ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দাবি করেছেন, সামরিক অভিযানের শুরু থেকে রাশিয়া ইউক্রেনে ৪ হাজার ৭০০ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। রবিবার লা ফ্রাঙ্কোফোনির আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। এদিকে জাপোরিজ্জিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গোলা হামলার জন্য রাশিয়া এবং ইউক্রেন একে অপরকে দোষারোপ করেছে। তবে দোষ যারই হোক, আগুন নিয়ে না খেলার ব্যাপারে দু’পক্ষকেই সতর্ক করেছেন আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রবিবার লা ফ্রাঙ্কোফোনির আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, আজ পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধের ২৭০তম দিন। রাশিয়া ৪ হাজার সাতশোর বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে।
রুশ আগ্রাসন নিয়ে জেলেনস্কি আরও বলেন, আমাদের শত শত শহর পুড়েছে। হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। বহু মানুষকে জোর করে রাশিয়ায় নির্বাসিত করা হয়েছে। তাদের হামলা থেকে প্রাণে বাঁচতে লাখ লাখ লোক ইউক্রেন ছেড়ে অন্য দেশে পালিয়েছে। শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের শান্তি ফর্মুলা খুবই স্পষ্ট। প্রতিটি লাইন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তৈরি করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেনে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে কথিত সামরিক অভিযান শুরু করে মস্কো। ৯ মাসের মাথায় জাপোরিজ্জিয়া, কিয়েভ, ওডেসাসহ বিভিন্ন শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা আরও জোরদার করেছে রুশ বাহিনী।
এদিকে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউক্রেনের জাপোরিজ্জিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে গোলা হামলা হয়েছে। জাতিসংঘ এর নিন্দা জানিয়েছে এবং এ ধরনের হামলা বড় ধরনের পারমাণবিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে বলে সতর্ক করেছে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানায়, ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রেটিতে শনিবার সন্ধ্যায় এবং রবিবারে গোলা হামলা হয়। এই গোলা হামলার জন্য মস্কো এবং কিয়েভ একে অপরকে দোষারোপ করেছে। আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেন, গতকাল এবং আজ (রোববার) সকালে আমাদের টিমের কাছ থেকে যে খবর পেয়েছি তা খুবই উদ্বেগজনক। ইউরোপের অন্যতম প্রধান এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রস্থলে বিস্ফোরণ ঘটেছে। যেটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এর পেছনে যেই থাকুক না কেন, এটি অবিলম্বে বন্ধ হতে হবে। আমি আগেও যেমনটি বলেছি তেমনি আবার বলছি, আপনারা আগুন নিয়ে খেলছেন।
প্ল্যান্ট ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের তথ্য উদ্ধৃত করে মাঠ পর্যায়ে থাকা আইএইএ টিম বলেছে, সেখানে কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিছু সিস্টেম এবং যন্ত্রপাতিরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে পারমাণবিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার মতো গুরুতর কিছু এখনো হয়নি। ইউক্রেনে গত ফেব্রুয়ারিতে আগ্রাসন শুরুর পরই দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের এই জাপোরিজ্জিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র রুশ বাহিনী দখল করে নেয়। কেন্দ্রটিতে বার বার গোলা হামলা হওয়ার কারণে সেই ১৯৮৬ সালের চেরনোবিল পারমাণবিক দুর্ঘটনার মতো বড় ধরনের পারমাণবিক বিপর্যয় ঘটার মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে।