ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যাপারে শুরুতে কোনো অবস্থান না নেওয়া রাষ্ট্রগুলোও এখন রাশিয়ার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে সুর মেলাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে।
জাতিসংঘ অধিবেশনে যুদ্ধের বিপক্ষেই অবস্থান নিতে দেখা গেছে আন্তর্জাতিক মহলকে।
ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকেই পশ্চিমা কর্মকর্তারা ক্রেমলিন একঘরে হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করে আসছিলেন। সেই বক্তব্যের কোনো প্রমাণ এত দিন না মিললেও গত মঙ্গলবার, বুধ ও বৃহস্পতিবার দেখা গেছে ভিন্ন এক চিত্র।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি একমাত্র নেতা হিসেবে দেশে বসেই জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যাতে অংশ নিতে পারেন, সে লক্ষ্যে এর পক্ষে ভোট দিয়েছে আন্তর্জাতিক মহল। এ ক্ষেত্রে রাশিয়ার আপত্তি আমলেই নেয়নি তারা।
গত বুধবারই ইউক্রেনে আরো তিন লাখ সেনা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পর্যবেক্ষকদের মতে, যুদ্ধ যে সহসাই শেষ হচ্ছে না, সে রকমই এক ইঙ্গিত মিলেছে তাঁর এ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে। এর ওপর পারমাণবিক অস্ত্র একটি বিকল্প হতে পারে বলেও হুঁশিয়ার করেছেন পুতিন।
এমন একটি সময়ে এ ঘোষণাগুলো এসেছে, যখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক সমাবেশ জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে।
স্বাভাবিকভাবেই পুতিনের ঘোষণার রেশ দেখা গেছে অধিবেশনে। মঙ্গল ও বুধবার একাধিক বিশ্বনেতা নিজ বক্তব্যে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের নিন্দা জানিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবারও অধিবেশনকক্ষ এবং নিরাপত্তা পরিষদ দুই স্থানে প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে। এই দিনটিতে নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্য রাশিয়ার কড়া সমালোচনা করেছে।
আগের অবস্থান থেকে সরে এসে গত সপ্তাহে চীন এবং ভারতও রাশিয়ার সমালোচনা করেছে। দেশ দুটি ইউক্রেন যুদ্ধ প্রশ্নে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। শঙ্কা প্রকাশ করেছে বৈশ্বিক খাদ্য এবং জ্বালানি সংকটে ইউক্রেন যুদ্ধের বিরূপ প্রভাব নিয়েও।
তবে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সরাসরি যুদ্ধের প্রতি নিন্দা জানাননি। তিনি বলেছেন, সব দেশের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা বজায় রাখার পক্ষে চীনের দৃঢ় অবস্থান। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের গতিবিধি আন্তর্জাতিক মহলের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।
রাশিয়ার আরেক বন্ধুরাষ্ট্র ব্রাজিলও একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যুদ্ধ বন্ধের তাৎক্ষণিক প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্লোস আলবের্তো ফ্রাংকা বলেন, দ্বন্দ্বের বর্তমান পরিস্থিতি প্রতিকূলে চলে যাওয়ার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি এবং বিশ্ব শৃঙ্খলায় এর প্রভাব অননুমেয়।
নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য তালিকার বাইরের দেশ বেলারুশই শুধু রাশিয়ার পক্ষে কথা বলেছে। তবে তারাও এ যুদ্ধকে ‘মর্মান্তিক’ আখ্যা দিয়ে এর দ্রুত অবসানের আহ্বান জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, ‘ছোট ও বড়, উত্তর ও দক্ষিণ, উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশের নেতারা সাধারণ অধিবেশনে যুদ্ধের পরিণতি এবং এর সমাপ্তির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আওয়াজ তুলেছেন। ’
রাশিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলের এই অবস্থানের বিষয়টি নতুন করে শান্তি আলোচনার আশা জাগাচ্ছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
তবে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এসব মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো অনুতপ্ততা দেখাননি এবং এ সময় তাঁকে দেখা গেছে বরাবরের মতোই আক্রমণাত্মক ভূমিকায়। সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া
পূর্ববর্তী পোস্ট