Home » ঢাকার গণপরিবহন: এবার বৃত্তাকার রেলপথ

ঢাকার গণপরিবহন: এবার বৃত্তাকার রেলপথ

প্রকাশিত: সর্বশেষ আপডেট 0 মন্তব্য 85 ভিউজ
ঢাকা মহানগরীকে কেন্দ্র করে চারপাশ ঘিরে তৈরি হবে বৃত্তাকার রেলপথ। তবে এই রেলপথ মাটির সমান্তরালে থাকছে না। বেশির ভাগই থাকবে উড়ালপথে, বাকিটা মাটির নিচে। রেলওয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৮ সালে এই রেলপথের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। এরই মধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ করেছে রেলওয়ে।প্রকল্পটি প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়ন করবে কোরিয়া। কোরিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানও সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখেছে। এখন জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হলেই মূল নির্মাণকাজের দিকে এগোতে পারবে রেলওয়ে। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৭২ হাজার কোটি টাকা।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্পের খরচ আরো বাড়তে পারে। আবার রেলওয়ের বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি মহানগরকেন্দ্রিক হওয়ায় এটি বাংলাদেশ রেলওয়ে নির্মাণ করবে, নাকি মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ নির্মাণের দায়িত্বে থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

বৃত্তাকার রেলপথ নিয়ে জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঢাকায় লাখ লাখ মানুষের যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হয়ে যাবে। তাদের যানজটে আটকে থাকতে হবে না। আর এই বৃত্তাকার ট্রেন একাধিক মেট্রো রেলের সঙ্গেও যুক্ত হবে। ফলে ঢাকার পুরো যোগাযোগব্যবস্থারই আমূল পরিবর্তন ঘটবে।’

বৃত্তাকার রেলপথ যুক্ত হবে বিআরটি-মেট্রো রেলে : বৃত্তাকার রেলপথে থাকবে ২৪টি স্টেশন। রেলপথের স্টেশনগুলো এমন জায়গায় তৈরি করা হবে, যেন ২০৩৫ সালে ১১টি স্টেশন বিশেষায়িত বাসপথ (বিআরটি) ও একাধিক মেট্রো রেলের সঙ্গে যুক্ত করা যায়।

এই বৃত্তাকার রেলপথটির প্রথম স্টেশন হবে টঙ্গী এলাকার ইজতেমা ময়দানকে কেন্দ্র করে। সেখান থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ঘুরে এসে আবারও ইজতেমা ময়দানে এসে শেষ হবে। দুই লেনের এই চক্রাকার পথে ২৪ ঘণ্টা ট্রেন চলতেই থাকবে। প্রথম দিকে যাত্রীদের সর্বোচ্চ চাপের সময় দুই দিকে ১৮ জোড়া ট্রেন চালানো হবে।প্রতি কিলোমিটার নির্মাণে খরচ ৮৮৭ কোটি টাকা : মূলত রাজধানীর যোগাযোগব্যবস্থাকে সহজ করতেই বৃত্তাকার রেলপথের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। ২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করেছে রেলওয়ে। প্রকল্প নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭১ হাজার ৭১৮ কোটি ৪৭ লাখ ৯৩ হাজার ৫৮০ টাকা। রেলপথের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী, সব ধরনের খরচ মিলিয়ে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হবে ৮৮৬ কোটি ৬০ লাখ ৯৩ হাজার ১৫৫ টাকা।উড়াল ও মাটির নিচে চলবে ট্রেন : বৃত্তাকার রেলপথের জন্য ঢাকা মহানগর এলাকার প্রান্তে স্থাপন করা হবে ৮০.৮৯ কিলোমিটার রেললাইন। এর মধ্যে উড়ালপথ (এলিভেটেড) হবে ৭০.৯৯ কিলোমিটার। আর মাটির নিচে পাতালপথ থাকবে ৯.৯ কিলোমিটার। বিদ্যুত্চালিত এই ট্রেনের জন্য উত্তরা, কামরাঙ্গীর চর ও ডেমরায় নির্মাণ করা হবে বিদ্যুতের সাবস্টেশন। এই পথে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে চলবে ট্রেন। দুই লাইনবিশিষ্ট এই রেলপথ হবে পাথরবিহীন।

