ ব্যাটিংয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর। প্রথম ম্যাচে উভয় দল আফগানদের কাছে হেরেছে মূলত ব্যাটিং ব্যর্থতায়।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ১২ টি২০ খেলে ৮টি জিতে অবশ্য এগিয়েই থাকবে লঙ্কানরা। কিন্তু সর্বশেষ এশিয়া কাপেও আফগানিস্তানের কাছে উভয় দল হেরে যায়, তবে প্রথম ম্যাচে লঙ্কানদের হারানো বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত সুপার ফোরে জায়গা করে নেয় এবং ফাইনাল খেলে। এবারও কি সেরকম কিছু করতে পারবে বাংলাদেশ? তবে ওয়ানডে ফরম্যাট আর টি২০ ফরম্যাটে বাংলাদেশ দলের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। আইসিসি র্যাঙ্কিংয়েও বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে লঙ্কানরা। টানা ৪ আসরের ৩টিতেই ফাইনাল খেলার পরেও বাস্তবে বিপর্যস্ত একটি দল বাংলাদেশ।
গত বছর এই আরব আমিরাতে হওয়া টি২০ বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচ খেলে ৬টিতেই হার দেখে বাংলাদেশ। সেখান থেকে যে অবনতির শুরু তা থামেনি এখন পর্যন্ত। সবমিলিয়ে টানা ১৬ ম্যাচে মাত্র ২ জয়, ১৩ হার দেখে এশিয়া কাপে এসে আবার আফগানিস্তানের কাছে হার এই ফরম্যাটে স্পষ্ট করে দিয়েছে বাংলাদেশের দুর্বলতা। এর সঙ্গে বারবার স্কোয়াডে পরিবর্তনও এসেছে। সর্বশেষ সিরিজে অধিনায়ক বদলে জিম্বাবুইয়ের কাছে ২-১ ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। এবার আফগানদের কাছে নতুন করে সাকিবের কাঁধে নেতৃত্ব দিয়েও হেরেছে। ওয়ানডে ও টি২০ মিলিয়ে এই মরুর বুকে ১৭ ম্যাচ খেলে মাত্র ৩ বার জয়ের মুখ দেখেছে বাংলাদেশ। তবে ৬ টি২০ খেলে জিততে পারেনি একবারও। সেখানে আজ চলতি এশিয়া কাপে টিকে থাকার লড়াই।
আরব আমিরাতের মাটিতে বাংলাদেশ দল ২৮ বছরে প্রথম জয়ের দেখা পায় গত এশিয়া কাপে দুবাইয়ের এ মাঠেই। ওয়ানডে ফরম্যাটের সেই আসরে জয়টা কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই এসেছে ১৩৭ রানের বড় ব্যবধানে। যদিও গত বছর টি২০ বিশ্বকাপে শারজায় লঙ্কানরা ৫ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশকে। এবার বাংলাদেশের প্রতিশোধ নেয়ার পালা। কারণ এবার ফরম্যাট টি২০।
তবে এসব কিছু মাথায় না রেখে দুদলের অভিন্ন লক্ষ্য ন্যূনতম ব্যবধানে শুধু জিতে সুপার ফোরে ওঠা। ব্যাটিংয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর পাশাপাশি ডেথ ওভারে বোলিংয়ে দারুণ কিছু করতে আজ একাদশে একাধিক পরিবর্তন নিয়েই নামবে বাংলাদেশ। আর লঙ্কানরাও কিছু পরিবর্তন আনবে জয় পেতে।