Home » বিশ্বমঞ্চে সাড়া জাগানো স্বর্ণার শৈশব

বিশ্বমঞ্চে সাড়া জাগানো স্বর্ণার শৈশব

0 মন্তব্য 64 ভিউজ

অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচে নির্ভরযোগ্য পারফরম্যান্সের মাধ্যমে নিজের অবস্থান নিশ্চিত করেছেন জামালপুরের মেয়ে সাজিয়া আক্তার স্বর্ণা। তিন ম্যাচে ব্যাট হাতে দারুন পারফরম্যান্স দেখিয়ে নিজের নামের পাশাপাশি দেশের নামও উজ্জ্বল করেছে এই ব্যাটার।

দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় স্বর্ণার ক্রিকেট জগতে প্রবেশটা ছিল বেশ কষ্টের। ক্রিকেট সরঞ্জাম কেনারও উপায় ছিল না তার পরিবারের। পরে জুয়েল নামের তার এক ক্রিকেটার মামার সহযোগিতায় ক্রিকেটের জগতে প্রবেশ করে স্বর্ণা। অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হিসেবে স্বর্ণা এখন বিশ্বমঞ্চে দেশের নাম উজ্জ্বল করে যাচ্ছেন। তাতে প্রশংসিত হচ্ছেন স্বর্ণার বাবা-মাসহ পুরো জামালপুরবাসী।

স্বর্ণার পরিবার সূত্রে জানা যায়, স্বর্ণার ক্রিকেট জীবনের শুরুটা ছিল লড়াইয়ের। জামালপুর পৌর শহরের কাচারীপাড়া এলাকার দরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। বাবা বাদল হোসেন ও মা সনেখা বেগমের চার সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ সন্তান সাজিয়া আক্তার স্বর্ণা। স্বর্ণার বাবা বাদল হোসেন পৌর শহরের দয়াময়ী মোড়ে একটি সেলুনে নরসুন্দরের কাজ করতেন। পরে তিনি জেলার মাদারগঞ্জ পৌর শহরে একটি দোকানে কাজ শুরু করেন এবং সেখানে দ্বিতীয় একটি বিয়ে করে সেখানে বসবাস শুরু করেন।

স্বামীর এমন কর্মে পরিবারের হাল ধরেন মা সখেনা বেগম। অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতেন স্বর্ণার মা। এক বেলা খেয়ে আরেক বেলা না খেয়ে চলত স্বর্ণাদের জীবন সংসার। বড় ভাই সজীব পরিবারে অভাব অনটনের কারণে পড়া লেখা করতে পারেনি। সংসারের হাল ধরতে তিনি  ফ্রিজ ও এসি মেরামতের কাজ শিখে সেটাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

স্বর্ণার বড় বোন সোহেনা বেগমও অভাবের কারণে পড়া লেখা করতে পারেনি। মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায় সোহেনার। স্বর্ণার আরেক ভাইও লেখাপড়া করতে পারেনি। কিছুদিন আগে স্বর্ণার মা ঝিঁয়ের কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি এখন বাসায় বসে হস্তশিল্পের কাজ করে সংসার চালান।

স্বর্ণা স্থানীয় সিংহজানী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়েন। ছোটবেলা থেকে ক্রিকেট পাগল স্বর্ণা কাঠের টুকরা দিয়ে ব্যাট বানিয়ে ক্রিকেট খেলতেন। পরিবারের কেউ ক্রিকেটার না হলেও ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের সঙ্গে মিশে ছিলেন তিনি। পড়ালেখাতেও বেশ মনোযোগী ছিলো সে।

বর্তমানে স্বর্ণার পারফরম্যান্সে শুধু পরিবারই নয়, প্রতিবেশীরাও গর্বিত। স্বর্ণা দেশের জন্য সুনাম কুঁড়িয়ে আনছে। সরকার যেন স্বর্ণার দরিদ্র পরিবারের দিকে সুনজর দেন, এমনটাই প্রত্যাশা করছেন তার স্বজনসহ এলাকাবাসী।

