Home » নয় বছরে সোয়া ১০ কোটি টাকার সিমেন উৎপাদন

নয় বছরে সোয়া ১০ কোটি টাকার সিমেন উৎপাদন

0 মন্তব্য 26 ভিউজ

প্রতিষ্ঠার নয় বছরে ৩৩ লাখ ৭৩ হাজার ৫৯০ স্ট্র (নলজাতীয় জার) সিমেন উৎপাদন করেছে রাজশাহীর আঞ্চলিক কৃত্রিম প্রজনন গবেষণাগার। এর আর্থিক মূল্য ১০ কোটি ১২ লাখ ৭ হাজার ৭০০ টাকা। উৎপাদিত এ সিমেন হিমায়িত করে স্বল্পসময়ে রাজশাহী থেকে বিভাগের ছয় জেলায় পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এতে প্রান্তিক খামারিরা সময় ও খরচ সাশ্রয়ের পাশাপাশি মানসম্মত সিমেন পাচ্ছেন।

জানা গেছে, আগে সাভারের কৃত্রিম প্রজনন গবেষণাগার থেকে সিমেন সরবরাহ হতো রাজশাহী অঞ্চলে। ২০১৪ সালে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ীহাট এলাকায় গড়ে ওঠে আঞ্চলিক কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র। লক্ষ্য ছিল উত্তরাঞ্চলজুড়ে সহজে প্রান্তিক পর্যায়ে মানসম্মত সিমেন পৌঁছানো।

কিন্তু বর্তমানে আঞ্চলিক গবেষণাগার থেকে রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা এবং সিরাজগঞ্জ জেলায় হিমায়িত সিমেন সরবরাহ হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা সংকট না এলে এতদিনে পুরো উত্তরাঞ্চলে দেশের দ্বিতীয় এ কৃত্রিম প্রজনন গবেষণাগার থেকে সিমেন সরবরাহ সম্ভব হতো।

১০ একর আয়তনের খামারে রয়েছে অত্যাধুনিক হিমায়িত সিমেন ল্যাব। রয়েছে আলাদা ব্রিডিং বুল শেড, বুল কাফ শেড ও সিমেন কালেকশন শেড। সাড়ে তিন একর জায়গাজুড়ে ঘাস চাষও হচ্ছে এখানে। সরজমিন গবেষণাগারে ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন শেডে হৃষ্টপুষ্ট বিভিন্ন প্রজাতির ৪৪টি ষাঁড়। এর মধ্য সিমেন দিচ্ছে ৩৭টি। বাকি সাতটি ষাঁড় রয়েছে পরীক্ষা পর্যায়ে।

খোঁজ নিয়ে যানা যায়, গবেষণাগারে ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় রয়েছে ২৮টি। এর সবই শংকর। প্রতিটি ষাঁড় থেকেই সিমেন সংগ্রহ চলছে। শাহীওয়াল জাতের ১০টি ষাঁড় রয়েছে এখানে। এর মধ্যে একটি ষাঁড় শতভাগ বিশুদ্ধ। বাকি নয়টি শংকর জাতের। এগুলোর সবই সিমেন দিচ্ছে। আরো সাতটি শাহীওয়াল শংকর জাতের বুল কাফ রয়েছে। এগুলো রয়েছে পরীক্ষা পর্যায়ে।

সিমেন সংগ্রহ শুরুর আগে প্রতিটি ষাঁড়কে ধাপে ধাপে নিবিড় পর্যবেক্ষণে নিতে হয় বলে জানিয়েছেন আঞ্চলিক কৃত্রিম প্রজনন গবেষণাগারের উপপরিচালক ডা. মো. গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, ‘সাধারণত ১৩ মাস বয়সে ফ্রিজিয়ান শংকর এবং ১৮ মাস বয়সে শাহীওয়াল এঁড়ে বাছুর প্রজননের জন্য আলাদা করা হয়। দীর্ঘ পরিচর্যার পর ২২-২৪ মাস বয়স থেকে শুরু হয় পরীক্ষা।’

এ সময় প্রজনন ইচ্ছা, সিমেন বা বীর্যের পরিমাণ, গুণগত মান ও শুক্রাণুর পরিমাণ দেখা হয়। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ফ্রিজিয়ান শংকরের ৩০-৩৬ মাস এবং শাহীওয়াল জাতের গরুর ৩৬-৪০ মাস বয়স থেকে সিমেন সংগ্রহ শুরু হয়।

এদিকে আঞ্চলিক কৃত্রিম প্রজনন গবেষণাগারের পাশেই রাজশাহী দুগ্ধ ও গবাদি উন্নয়ন খামার। দেশের শাহীওয়াল গরুর জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণে কাজ করছে এ খামার। খামারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিন বছরে ২৯টি এঁড়ে বাছুর আঞ্চলিক কৃত্রিম প্রজনন গবেষণাগারে পাঠিয়েছে রাজশাহী দুগ্ধ ও গবাদি উন্নয়ন খামার।

সেখানকার উপপরিচালক ডা. আতিকুর রহমান বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তারা ১৩টি এঁড়ে বাছুর সরবরাহ করেছেন কৃত্রিম প্রজনন গবেষণাগারে। পরের দুই অর্থবছরে আরো আটটি করে এঁড়ে বাছুর সরবরাহ করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় উত্তীর্ণ ষাঁড় থেকেই কেবল সিমেন সংগ্রহ হয়।

তিনি বলেন, ‘শাহীওয়াল জাতের এঁড়ে বাছুরের বয়স ১৪-১৮ মাস হলেই সুস্থ ও সবলগুলো প্রজনন খামারে পাঠানো হয়। ২২ মাস বয়সে শুরু হয় পরীক্ষা। ২৪ মাস বয়স হলেই সিমেন নেয়া শুরু করা যায়। সক্ষমতা থাকলে টানা সাত বছর সিমেন দিতে পারে শাহীওয়াল ষাঁড়। একটি ষাঁড় তার জীবদ্দশায় ৫৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার ১ লাখ ৯২ হাজার স্ট্র সিমেন উৎপাদন করতে পারে।’

আঞ্চলিক কৃত্রিম প্রজনন গবেষণাগারের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠার প্রথম বছরেই ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৬ হাজার ৪৮ স্ট্র সিমেন উৎপাদন হয় এখানে। ৩০ টাকা হারে যার আর্থিক মূল্য ১ লাখ ৮১ হাজার ৪৪০ টাকা। দ্বিতীয় বছরে উৎপাদন পৌঁছায় ২ লাখ ৪৭ হাজার ৪৪২ স্ট্র-তে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৬৫ স্ট্র সিমেন উৎপাদন হয়। পরের বছর  ৪ লাখ ৪ হাজার ৩৪০ স্ট্র সিমেন উৎপাদন হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪ লাখ ৮৭ হাজার ১৭৫ স্ট্র, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৬ লাখ ৭ হাজার ৪৪০ স্ট্র সিমেন উৎপাদন হয় এখানে।

২০২০-২১ অর্থবছরে সিমেন উৎপাদন কমে গিয়ে দাঁড়ায় ৪ লাখ ৫ হাজার ৩২০ স্ট্র তে। ওই বছর খামারের আয়ও কমে দাঁড়ায় ১ কোটি ২১ লাখ ৫৯ হাজার ৬০০ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে কিছুটা বেড়ে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩২০ স্ট্র সিমেন উৎপাদন ছিল। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩ লাখ ৪২ হাজার ৪৪০ স্ট্র সিমেন উৎপাদিত হয়েছে। যার দাম ১ কোটি ২ লাখ ৭৩ হাজার ২০০ টাকা।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, আঞ্চলিক কৃত্রিম প্রজনন গবেষণাগারের উপপরিচালক ডা. মো. গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, ‘‌প্রতিষ্ঠার প্রায় নয় বছরে ৩৩ লাখ ৭৩ হাজার ৫৯০ স্ট্র সিমেন উৎপাদন হয়েছে রাজশাহীর আঞ্চলিক কৃত্রিম প্রজনন গবেষণাগারে। প্রতি স্ট্র ৩০ টাকা ধরে উৎপাদিত সিমেনের আর্থিক মূল্য ১০ কোটি ১২ লাখ ৭ হাজার ৭০০ টাকা। এটি খামারের পরোক্ষ আয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘গবেষণাগারের ষাঁড়গুলো উন্নত জাতের। এখানকার যন্ত্রাংশ অত্যাধুনিক। এছাড়া কর্মরত জনবলও দক্ষ। ফলে গবেষণাগারে উৎপাদিত সিমেন অন্যান্য বেসরকারী পর্যায়ে উৎপাদিত সিমেনের চেয়ে মানসম্মত। দীর্ঘদিন ধরেই নির্ধারিত কেন্দ্রে ৩০ টাকা প্রতি স্ট্র সিমেন পাচ্ছেন খামারিরা।’

যেখানে বেসরকারি পর্যায়ে উৎপাদিত সিমেনের মূল্য জাত ভেদে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা। আঞ্চলিক কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র সেই হিসেবে প্রান্তিক খামারিদের খরচ কমাচ্ছে। একই সঙ্গে দেশে গরুর ভালো জাত উদ্ভাবনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।

আরও পড়ুন

মতামত দিন

আমাদের সম্পর্কে

We’re a media company. We promise to tell you what’s new in the parts of modern life that matter. Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo. Sed consequat, leo eget bibendum Aa, augue velit.