একদিন পরেই যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন। শেষ মুহূর্তের প্রচারে ব্যস্ত ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেট ও বিরোধী রিপাবলিকান নেতারা।
প্রায় প্রতিটি জরিপেই দেখা যাচ্ছে-প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানদের পালে বইছে বিজয়ের হাওয়া। সেই ঘ্রাণ ছুটবে সিনেটেও।
অথচ এক মাস আগেও ধারণা করা হয়েছিল মধ্যবর্তী নির্বাচনে বড় ধরনের বিপর্যয় এড়াতে পারবে ডেমোক্র্যাটরা। কিন্তু হঠাৎ করেই বদলে গেল সমীকরণ। উলটে গেছে মার্কিন রাজনীতির গণেশ।
স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে, সুপ্রিমকোর্টের রায়ে গর্ভপাতের শাসনতান্ত্রিক অধিকার বাতিলের পর নারীদের মধ্যে দেশজুড়ে যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে তার প্রভাব পড়বে ব্যালটেও।
নতুন জরিপ বলছে, গর্ভপাত নয়, চার-পঞ্চমাংশ নাগরিক অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথা মাথায় রেখে ভোট দেবেন।
এছাড়া রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ, ক্রমবর্ধমান অপরাধের হার, গর্ভপাত আইন ও অভিবাসী সংকট কঠিন পরীক্ষায় ফেলবে বাইডেন প্রশাসনকে। কেননা, এসব প্রশ্নে ভোটারদের ডেমোক্র্যাট নয়, রিপাবলিকানদের প্রতিই অধিক আস্থা।
আগামী ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনেই যাচাই হবে বাইডেন সরকারের জনপ্রিয়তা। কয়েক মাসের আগেও ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটরাই ফেভারিট ছিল।
কিন্তু ভোটের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে পালটে যাচ্ছে সমীকরণ। সাম্প্রতিক একাধিক জরিপ বলছে, এ মুহূর্তে বিরোধী রিপাবলিকানদের দিকেই ঝুঁকছেন ভোটাররা।
পেছনে ফণা তুলে আছে দেশটির অস্থির অর্থনীতি। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশ, যা গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়া উচ্চকর ও জ্বালানির বাজারে অস্থিরতা চিন্তা বাড়িয়েছে নাগরিকদের। জরিপ বলছে, ৭৫ শতাংশ নাগরিকই খাদ্য এবং নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে উদ্বিগ্ন।
এক রাজ্যে ১২-২৫টি আসন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী রিপাবলিকানরা। এরকম হলে নিুকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভসে মাত্র ৮টি আসন এগিয়ে থাকা ডেমোক্র্যাটদের সহজেই পেছনে ফেলতে পারবে তারা।
কংগ্রেসের দুকক্ষই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহজেই যে কোনো আইন পাশ করে ফেলতে পারেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। মধ্যবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেসের যে কোনো একটি কক্ষে তার দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালে যে কোনো কিছুই আটকে দিতে পারবে বিরোধীরা।
আর দুকক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালে দেশ পরিচালনায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিরপেক্ষ ভোটাররা আবার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ওপর ভিত্তি করে ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। তাদের মতে বাইডেন ক্ষমতায় থাকাকালীন তাদের প্রভাবিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
একজন নিরপেক্ষ ভোটার ড্যামিয়েন আগুইলেরা বলেন, আমি ২০২০ সালে বাইডেনকে ভোট দিয়েছিলাম, কিন্তু তিনি এখন পর্যন্ত আমাকে প্রভাবিত করতে পারেননি। যখনই আমি ডেমোক্র্যাটদের ভোট দেওয়ার কথা চিন্তা করি, তখনই মনে হয় এটা রীতিমতো ব্যবসা। বরং আমি ট্রাম্পকে ভোট দেব, কারণ তার ভোট অন্তত কিছু হবে। যেহেতু বেশিরভাগ ডেমোক্রেটিক প্রার্থীরা আমাকে প্রভাবিত করে না, আমি শুধু ডেমোক্র্যাটদের থেকে বার্নিকে ভোট দেব, অন্যথায় আমি ট্রাম্পকে ভোট দেব।
অন্যদিকে ডেমোক্র্যাট ভোটাররা দলে নতুন নেতা খুঁজছেন। কেননা, এই মুহূর্তে গড় হিসাবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জনসমর্থন মাত্র ৪২ দশমিক ৮ শতাংশ। একজন ভোটার বাইডেনের পরিবর্তন দাবি করেই ক্ষান্ত হননি বরং নিজেদের পছন্দের নেতার নামও জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট হিসাবে পিট বুটিগিগকে চাই।
যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচনে বরাবরই ক্ষমতাসীন দল বড় সংখ্যায় আসন হারায়। ২০১০ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রথম মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটরা ৬৩টি আসন হারিয়েছিল। ২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় রিপাবলিকান দল হারিয়েছিল ৪৩টি আসন। ১৯৮২ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রতিনিধি পরিষদে ক্ষমতাসীন দল গড় হিসাবে ৪৬টি আসন হারায়।
যেহেতু বাইডেনের জনপ্রিয়তা কমে এসেছে সেক্ষেত্রে ইতিহাস বলে, প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটদের ৩০ থেকে ৪০টি আসন হারানোর কথা। আর এমন হলে সরাসরি প্রভাব পড়বে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধেও। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য মার্জোরি টেইলর গ্রিনি এক নির্বাচনি সমাবেশে বলেন, ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাট পার্টি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের চেয়ে ইউক্রেনকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। গ্রিনি বলেন, ‘প্রশাসন ইউক্রেনের সীমান্তকে গুরুত্ব দিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তকে নয়। অথচ আমাদের দেশেরই অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা ছিল।’ তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকান দল কংগ্রেসে বিজয়ী হলে ইউক্রেনকে যুদ্ধের খরচ মেটানোর জন্য একটি পয়সাও দেওয়া হবে না। এ নির্বাচনে রিপাবলিকানরা জিতলে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণভার ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হারিয়ে ফেলবেন। আর ইউক্রেনে সাহায্য দেওয়ার বিষয়টি কংগ্রেসের অনুমোদন সাপেক্ষ।