বাংলাদেশের অপরূপ সৌন্দর্যের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ভারতের প্রমোদতরী গঙ্গা বিলাসের সুইজারল্যান্ড ও জার্মানির ২৮ জন পর্যটক। এ দেশের মানুষের আতিথেয়তায় মুগ্ধ তারা। নির্ভয়ে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে বাংলাদেশে নৌ ভ্রমণ এবং দর্শনীয় স্থানে যেতে পেরে নিরাপত্তা নিয়েও সন্তুষ্ট। তাদের এই ভ্রমণের খবরে আরও বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে আসতে উৎসাহিত হবে বলে প্রত্যাশা বিদেশি নাগরিকদের।
এই প্রমোদ ভ্রমণ আগামীতে নিয়মিত করার আশা ক্রুজ মালিকের। পৃথিবীর দীর্ঘতম এই নৌ বিহারে বাংলাদেশের নদী পথে চলতে কোনো সমস্যা হয়নি বলে জানিয়েছেন ট্যুর অপারেটররা। পর্যটকবাহী জাহাজের নিরাপত্তাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে জেলা প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ভারতের প্রমোদতরী ‘গঙ্গা বিলাস’ বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর মেরিনওয়ার্কশপ ঘাটে নোঙর করে বুধবার বিকেল পৌনে ৩টায়। এ সময় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড এবং বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তারা অতিথিদের স্বাগত জানান। বাংলাদেশে নৌ ভ্রমণ করায় পর্যটকদের ধন্যবাদ জানান তারা।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পর্যটকরা নগরীর অক্সফোর্ড মিশনে প্রায় ২০০ বছরের পুরনো চার্চ পরিদর্শন করেন। সুইজারল্যান্ডের ২৭ জন এবং জার্মানির একজন পর্যটক রয়েছেন এই ক্রুজে।
নগরীর দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনের সময় জার্মান নাগরিক গাটাস গুপ্তা বলেন, ‘ইটস এ গ্রেড ফিলিং টু হিয়ার। আই অ্যাম সারপ্রাইজড।’ বাংলাদেশ অপরূপ সৌন্দর্য তাদের বিমোহিত করেছে। যেখানেই যাচ্ছেন, সেখানেই তাদের স্বাগত জানানো হচ্ছে। বাংলাদেশিদের আতিথেয়তায় মুগ্ধ তারা। দেশে ফিরে তিনি অন্যদের বলবেন, ‘ইউ মাস্ট কাম বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ইজ সো নাইস।’
দীর্ঘ নৌ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সুইজারল্যান্ডের নাগরিক মার্টিনা বলেন, প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছি। আমার এই দেশটি খুবই পছন্দ হয়েছে। আমার প্রত্যাশার চেয়েও এই দেশটি সুন্দর। আগামী ১০ দিন এই দেশের সৌন্দর্য উপভোগ করবেন তারা। এই সফরে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা অনুভব করেননি। বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কোনো ইস্যুই না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কার্লফম্যান নামে এক পর্যটক বলেন, ‘আই অ্যাম সো হ্যাপি টু বি হিয়ার ইন বাংলাদেশ। আই অ্যাম সারপ্রাইজড-হাই দ্য ডেভেলপমেন্ট অব দ্যা কান্ট্রি ইজ। আই হ্যাভ বিন হিয়ার টোয়েন্টি ইয়ারস এগো। অ্যান্ড নাউ ইট হ্যাজ চেইঞ্জ এ লট। ইটস রিয়ালি সো ফ্যান্টাস্টিক ফর মি।’ এই দেশের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগে অন্য পর্যটকদেরও আহ্বান জানান তিনি।
ট্যুর অপারেটর কোম্পানি ‘জার্নি প্লাস’ এর প্রধান নির্বাহী তৌফিকুর রহমান জানান, ৫১ দিনব্যাপী ট্যুরে ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার পথ পারি দিয়ে ভারতের পাঁচটি প্রদেশ এবং বাংলাদেশের ২৭টি নদী অতিক্রম করছে ক্রুজটি। এটি পৃথিবীর দীর্ঘতম ট্যুর। এর মধ্যে বাংলাদেশের নৌপথ ১ হাজার ১০০ কিলোমিটার। জাহাজটি ১৪ দিন বাংলাদেশের জলসীমায় অবস্থান করবে। ১৭ মার্চ ফের ভারতের আসাম জলসীমায় প্রবেশ করবে ক্রুজটি। এই সময়ে বিভিন্ন স্থানে ৫১টি ট্যুরিস্ট স্পট পরিদর্শন করছে তারা। ১ মার্চ প্রমোদতরীটি আসামের ডিব্রুগড়ে পৌঁছে ৫১ দিনের সফর শেষ করবে। সেখান থেকে যে যার মতো করে গন্তব্যে ফিরবে।
পর্যটকদের সাথে রয়েছেন গঙ্গা বিলাসের স্বত্বাধিকারী ও ভারতের হেরিটেজ অব জার্নির চেয়ারম্যান রাজ সিং। তিনি বলেন, শুরুতে এই প্রমোদ ভ্রমণ সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে। আগামীতেও এই প্রমোদ ভ্রমণ নিয়মিত করার আশা তার। এবারের সফর সফল হওয়ায় আরও বেশি বিদেশী পর্যটক প্রমোদতরী ভ্রমণে আসবে বলে তার ধারণা।
বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) মো. আবদুর রাজ্জাক জানান, এই প্রমোদ ভ্রমণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের সুসম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদেশিদের ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হবে। প্রমোদতরীর ভ্রমণ নিরাপদ করতে বিআইডব্লিউটিএ সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের পর ক্রুজটি নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওয়ানা দেবে বলে তিনি জানান।
কুয়াকাটা রিজিয়ন ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ জানান, সব শৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে বিদেশি পর্যটকদের নৌ ভ্রমণসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনে সার্বিক নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে আরও বেশি বিদেশি পর্যটক আকৃষ্ট হবে।
এই প্রমোদ ভ্রমণ বাংলাদেশের জন্য গর্বের বলে মন্তব্য করেছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। বিদেশিদের মুখে বাংলাদেশের প্রশংসা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জল করবে। পর্যটকরা তাদের মতো ঘুরবে। প্রশাসন সার্বিক তত্ত্বাবধান করছে। আগত পর্যটকদের মাধ্যমে এই দেশেও আরও বেশি পর্যটক আসবে এবং এতে দেশের অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে বলে মনে করেন তিনি।
গত ১৩ জানুয়ারি ভারতের উত্তর প্রদেশের বারাণসীর রবিদাস ঘাট থেকে গঙ্গা বিলাসের প্রমোদ ভ্রমণ শুরু হয়।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, ‘গঙ্গা বিলাস’ প্রমোদতরী পাঁচতারা হোটেলের মতো সেবা দিতে সক্ষম। এতে ১৮টি লাক্সারি স্যুট রয়েছে। স্যুটে শাওয়ারসহ বাথরুম, রূপান্তরযোগ্য বিছানা, ফ্রেঞ্চ বেলকনি, এলইডি টিভি, স্মোক ডিটেক্টর, লাইভ ভেস্ট, স্প্রিঙ্কলার। আরও আছে বিশাল রেস্তোরাঁ, স্প্যা, সানডেক ও জিম। ক্রুজটিতে ৮০ জন যাত্রী ভ্রমণের ব্যবস্থা রয়েছে।