স্বর্ণার মা তার মেয়ের ক্রিকেট জীবন সম্পর্কে বলনে, ছোট থেকেই স্বর্ণার ক্রিকেটের প্রতি খুবই আগ্রহ ছিল। নারিকেলের ডাগিয়া (পাতা ছাড়া ডালের অংশ) দিয়ে ব্যাট বানিয়ে ক্রিকেট খেলতো সে। আবার কখনও ছোট কাঠের টুকরা দিয়ে ব্যাট বানিয়ে খেলত স্বর্ণা। ওর ভাই সজীবকে বল এনে দিতে বলতো। স্কুল ছুটির পরেই মাঠে নেমে পড়তো সে। বাড়ির সঙ্গে মাঠ হওয়ায় সারাদিন মাঠে খেলতো স্বর্ণা। এ নিয়ে পাড়া-প্রতিবেশীরাও নানা কথা শুনাতো। প্রতিবেশীদের কথার কারনে স্বর্ণার বড় বোন মাঝে মধ্যেই স্বর্ণাকে মারধর করতো। তবুও সে খেলা ছাড়েনি। অনেক কষ্ট করে সে ক্রিকেট খেলা শিখেছে।

তিনি আরও বলেন, স্বর্ণার খেলার প্রতি আগ্রহ দেখে এক দূর সম্পর্কের মামা খেলার বিষয়ে সহযোগিতা করতো। তার সহযোগিতায় স্বর্ণা বিভিন্ন বয়স ভিত্তিক খেলায় অংশগ্রহণ করতেন অনেক সময় বয়স ভিত্তিক খেলায় স্বর্ণার শারীরিক গঠন দেখে নিতে চাইতো না। তখন ওর মামা জুয়েলের অনুরোধে খেলার সুযোগ পেতো স্বর্ণা। এভাবেই ক্রিকেট খেলায় এগিয়ে যায় স্বর্ণা ।

স্বর্ণার ভাই সজীব তার বোনের ব্যাটে রান দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, আমি চাই আমার ছোট বোন স্বর্ণা সব সময়ই ভালো করুক এবং বাংলাদেশ দল চ্যাম্পিয়ন হোক। স্বর্ণাকে ঘিরে অনেক স্বপ্ন আমাদের পরিবারের। ভবিষ্যতে বোনকে জাতীয় দলে দেখতে মুখিয়ে আছেন পরিবারের সবাই।

নিজেদের স্বপ্নের কথা জানিয়ে সজীব বলেন, স্বর্ণা বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়েছে, এটা আমাদের পরিবারের চাওয়া ছিলো।

স্বর্ণার চাচা রফিক মিয়া জানান, অভাব-অনটনের সংসারে স্বর্ণারা কখনো ঠিকমতো খেতে পারেনি। যখন থেকে স্বর্ণা জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ভালো খেলতে শুরু করেছে,তারপর থেকে ওর আয়ের টাকা-পয়সা দিয়ে বাসা ভাড়া পরিশোধ করেছে তার পরিবার। স্বর্ণার চাচা, প্রতিবেশী ও স্বজনদের প্রত্যাশা,সরকার যেন দরিদ্র স্বর্ণার পরিবারের দিকে একটু সুদৃষ্টি দেন।

স্বর্ণার বাবা বাদল হোসেন বলেন, মেয়েকে কোন দিনও কোন খেলার জিনিস কিনে দিতে পারিনি। যা সামান্য উপার্জন করেছি তা দিয়ে কোন রকমে সংসার চালাতে হতো আমাদের। মেয়েকে ঘিরে তারও স্বপ্নটা অনেক বড় বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, স্বর্ণা একদিন দেশের সুনাম বয়ে আনবে এই প্রত্যাশা করছি।

আরও পড়ুন

মতামত দিন

আমাদের সম্পর্কে

We’re a media company. We promise to tell you what’s new in the parts of modern life that matter. Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo. Sed consequat, leo eget bibendum Aa, augue velit.