টাঙ্গাইল পাসপোর্ট অফিসের কতিপয় কর্মকর্তারা সরাসরি ঘুষ লেনদেন না করে এবার বিশেষ সংকেতের মাধ্যমে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। পাসপোর্ট অফিস ও এর আশপাশের এলাকা ঘুরে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভোর থেকেই শত শত পাসপোর্ট প্রত্যাশী আসেন টাঙ্গাইল আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। পাসপোর্ট অফিসের ভেতর থেকে বাহির পর্যন্ত তাদের দীর্ঘ লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এ সময় কথা হয় বেশকয়েকজন পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা জানান, সরকারি নিয়মে ব্যাংক ড্রাফ করে বৈধ নিয়মেই আবেদন ফাইল জমা দিতে গেলে অফিস থেকে বলে আপনার পেশা দিয়েছেন প্রাইভেট সার্ভিস, এ কারণে আপনার ট্রেড লাইসেন্স লাগবে। ফাইল জমা না দিতে পেরে একই কাগজপত্র স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে ফাইল প্রতি ১৫০০ টাকার মাধ্যমে জমা দিলে তা নিচ্ছে ওই কর্মকর্তারা।
তারা আরো জানান, পাসপোর্ট অফিসের পাশে কোর্ট চত্বরে জেলা পরিষদ রোডের দুই পাশে গড়ে উঠেছে চায়ের দোকান, কম্পিউটার দোকান, ফ্লেক্সিলোডের দোকান ও ওষুধের দোকান। বেশিরভাগ দোকানেই লোক দেখানোর জন্য রাখা হয়েছে কম্পিউটার ও ফটোকপি মেশিন। কিন্তু এর আড়ালে চলে ভিন্ন ব্যবসা। এখানে প্রকাশ্যে চলছে পাসপোর্ট নিয়ে জাল-জালিয়াতি কারবার। এসব দোকানে ঘাপটি মেরে বসে থাকে দালালরা। পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা কাগজপত্র ঠিক করতে গেলে দালালরা বলে ভাই নিজে নিজে পাসপোর্ট করতে পারবেন না। ভেতরে আমাদের লোক আছে, কোনো রকম হয়রানি ছাড়াই পাসপোর্ট করতে পারবেন। এমন সুবিধাভোগীর আশ্বাসে বেশীরভাগ পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা দালালদের ফাঁদে পড়ছেন।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে পাসপোর্ট অফিসের একাধিক দালাল জানান, একদিনে পাসপোর্টের ফিঙ্গার হয় না। ব্যাংকড্রাফ করার পরদিন ফিঙ্গার দিতে হয়। এর মূল কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, আগের দিন পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের ফাইলের সিরিয়াল নাম্বার হোয়াটস অ্যাপে দিতে হয়। জরুরি ফাইলের নিচে ফোটার চিহ্ন দিয়ে দেই। দিনশেষে প্রতি ফাইলে ১২০০ টাকা করে পাসপোর্ট অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের পরিশোধ করতে হয়। সরকারি নিয়মে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা লাগলেও দালালদের দিতে হয় আট থেকে ১২ হাজার টাকা। বানান ভুল থাকলে দিতে হয় ২০ হাজার টাকা এবং বয়স ভুল থাকলে তো কোনো কথাই নাই। ভুক্তভোগীকে গুনতে হয় লাখ টাকা।
পাসপোর্ট অফিসের তথ্য মতে, প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ৭০০ ফাইল জমা হয়। ডেলিভারি হয় ৪০০ থেকে ৫০০ পাসপোর্ট। ক্যাটাগড়িতে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা লাগলেও সরকারি নিয়মের কোনো তোয়াক্কা চলে না এ অফিসে।
এ বিষয়ে পাসপোর্ট অফিসের আরিফ নামের এক কর্মকর্তা জানান, আমি এখন আর জমা নেওয়ার দায়িত্বে নাই। ফাইল জমা নেওয়ার দায়িত্বে আছেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি কি করছেন আমি জানি না। পরে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমকে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. আতাউল গণি জানান, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। উপযুক্ত প্রমাণ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।