Home » বৈশ্বিক মন্দার পদধ্বনি ও আমাদের করণীয়

বৈশ্বিক মন্দার পদধ্বনি ও আমাদের করণীয়

0 মন্তব্য 318 ভিউজ

বেশ কিছু দিন ধরেই বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থা বিভিন্ন ধরনের শঙ্কা ও সম্ভাবনার কথা বলে আসছে। অর্থনীতির পরিস্থিতি নিয়ে এবার সতর্কবার্তা উচ্চারণ করলো জাতিসংঘ। জাতিসংঘ বলছে, বিশ্ব ‘মন্দার দ্বারপ্রান্তে’ এবং এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলো মন্দার ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক জাতিসংঘ সম্মেলন (আঙ্কটাড) বলেছে যে, উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর মুদ্রা ও রাজস্ব নীতি, সুদের হার বৃদ্ধিসহ নানাবিধ কারণ বিশ্বকে একটি বৈশ্বিক মন্দা ও স্থবিরতার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

গত সোমবার বাণিজ্য ও উন্নয়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আঙ্কটাড। এতে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে যে, ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকট এবং ২০২০ সালে করোনা মহামারি সংকট এবার আরও ঘনীভূত হতে পারে। এতে আরও বলা হয়েছে, সব অঞ্চল প্রভাবিত হবে, তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সবচেয়ে বেশি বিপদের ঘণ্টা বাজছে, যার মধ্যে অনেকগুলো ঋণখেলাপির কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে। আঙ্কটাডের মহাসচিব গ্রিনস্প্যান এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আজ আমাদের সতর্ক করা দরকার যে আমরা একটি নীতি-প্ররোচিত বৈশ্বিক মন্দার দ্বারপ্রান্তে’।

 চাকরি হারানো মানুষের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি, ক্ষুদ্রঋণ প্রবাহ আরও বেগবান করে গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হবে। সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতা ও সহায়তার পরিমাণ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি এখাতের দুর্নীতি রোধ করাই হতে পারে সম্ভাব্য বৈশ্বিক মন্দা মোকাবিলার অন্যতম কার্যকরী হাতিয়ার।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এখনো মন্দার প্রান্ত থেকে ফিরে আসার সময় আছে। কিছুই অনিবার্য নয়। আমাদের অবশ্যই পথ পরিবর্তন করতে হবে’। তিনি আরও বলেছেন, আমরা আরও বাস্তবসম্মত নীতির মিশ্রণের আহ্বান জানাই। তিনি বলেন, ‘আমি আবারও বলছি, আরও বাস্তবসম্মত নীতির মিশ্রণ, পণ্যমূল্যের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটাতে আমাদের আরও বেশি প্রচেষ্টা চালাতে হবে’। সংস্থাটি আরও জানায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ বছরের সুদের হার বৃদ্ধি চীন ব্যতীত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আনুমানিক ৩৬০ বিলিয়ন ডলার আয় হ্রাস পাবে। উন্নত অর্থনীতিতে সুদের হার বৃদ্ধির কারণে প্রায় ৯০টি উন্নয়নশীল দেশের মুদ্রা এ বছর ডলারের বিপরীতে দুর্বল হয়েছে।

পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া মহামারির আগের পাঁচ বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধির হারে নিচে থাকবে বলেও পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। আঙ্কটাড বলছে, পূর্ব এশিয়ায় এবার ৩ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে, যা গত বছর ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ব্যয়বহুল আমদানি ও রপ্তানির জন্য বৈশ্বিক চাহিদা হ্রাসের পাশাপাশি চীনের মন্দাও এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে আরও চাপ বাড়াবে। দক্ষিণ এশিয়া ও পশ্চিম এশিয়ায় ঋণ সংকট হয়েছে। এরই মধ্যে শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হয়ে গেছে। আফগানিস্তান ঋণের সংকটে রয়েছে এবং তুরস্ক ও পাকিস্তান ক্রমবর্ধমান সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। পাকিস্তান বন্যার কবলে পড়েছে এবং ঋণ বাড়ছে ও বৈদেশিক রিজার্ভ হ্রাস পাচ্ছে।

গ্রিনস্প্যান বলেছেন, মন্দার ঝুঁকি থেকে সরে আসার সময় আছে, যদি দেশগুলো তাদের কাছে থাকা কৌশলগুলোকে মুদ্রাস্ফীতি প্রশমিত করতে ও ঝুঁকিতে থাকা গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তার জন্য ব্যবহার করে।

বিগত ১৩-১৪ বছরের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতি বেশ খানিকটা চাপে পড়েছে। এর মূল কারণ হিসেবে দুই বছরের মহামারি করোনা ও সম্প্রতি ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়াই মূল কারণ হিসেবে অনেকেই দায়ী করছেন। যার নেতিবাচক প্রভাব আমাদের অর্থনীতিতেও দৃশ্যমান। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই দুটি সংকট ছাড়া আরও কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে যারা খোঁজখবর রাখেন তারা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে যে শঙ্কার কথা বলছেন তার পেছনে রয়েছে আরও কিছু সুস্পষ্ট কারণ।

প্রফেসর ড. মোহা. হাছানাত আলী , আইবিএ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

আরও পড়ুন

মতামত দিন


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.

আমাদের সম্পর্কে

We’re a media company. We promise to tell you what’s new in the parts of modern life that matter. Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo. Sed consequat, leo eget bibendum Aa, augue velit.