কীভাবে এবং কোন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে পরমাণু বোমার ব্যবহার হবে তা নিয়ে আলোচনা করেছেন রাশিয়ার সামরিক কর্মকর্তারা। এমনটাই বলছে মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য। ওই গোয়েন্দা রিপোর্ট পড়েছেন এমন একাধিক ব্যক্তি সিএনএনের কাছে বিষয়টি জানিয়েছেন। তবে ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স কাউন্সিলের ওই রিপোর্টটি নিয়ে বিভক্তি রয়েছে মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে। কারণ, এতে নিশ্চিতভাবে কিছু উল্লেখ না করে বরঞ্চ বিশ্লেষণের মাধ্যমে বুঝানো হয়েছে রাশিয়া পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই কিছু কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেন, নথিতে যেসব আলোচনার কথা বলা হয়েছে, তা হয়ত একটু বেশিই বর্ণনা করা হয়েছে। আসলে রাশিয়ার এখনও পরমাণু বোমা ব্যবহারের পরিকল্পনা নেই।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছিল, রাশিয়া পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে এমন কোনো ইঙ্গিত তারা দেখছে না। নতুন প্রকাশিত নথিতে ওই আলোচনার কোথাও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুক্ত ছিলেন এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যদিও মার্কিন প্রশাসনের অনেকেই বিষয়টিকে উদ্বেগজনক মনে করছেন। তাদের ধারণা, ইউক্রেনে যদি রাশিয়া চাপে থাকে তাহলে তারা এক পর্যায়ে গিয়ে পরমাণু বোমা ব্যবহার করতে পারে।
ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তাদের ধরে রাখতে রাশিয়া আরও কঠিন পদক্ষেপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসন পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে জেলেনস্কির বাহিনী। এখনও উল্লেখযোগ্য কোনো অর্জন না থাকলেও সেখানে চাপে আছে রুশ বাহিনী। সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার কর্মকর্তারা এই শহর ফাঁকা করার নির্দেশ দিয়েছেন। বর্তমানে সেখানে কোনো সাধারণ মানুষ নেই। এখন যুক্তরাষ্ট্র ভয় পাচ্ছে, ইউক্রেন যদি শেষ পর্যন্ত খেরসন দখল করে তাহলে পুতিন হয়ত এই শহরেই পরমাণু বোমা ব্যবহার করতে পারেন। এই গোয়েন্দা তথ্যের কথা প্রথম প্রকাশ করে নিউ ইয়র্ক টাইমস। তবে রিপোর্ট নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভক্তির বিষয়টি প্রথমে সামনে আনে সিএনএন।
তবে বড় পরমাণু বোমার পরিবর্তে কৌশলগত পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের বিষয়টি এখন আলোচনায় রয়েছে। এই ছোট পারমাণবিক ওয়ারহেড যুদ্ধক্ষেত্রে তুলনামূলক কম আঘাতের জন্য ব্যবহার করা হয়। এগুলোতে সাধারণত ১০ থেকে ১০০ কিলোটন ডিনামাইটের সমান বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। যেখানে সাধারণ পারমাণবিক অস্ত্রগুলি ৫০০ থেকে ৮০০ কিলোটন ডিনামাইটের সমান বিস্ফোরণ ঘটায়। এগুলো দিয়ে একটি বড় শহর ধ্বংস করে দেয়া সম্ভব। কৌশলগত পারমাণবিক বোমা আকারে ছোট হলেও ১০ থেকে ১০০ কিলোটনও অকল্পনীয়ভাবে ভয়াবহ হতে পারে। কারণ, ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে ফেলা বোমাগুলিও ছিল মাত্র ১৫ ও ২১ কিলোটনের।
সিএনএন পূর্বে রিপোর্ট করেছিল যে, মার্কিন কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন- রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা এখন যে কোনো সময়ের থেকে বেশি রয়েছে। পারমাণবিক অস্ত্রের যেকোনো ব্যবহার আন্তর্জাতিক ক্ষোভের জন্ম দেবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোকে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিতে চাপ সৃষ্টি করবে। ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের কর্মকর্তা জন কিরবি এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই প্রতিবেদনের বিবরণ সম্পর্কে আমার কোনো মন্তব্য নেই। আমরা শুরু থেকেই পরিষ্কার করে বলেছি, পারমাণবিক অস্ত্রের সম্ভাব্য ব্যবহার সম্পর্কে রাশিয়ার মন্তব্য গভীরভাবে উদ্বেগজনক এবং আমরা সেগুলিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। আমরা যতটা সম্ভব বিষয়টিকে পর্যবেক্ষণের আওতায় রাখতে চাচ্ছি। তবে এখনও আমরা কোনও ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছি না যে রাশিয়া এই ধরনের ব্যবহারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বুধবার তাদের ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতিতে লিখেছে, শুধুমাত্র প্রতিরক্ষামূলক কারণেই পরমাণু বোমা ব্যবহার করবে রাশিয়া। সিএনএন জানিয়েছে, নতুন ওই গোয়েন্দা তথ্য অত বেশি শক্তিশালী নয়। কোনো কোনো মার্কিন কর্মকর্তা বলছেন, পুতিন আসলে ইউক্রেনে কতদূর যেতে চান তা একমাত্র তিনিই জানেন।
এর আগে গত সেপ্টেম্বরে পুতিন একটি বক্তৃতায় প্রথম পরমাণু বোমা ব্যবহারের হুমকির কথা বলেন। তিনি বলেন, রাশিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্য হুমকি এবং রুশ জনগণকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই আমাদের সমস্ত অস্ত্র ব্যবহার করব। এটি একটি ফাঁকা হুঁশিয়ারি নয়। গত সপ্তাহে রাশিয়ান কর্মকর্তারা অভিযোগ করতে শুরু করেছেন যে- ইউক্রেন একটি ডার্টি বোমা ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন অভিযোগ পশ্চিমা দেশগুলো উড়িয়ে দিলেও তারা আশঙ্কা করছেন, রাশিয়া এখন পরমাণু বোমা ব্যবহারের অযুহাত খুঁজছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ানদের সাথে সরাসরি এবং খুব স্পষ্টভাবে যোগাযোগ করছে। প্রেসিডেন্ট পুতিন যদি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে তাহলে এর পরিণতি কী হবে তা রাশিয়াকে ভালো করেই বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।