ভবিষ্যৎ খাদ্যসংকট মোকাবিলায় সতর্ক সরকার, উৎপাদন বাড়াতে প্রতিনিয়ত তাগিদ যাচ্ছে কৃষি বিভাগে। আর কৃষি বিভাগের মাধ্যমে এই তথ্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে মাঠ প্রশাসনে। নড়েচড়ে বসেছে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারাও। ইতিমধ্যে উৎপাদন বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
আর উৎপাদন বাড়ানোর জন্য তাৎক্ষণিক সমাধানের পথ দেখা হচ্ছে অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনা। পাশাপাশি একফসলি জমিকে দুই বা তিন ফসলি জমিতে নিয়ে যাওয়া। এছাড়া কম সময়ে ফসল ঘরে তোলা যায় এমন নতুন জাত উদ্ভাবনের বিষয়টিও বিবেচনায় আনা হয়েছে। নতুন জাত উদ্ভাবনের উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা রক্ষা করলেও ভবিষ্যতে নানামুখী সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি মাটির উর্বরতা কমে যাওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে
বাংলাদেশ মৃত্তিকা সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, দেশের আবাদযোগ্য জমির ৭৫ ভাগ জমির উর্বরতা শক্তি আগের চেয়ে কমে গেছে। চাষযোগ্য প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেনের সংকট রয়েছে। ফসলি জমিতে যেখানে ৫ শতাংশ জৈব উপাদান থাকা দরকার সেখানে দেশের বেশির ভাগ কৃষি জমিতে জৈব উপাদান ২ শতাংশেরও নিচে নেমে এসেছে। এমন বাস্তবতায় উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করার তাগিদ কৃষিবিজ্ঞানীদের। কৃষি বিভাগের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে আবাদযোগ্য জমি রয়েছে ৮৮ লাখ ২৯ হাজার হেক্টর। আর ৪ লাখ ৩১ হাজার হেক্টর জমি এখনো অনাবাদি রয়েছে। সামান্য উদ্যোগ নিয়েই এসব জমি আবাদের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। অথচ যুগের পর যুগ এসব জমি অনাবাদি থাকছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেখানে বছরে মাত্র এক বার আবাদ হয়, এমন জমি রয়েছে ২১ লাখ ১০ হাজার হেক্টর। আর বছরে দুই বার আবাদ হয় এমন জমির পরিমাণ ৪১ লাখ ২৫ হাজার হেক্টর। আর তিন বার আবাদ হয় এমন জমি ১৮ লাখ ৬৬ হাজার হেক্টর। চার ফসলি জমি ১৭ হাজার হেক্টর।
সম্প্রতি চিনিকল, পাটকল, বস্ত্রকল ও রেলের চাষযোগ্য পতিত জমিতে আবাদের উদ্যোগের জন্য সংশ্লিষ্ট তিন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা কামনা করে আধাসরকারি পত্র (ডিও) দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
শিল্পমন্ত্রী, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এবং রেলপথ মন্ত্রীর ব্যক্তিগত উদ্যোগ কামনা করে কৃষিমন্ত্রী তার আধাসরকারি পত্রে বলেন, বৈশ্বিক প্রতিকূল অবস্থায় সম্ভাব্য খাদ্য সংকট মোকাবিলায় সরকারি মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অব্যবহৃত চাষযোগ্য জমিতে খাদ্যশস্য, শাকসবজি, ডাল ও তেলবীজ চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে।
সিলেট অঞ্চলের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কাজী মজিবুর রহমান বলেন, সিলেট অঞ্চলে তিন কারণে অনাবাদি থাকে। বোরো মৌসুমে বেশি জমি অনাবাদি থাকে। সিলেট বিভাগে এক মৌসুমে বেশি পানি থাকে, বন্যাও হয়। আবার যখন শুকিয়ে যায় তখন কোথাও পানি পাওয়া যায় না। ফলে আবাদও করা যায় না। এছাড়া সিলেট এলাকার যারা প্রবাসী তাদের বেশির ভাগ জমি অনাবাদি থাকে। জমি বেহাত হয়ে যাওয়ার কারণে তারা বর্গা চাষও দেন না। আর যারা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী তারা আমন ধান কাটার পর জমি চাষে আগ্রহ দেখায় না। আবার অনেক কৃষক আমন কাটার পর জমিতে গরু ছেড়ে দেয়। চাষ করতে চায় না। ফলে এভাবে অনেক জমি অনাবাদি থেকে যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ বেনজির আহমেদ বলেন, মূলত পাহাড়ি এলাকা ও লবণাক্ত এলাকার অনেক জমি বছরের পুরো সময় অনাবাদি থাকে । অনাবাদি জমি আবাদের আওতায় আনতে নানামুখী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রথমত আবাদ বিবেচনায় ১০টি এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। সেসব এলাকার কোন সময় কোন ফসল চাষ করা হবে তা নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। বছরের কোন সময় যাতে অনাবাদি না থাকে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে প্রণোদনা দেওয়া হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বরিশাল অঞ্চলের সম্প্রতি অবসরে যাওয়া অতিরিক্ত পরিচালক ও কৃষি বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদ হৃদয়েশ্বর দত্ত বলেন, এই অঞ্চলে আমন ধান ওঠার পর রবিশস্য আবাদের আর সুযোগ থাকে না। এ সময় এই জমি পতিত থাকে। স্বল্প সময়ে ফলন পাওয়া যায় এমন জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা যায় বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।