কাগজপত্রের জটিলতায় দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে ফ্রান্সের প্যারিসের বিমানবন্দরে বসবাস করছিলেন ইরানের করিমি নাসেরি। কূটনৈতিক জটিলতায় আটকে থাকা মেহরান করিমি নাসেরি শনিবার (১২ নভেম্বর) বয়সী শার্লস দ্য গল বিমানবন্দরে মারা যান। গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৮৮ সালে প্যারিসের এই বিমানবন্দরে বসবাস শুরু করেন নাসেরি। নিজেকে সার আলফ্রেড নামে পরিচয় দিতেন তিনি। তার আত্মজীবনীর উপর ২০০৪ সালে ‘দ্য টার্মিনাল’ সিনেমা বানান বিশ্ব বিখ্যাত চিত্র পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ। সিনেমাটিতে নাসেরির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন টম হ্যাঙ্কস।
বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, নাসেরিকে শেষ পর্যন্ত ফ্রান্সে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি কয়েক সপ্তাহ আগে বিমানবন্দরে ফিরে আসেন। সেখানেই স্বাভাবিক মৃত্যু হয় তার।
ইরানের খুজেস্তান প্রদেশে ১৯৪৫ সালে জন্ম হয় নাসেরির। ৭০ এর দশকে নিজের মায়ের খোঁজে ইউরোপে যান তিনি। পর্যায়ক্রমে তিনি বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস ও জার্মানিতেও অবস্থান করেন।
তবে অভিবাসনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় কোথাও আশ্রয় পাননি নাসেরি। নিজের জিনিসপত্রের ট্রলি দিয়ে ঘেরা বেঞ্চে নাসেরি তার জীবন সম্পর্কে লিখেন এবং বই ও সংবাদপত্র পড়ে দিন কাটাতে থাকেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বরাতে নাসেরির এই করুণ কাহিনী ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে।
১৯৯৯ সালে শরণার্থীর মর্যাদা পেলেও ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিমানবন্দরেই থাকেন নাসেরি। পরে অসুস্থতার জন্য তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর থেকে তাকে নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রটির জন্য যে অর্থ দেওয়া হয়েছিল, তা দিয়ে একটি হোস্টেলে থাকতেন তিনি।
কয়েক সপ্তাহ আগে আবারও বিমানবন্দরে ফিরে আসেন নাসেরি। যেখানে তার ১৮টি বছর কেটেছে, সেখানেই থাকতে শুরু করেন আবার। ওই বিমানবন্দরের টার্মিনালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নাসেরি।