Home » পাইপলাইনে ৫০ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ

পাইপলাইনে ৫০ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ

0 মন্তব্য 118 ভিউজ

পাইপলাইনে থাকা বৈদেশিক ঋণ সহায়তার অর্থের পরিমাণ প্রায় ৫০ বিলিয়ন বা পাঁচ হাজার কোটি ডলারে। এই অর্থ দেশের বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের চেয়েও অনেক বেশি। বিভিন্ন প্রকল্প বা বাজেট সহায়তার আওতায় এই অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে উন্নয়ন সহযোগীদের। গত জুন মাস পর্যন্ত পাইপলাইনে থাকা অর্থের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের মতো।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুত অনেক অর্থ সময়মতো পাওয়া যাচ্ছে না। প্রকল্প বাস্তবায়ন না হলে অর্থছাড়ের সুযোগ নেই। সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন না হলে পাইপলাইনের অঙ্ক বেড়ে যায়।
বিভিন্ন প্রকল্প বা কর্মসূচিতে অর্থায়নের বিষয়ে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে আলোচনা করে থাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। আলোচনায় ঠিক হয় কীভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় বা কী ধরনের অর্থায়ন হবে। নীতিগতভাবে সম্মত হওয়ার পর উন্নয়ন সহযোগী কর্তৃপক্ষ অর্থায়নের বিষয়টি অনুমোদন করে। এর পর তাদের সঙ্গে ঋণ বা অনুদান চুক্তি সই করে ইআরডি। এটিই মূলত অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি। আর চুক্তির পর ছাড় না হওয়া মোট অর্থকে পাইপলাইনে থাকা অর্থ বলে বিবেচনা করা হয়।
চুক্তি অনুসারে উন্নয়ন সহযোগীদের অনেকেই দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়ন করে থাকে। সে জন্য পাইপলাইনে অর্থ থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে অনেক সময় প্রকল্প বাস্তবায়ন ঝুলে গেলে অর্থছাড়ও কমে যায়। আবার অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও অর্থছাড় করে না উন্নয়ন সহযোগীরা। এ ছাড়া উন্নয়ন সহযোগীদের নানা শর্তের কারণেও বাস্তবায়ন পিছিয়ে যায়। এভাবে পাইপলাইনে থাকা অর্থের পরিমাণ বেড়ে যায়।
ইআরডি সূত্রমতে, উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতির অব্যবহূত বা পাইপলাইনে থাকা অর্থের পরিমাণ এখন ৪ হাজার ৯৩৫ কোটি ডলার। অনেকের ধারণা, আগামী মাসগুলোতে এর পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। কারণ, গত কয়েক মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার কমেছে। নভেম্বর পর্যন্ত বাস্তবায়ন হার গত সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। প্রতিশ্রুত অর্থ ব্যবহার করতে না পারলেও এর বিপরীতে কমিটমেন্ট ফি বা সাভিস চার্জ ঠিকই পরিশোধ করতে হচ্ছে সরকারকে।
উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে পাইপলাইনে থাকা অর্থ সবচেয়ে বেশি বিশ্বব্যাংকের। এর পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ১ হাজার ১০০ কোটি ডলারের কিছু বেশি। চলতি অর্থবছরে সব মিলিয়ে ১ হাজার ২৩৮ কোটি ডলার ছাড় হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ডলারের সংকটকালে পাইপলাইনে থাকা অর্থ দ্রুত ছাড় হওয়া দরকার বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।  তিনি বলেন, উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ সহায়তা আনার দায়িত্ব অর্থ মন্ত্রণালয়ের। প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ। আর প্রকল্প ঠিকভাবে বাস্তবায়নে তাগাদা দেওয়া এবং তদারকি করার দায়িত্ব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের। সেটা আমরা করছি।
তিনি বলেন, অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীরা মানসম্পন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলে। অপচয় রোধ করে সাশ্রয়ী প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হয়েছে। বাস্তবায়নে অগ্রগতি হলেও সঙ্গে সঙ্গে ডলার দেশে আসবে না। নানা প্রক্রিয়া শেষে বিদেশিরা অর্থছাড় করে। এখন ডলার প্রয়োজন।
ড. জাহিদ হোসেন আরও বলেন, সময়মতো ও গুণগত মানে প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে তৎপরতা বাড়াতে হবে। বাজেট সহায়তার অর্থ পেতেও উদ্যোগ দরকার। বিশ্বব্যাংকে তাঁর দায়িত্বকালে মাত্র ১৪ দিনেও অর্থছাড় করা সম্ভব হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সময়মতো হচ্ছে না বাস্তবায়ন :অধিকাংশ প্রকল্পেরই বাস্তবায়ন যথাসময়ে হচ্ছে না। এমনকি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নে ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পেও একই অবস্থা। এত গুরুত্ব সত্ত্বেও মিয়ানমারের সঙ্গে রেল সংযোগ প্রকল্প দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটি গত এক যুগেও শেষ হয়নি। ২০১০ সালে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমডি) প্রতিবেদন বলছে, নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ৩৯ শতাংশ। এডিবির ঋণ সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে এডিবির ঋণ ১৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। বাকি ৪ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব। এ পর্যন্ত এডিবি ছাড় করেছে ৩ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা।
বারবার সংশোধন করে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর নজির হরহামেশাই মেলে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পের মেয়াদ না বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তিসংগত কারণে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে হলে সর্বোচ্চ তিনবার সংশোধন করা যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এত কিছুর পরও গত অর্থবছরে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হয়নি- এমন ৩০০ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া বলেন, সময়মতো অনেক প্রকল্প শেষ হচ্ছে। যদিও তা খুব কম। তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন সময়মতো শেষ না হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে।

আরও পড়ুন

মতামত দিন


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.

আমাদের সম্পর্কে

We’re a media company. We promise to tell you what’s new in the parts of modern life that matter. Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo. Sed consequat, leo eget bibendum Aa, augue velit.