Home » পুতিন এখন কী ভাবছেন

পুতিন এখন কী ভাবছেন

0 মন্তব্য 409 ভিউজ

ইউক্রেনের বাহিনীর পাল্টা আক্রমণে দেশটির উত্তর-পূর্বের উল্লেখযোগ্য এলাকার দখল হারিয়েছে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনের বাহিনীর এই সাফল্যের বিপরীতে রুশ বাহিনীর বিপর্যয় দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য কী অর্থ বহন করে, তিনি এখন কী ভাবছেন, কী করতে পারেন, তা বিশ্লেষণ করেছেন বিবিসির রাশিয়াবিষয়ক সম্পাদক স্টিভ রোজেনবার্গ।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সাপ্তাহিক সংবাদ অনুষ্ঠানে সাধারণত ক্রেমলিনের সাফল্যের কথাই প্রচার করা হয়। আর দর্শকেরাও তেমনটাই প্রত্যাশা করেন।

তবে গত রোববারের অনুষ্ঠানটি একটি বিরল স্বীকারোক্তির মধ্য দিয়ে শুরু হয়। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক দিমিত্রি কিসেলেভ মলিন চেহারায় ঘোষণা করেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযানের ক্ষেত্রে এটি ছিল এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কঠিন সপ্তাহ।

দিমিত্রি কিসেলেভ আরও বলেন, বিশেষ করে খারকিভের যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি ছিল কঠিন। সেখানে শত্রু বাহিনীর আক্রমণের পর রুশ সেনারা ‘মুক্ত’ শহরগুলো ছেড়ে যেতে বাধ্য হন।

রুশ সেনারা কয়েক মাস আগেই এই এলাকাগুলো দখল করেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তাঁরা ইউক্রেনের বাহিনীর পাল্টা আক্রমণে তা হারিয়েছে।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে এখনো পরিস্থিতিকে নিজেদের অনুকূল হিসেবে দেখানো হচ্ছে। খারকিভ অঞ্চলে যা ঘটেছে, তাকে সরকারিভাবে পশ্চাদপসরণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে না।

রাশিয়ার সরকারি সংবাদপত্রে বলা হয়, ইউক্রেনের ইজিয়ামসহ বিভিন্ন স্থান থেকে রুশ সেনাদের পালিয়ে যাওয়ার গুজব নাকচ করেছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য, রুশ সেনারা পালিয়ে যাননি। এটা তাঁদের পূর্বপরিকল্পিত পুনর্বিন্যাসেরই অংশ।

অবশ্য রাশিয়ার একটি ট্যাবলয়েডে একজন সামরিক বিশ্লেষক ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, এটা ইতিমধ্যে স্পষ্ট যে রুশ বাহিনী তার শত্রুকে অবমূল্যায়ন করেছে। রুশ বাহিনী সক্রিয়তা দেখাতে অনেক সময় নিয়েছে। যার পরিণতিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। রুশ বাহিনী পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছে। তারা তাদের সেনা প্রত্যাহার করে ক্ষয়ক্ষতি কমানোর চেষ্টা করেছে।

রাশিয়ার এই ‘পরাজয়’ রুশপন্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চ্যানেলগুলোতে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। ‘দেশপ্রেমিক’ রুশ ব্লগারদের মধ্যেও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ভুলের জন্য তাঁরা তাঁদের সামরিক বাহিনীকে দুষছে।

চেচনিয়ার প্রভাবশালী নেতা রমজান কাদিরভের প্রতিক্রিয়াও একই। তিনি বলেছেন, আজ বা কাল যদি রুশ যুদ্ধকৌশলে পরিবর্তন না করা হয়, তা হলে তিনি দেশের নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলতে বাধ্য হবেন। কারণ, যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি খুব উদ্বেগজনক।

প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্দেশে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। আর কদিন পরই এই অভিযানের সাত মাস পূর্ণ হবে।

অভিযান শুরুর পরের দিনগুলোতে রুশ টিভিতে দেশটির রাজনীতিবিদ, ভাষ্যকার ও বিশ্লেষকেরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, ক্রেমলিনের এই বিশেষ সামরিক অভিযান কয়েক দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। ইউক্রেনের জনগণ রাশিয়ান সেনাদের মুক্তিদাতা হিসেবে অভ্যর্থনা জানাবেন। ইউক্রেনের সরকার তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে।

কিন্তু এই ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয়নি। বরং প্রায় সাত মাস ধরে চলা যুদ্ধে রুশ বাহিনী দখলকৃত ভূমি হারাচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। ইউক্রেনে এই বিপর্যয়ের জন্য পুতিনকে কোনো রাজনৈতিক পরিণতি ভোগ করতে হবে কি না, সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

২০ বছরের বেশি সময় ধরে পুতিন রুশ অভিজাতদের মধ্যে একজন বিজয়ী নেতার খ্যাতি উপভোগ করে আসছেন। অজেয় হিসেবে তাঁর নাম রয়েছে। অতীতে দেখা গেছে, পুতিনকে যতই আটকানোর চেষ্টা হয়েছে, তিনি কোনো না কোনোভাবে বেরিয়ে গেছেন। তবে গত ২৪ ফেব্রুয়ারির পর এই পরিস্থিতির বদল ঘটেছে।

গত সাত মাসের পরিস্থিতি থেকে বোঝা যায়, ইউক্রেন আক্রমণ করার পুতিনের সিদ্ধান্তটি ছিল হিসাবের একটি বড় ভুল। তিনি দ্রুত বিজয় নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। উল্টো রাশিয়া একটি দীর্ঘ, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে আটকা পড়েছে। একের পর এক বিব্রতকর পরাজয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। যদিও ক্রেমলিন প্রকাশ্যে পরাজয় স্বীকার করছে না, যুদ্ধ শেষ করারও কোনো ইচ্ছা দেখা যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন

মতামত দিন


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.

আমাদের সম্পর্কে

We’re a media company. We promise to tell you what’s new in the parts of modern life that matter. Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo. Sed consequat, leo eget bibendum Aa, augue velit.