শ্রীলঙ্কায় প্রথম লড়াই ১-১ গোলে ড্র হয়েছিল। তাই এই প্রতিপক্ষকে সহজভাবে নিচ্ছেন না বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা, ‘অবশ্যই আমাদের লক্ষ্য দুই ম্যাচই জেতা। তবে এটা কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে। খুব সহজে জেতা সম্ভব হবে না। সিশেলস দুর্বল বা অপেশাদার দল—সেটা ভেবে আমরা ফাঁদে পড়তে চাই না। তাদের কঠিন দল ভেবে আমরা সেরাটা দিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়ব এবং জয়ের জন্য খেলব।’
সিশেলস ফুটবলে অর্থ নেই। ক্লাব ফুটবল খেলে তাদের ফুটবলাররা কোনো টাকা পান না। নেই তাদের ফুটবল অবকাঠামো। প্রতিপক্ষের এই অ্যামেচার ফুটবলের গল্পগুলো যেন বেশ চাপে ফেলে দিচ্ছে জামাল-তপুদের। তাঁরা অনুভব করছেন, সিশেলসকে এবার না হারিয়ে রক্ষা নেই। প্রতিপক্ষের ‘সর্বহারা’ চরিত্রকে একপাশে সরিয়ে সুমন রেজা যেমন বলেছেন, ‘আমাদের কোচ একবারও বলেননি, সিশেলস দুর্বল দল। কিন্তু তাদের বিপক্ষে আমাদের জিততে হবে।’ জিততে হবেই। এই প্রতিজ্ঞা নিয়েই আজ পেশাদার বাংলাদেশ সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হচ্ছে অ্যামেচার সিশেলসের।
জয়ের জন্য গোল লাগবে। তাই প্রাক-ম্যাচ আলোচনার কেন্দ্রে স্ট্রাইকার এলিটা কিংসলে। তা ছাড়া গতকাল অনুশীলনে তারিক কাজী ও বিশ্বনাথকে বোকা বানিয়ে বাঁ পায়ে দূরের পোস্টে লক্ষ্যভেদের দৃশ্যটা দেখে সবাই মোহিত। বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়ার চোখেও তিনি আলাদা, ‘বক্স স্ট্রাইকার হিসেবে অন্যদের সঙ্গে এলিটার পার্থক্য আছে। সে শারীরিকভাবে শক্তিশালী। অনেক বছর বাংলাদেশে খেলছে। এলিটা থাকায় বাংলাদেশ দলের জন্য ভালো।’ কিন্তু কোচের ভালো-মন্দের বিচার আলাদা। কোচ হাভিয়ের কাবরেরা আবাহনীর এই স্ট্রাইকারকে একাদশে রাখছেন কি না, সেটা এলিটাও জানেন না, ‘আমি কিছু জানি না। আমি শুধু জানি সবারই সুযোগ আছে। প্রস্তুতি ক্যাম্পে সবাই ভালো করেছে। যদি আমি একাদশে না-ও থাকি, যারা থাকবে তাদের নিয়ে আমি খুশি থাকব।’
বাংলাদেশের চেয়ে র্যাংকিংয়ে সাত ধাপ নিচের দল সিশেলস। দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই জীবিকার তাগিদে অন্য পেশায় কাজ করেন। কাগজে-কলমে অ্যামেচার দল হলেও মাঠের লড়াইয়ে তারা হার না মানা মানসিকতার প্রতিফলন দেখায়। শারীরিকভাবে শক্তিশালী হওয়ায় ৯০ মিনিট ধরেই লড়াই চালিয়ে যেতে পারে ফুটবলাররা, যা ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কায় দেখা গেছে। সেই প্রথম লড়াই ১-১ গোলে ড্র হয়েছিল। তাই এই প্রতিপক্ষকে সহজভাবে নিচ্ছেন না বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা, ‘অবশ্যই আমাদের লক্ষ্য দুই ম্যাচই জেতা। তবে এটা কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে। খুব সহজে জেতা সম্ভব হবে না। সিশেলস দুর্বল বা অপেশাদার দল—সেটা ভেবে আমরা ফাঁদে পড়তে চাই না। তাদের কঠিন দল ভেবে আমরা সেরাটা দিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়ব এবং জয়ের জন্য খেলব।’ এই স্প্যানিয়ার্ডের কাছে জয়টাই এখন মুখ্য বিষয়। কারণ তাঁর অধীনে আট ম্যাচে জয় মাত্র একটি। গত বছরের তুলনায় এবার জয়ের ধারাবাহিকতা চান এই স্প্যানিয়ার্ড, ‘এ বছর আমরা আরো ধারাবাহিক হতে চাই। যেটা গত বছর ছিল না, এটাই আমাদের বড় ভুল ছিল। সৌদিতে আমরা যেভাবে অনুশীলন করেছি, এখানে তার প্রতিফলন ঘটাতে চাই।’
বাংলাদেশ যখন কোমর বেঁধে নেমেছে, তখন মাত্র দেড় মাসে ছয়টি সেশনের প্রস্তুতি নিয়ে এখানে এসেছে সিশেলস। পেশাদারিতে ঘাটতি থাকলেও মাঠের খেলাতেই বেশি মনোযোগ পূর্ব আফ্রিকার দেশটির। ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কায় হওয়া চার জাতি টুর্নামেন্টের দল থেকে আটটি পরিবর্তন এনে দল সাজিয়েছেন কোচ নেভিল বোথ। ইংলিশ ক্লাব চেলসি, নটিংহাম ফরেস্ট, কুইনস পার্ক রেঞ্জার্সে খেলে আসা ডিফেন্ডার মাইকেল মানসিয়েন তাদের আশা-ভরসার নাম। আর ইংলিশ ফুটবলের নিচের দিকের লিগে খেলা আরেক ডিফেন্ডার ড্যারিয়েল লুইস বাংলাদেশের আক্রমণভাগের জন্য কঠিন বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন। কয়েকজন তরুণ ফুটবলারের অন্তর্ভুক্তিও আশাজাগানিয়া। তাই সিশেলস অধিনায়ক স্টেনিও মারির প্রত্যয়ী ঘোষণা, ‘আমাদের প্রস্তুতি ভালো। আমরা দুই ম্যাচ জিততেই এখানে এসেছি।’ অ্যামেচাররাও চোখ রাঙাচ্ছে পেশাদার দলকে! তবে ফুটবলের পেশাদারি পতাকা উড্ডীন রাখতে জিততেই হবে লাল-সবুজের দলকে।