ভারতের সাড়া জাগানো ফিকশন মুভি ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ অনুযায়ী, জুনুন (মৌনি রায়) তিন টুকরো হয়ে যাওয়া ব্রহ্মাস্ত্র খুঁজছেন। যা একত্রিত করতে পারলেই বিশ্ব তার হাতের মুঠোয় চলে আসবে। কাতার বিশ্বকাপে ফ্রান্সের আক্রমণভাগের ‘ত্রিফলা’ করিম বেনজেমা, কিলিয়ান এমবাপ্পে এবং উসমান ডেম্বেলে হতে পারেন মহাভারতের ওই ব্রহ্মাস্ত্রের মতো। যারা বর্তমান সময়ের সেরা ফরোয়ার্ড। ইউরোপের সেরা ক্লাবে খেলছেন। যাদের দক্ষতা-সামর্থ্য নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই।
শুধু ব্রহ্মাস্ত্রের মতো তাদের একত্রিত করতে পারলে, ট্যাকটিসে সমন্বত আনতে পারলে তারা প্রতিপক্ষের রক্ষণ দুর্গ ভেঙে তছনছ করে দিতে পারেন। টপ ফেবারিট হিসেবে কাতার বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ বিশ্বকাপ জয়ী ইতালি এবং ১৯৫৮ ও ১৯৬২ বিশ্বকাপ জয়ী ব্রাজিলের মতো টানা দু’বার বিশ্বকাপ জয়ের সুযোগ ফ্রান্সের সামনে। যে কীর্তি গত ৬০ বছরে কেউ গড়তে পারেনি।
ফ্রান্স দলের টানা দু’বার বিশ্ব জয়ের মতো দুর্দান্ত কিছু করার ভালো সুযোগ আছে। শুধু বেনজেমা-এমবাপ্পে-ডেম্বেলেই তো নয়! তাদের আক্রমণভাগে আছেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অ্যান্তোনিও গ্রিজম্যান। যাকে কোচ দেশম সর্বশেষ ম্যাচগুলোতে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে খেলিয়েছেন। আবার আরবি লাইপজিগের খেলা ফরোয়ার্ড ক্রিস্টোফার এনকুনকু শুরুর একাদশে থাকলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তিনি চলতি মৌসুমে ক্লাবের হয়ে ২৩ ম্যাচে ১৭ গোল করে অবাক করে দিয়েছেন।
বিশ্বকাপে ফেবারিট হয়ে বিশ্বকাপে আসা দলগুলোর আক্রমণভাগের সঙ্গে তুলনা করলে ফ্রান্সের ধারে কাছে নেই কেউ। ব্রাজিল দলের ফ্রন্ট থ্রি রাফিনহা, রিচার্লিসন কিংবা ভিনিসিয়াস জুনিয়র ভালো খেললেও বেনজেমা-এমবাপ্পের সমতুল্য নন। স্পেনের আক্রমণভাগ প্রতিভাবান কিন্তু প্রমাণিত নয়। লিওনেল মেসি প্লে মেকিংয়ে থাকলে আর্জেন্টিনা ফ্রন্ট থ্রি’র লওতারো মার্টিনেজে কেবল আস্থা রাখার মতো। জার্মানি, বেলজিয়াম কিংবা ইংল্যান্ডের ‘ত্রিফলা’র চেয়ে ফ্রান্সের ‘ব্রহ্মাস্ত্র’কে এগিয়ে রাখতেই হবে। লেস ব্লুজদের আক্রমণভাগ অনেকটা ব্রাজিলের ২০০২ কিংবা আর্জেন্টিনার ২০১৪ বিশ্বকাপের মতো। ফর্ম, তারকা খ্যাতির বিচারে যেখানে দাঁত বসানোর জায়গা নেই।
মিডফিল্ডে ফ্রান্স কিছুটা পিছিয়ে। পল পগবার অভাব হয়তো ভালোই অনুভব করবেন দিদিয়ের দেশম। যদিও অ্যাটাকিং মিডফিল্ডে গ্রিজম্যান খেললে ওই অভাব পূরণ হতে পারে। তবে এনগোলে কান্তের অভাব ১০০ মিলিয়ন ইউরোতে রিয়াল মাদ্রিদে এসে দারুণ পারফরম্যান্স করা অঁরেলিন সুয়ামেনি সেরাটা খেলতে পারলে পূরণ হয়ে যাবে। রিয়ালে খেলা এডওয়ার্ড কামাভিঙ্গা হয়তো তরুণ কিন্তু ম্যাচে গতি আনতে ও প্রাণ দিতে তার জুড়ি মেলা ভার।
ফ্রান্সের আক্রমণ ‘স্ফুলিঙ্গ’ হলে রক্ষণ জমাট, অটুট। যেখানে অভিজ্ঞতা আছে, তারুণ্য আছে। রাফায়েল ভারানে ইনজুরিতে। তবে ফিট হলে তার থেকে সেরাটা পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী ফ্রান্সের কোচিং স্টাফ। ভারানে না খেললেও যেন অসুবিধা নেই দলটির! বার্সেলোনায় খেলা জুলেন কুন্দে আছেন ভালো ছন্দে। আর্সেনালে খেলা তরুণ ডিফেন্ডার উইলিয়াম সালিবা এখন পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগের সেরা সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার। লিভারপুলের ইব্রাহিমা কোনাতে নিজ দুর্গের সামনে রীতিমতো ‘মনস্টার’। আছেন বায়ার্ন মিউনিখে খেলা লুকাস হার্নান্দেজ। রাইট ব্যাকে আছেন বেঞ্জামিন পাভার্ড। যিনি গত বিশ্বকাপে অসাধারণ খেলেছেন। এসি মিলানে খেলা থিও হার্নান্দেজকে বর্তমান সময়ের সেরা লেফট ব্যাক বলা হচ্ছে।
সালিবা-কুন্দে কিংবা কোনাতের সঙ্গে পাভার্ড-থিও’র রক্ষণকে তুলনা করা যায় মহাভারতের আরেক অস্ত্র ‘ব্রহ্মাশীর্ষ’-এর সঙ্গে। ব্রহ্মার চার মুখ থেকে নির্গত শক্তি মুহূর্তে যেকোন সৃষ্টিকে যেমন ধ্বংস করতে পারে ফ্রান্সের এই রক্ষণ নস্যাৎ করে দিতে পারে যেকোন বড় দলের সমস্ত আক্রমণ। বিশ্বকাপে ফিট থেকে তারায় ভরা ফ্রান্স দল সামর্থ্যের সেরাটা খেলতে পারলে তাদের হারানো যেকোন দলের জন্য হবে অসাধ্যসাধন! যে অসাধ্য হরহামেশা সাধন হয় বলেই এর নাম ‘ফিফা বিশ্বকাপ’।