এর মধ্যে কামরাঙ্গীর চর, সদরঘাট ও গাবতলীতে পাতাল স্টেশন নির্মাণ করা হবে। গড়ে প্রতি তিন মিনিট পর পর একেকটা স্টেশনে থামবে ট্রেন। প্রতি স্টেশনের গড় দূরুত্ব ৩.৩৭ কিলোমিটার।যাত্রী হবে কত : বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণের জন্য করা এক সমীক্ষায় বলা হচ্ছে, ২০৩৫ সালে বৃত্তাকার ট্রেনে প্রতিদিন ১০ লাখ ৬৫ হাজার ১৬ জন যাত্রী পরিবহন করা হবে। আর ২০৫৫ সালে যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ১৩০ জনে। সবচেয়ে বেশি যাত্রী চাপ থাকবে গাবতলী এলাকায়। এতে দেখা যায়, ২০৩৫ সালে গাবতলী এলাকায় প্রতিদিন এক লাখ ৪৬ হাজার ২১৫ জন যাত্রী ট্রেনে ওঠানামা করবে। তাই এই এলাকায় বৃত্তাকার ট্রেনের স্টেশনের সঙ্গে মেট্রো রেলের লাইন ২ ও ৫ এর স্টেশনকে যুক্ত করা হবে।এ ছাড়া টঙ্গী, ত্রিমুখ, পূর্বাচল, বেরাইদ, ত্রিমোহনী, ডেমরা, সিদ্ধিরগঞ্জ, চাষাঢ়া, মোহাম্মদপুর, ধউর ও সদরঘাট এলাকায় যাত্রীর চাপ তুলনামূলক বেশি থাকবে। তাই এসব এলাকায় রেলস্টেশনগুলোর সঙ্গেও অন্য বিশেষায়িত (এমআরটি, বিআরটি) গণপরিবহন ব্যবস্থার সঙ্গে দ্রুত যুক্ত করা হবে।

বিনিয়োগ করবে কোরিয়া : রেল ভবন সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে প্রকল্পটির জন্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে বিনিয়োগ খোঁজা শুরু হয়। পরে কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এতে মোট ৩৭ বছরের চুক্তির পরিকল্পনা করা হয়। যেখানে নির্মাণ সময় ধরা হয়েছে সাত বছর। আর ৩০ বছর পরিচালনার জন্য বরাদ্দ থাকছে।বৃত্তাকার রেলের ব্যয় : যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যদি ৭২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণের পুরো প্রকল্পটি শেষ হয়ে যায়, তাহলে এটা ভালো খবর। তবে আমার ধারণা, এই ব্যয় পরে কয়েক দফা বাড়তে পারে।’ তিনি বলেন, ৪০ থেকে ৫০ বছর আগে যেই শহরগুলোতে সমতলে বৃত্তাকার রেলপথ তৈরি হয়েছে, সেখানেও এর থেকে বেশি ব্যয় হয়। এখানে ব্যয় আরো বেশি হওয়ার কথা।জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন  বলেন, ‘ব্যয়ের হিসাব এখনো চূড়ান্ত নয়। ধারণা করা হচ্ছে, ব্যয়টা এমন হবে। মূলত কাজ না হওয়া পর্যন্ত সঠিক ব্যয় নির্ণয় করা যায় না। পরে ব্যয় বাড়তেও পারে। যদি যুক্তিসংগত কারণে ব্যয় বাড়ে, তাতে তো সমস্যা দেখছি না। ব্যয় বাড়ার কারণটা ঠিক আছে কি না, সেটা গুরুত্বপূর্ণ।’

আছে আইনি জটিলতাও : ঢাকার চারপাশে বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণে এক ধরনের আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে। কেননা শহরকেন্দ্রিক ট্রেনব্যবস্থাকে বলা হচ্ছে মেট্রো রেল। মেট্রো রেল বিধিমালা ২০১৬ অনুযায়ী, মেট্রো রেল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য আলাদা লাইসেন্স নিতে হবে।

আরও পড়ুন

মতামত দিন

আমাদের সম্পর্কে

We’re a media company. We promise to tell you what’s new in the parts of modern life that matter. Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo. Sed consequat, leo eget bibendum Aa, augue velit.