রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। তাতে চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস জুলাই–মার্চে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৫ শতাংশ কমেছে। ইইউতেও আশানুরূপ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। গত অর্থবছর শেষে এই বাজারে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৪ শতাংশ। চলতি বছর এখন পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১২ শতাংশ।
এই দুই বড় বা প্রচলিত বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি যখন কিছুটা নড়বড়ে, তখন আশা দেখাচ্ছে নতুন বা অপ্রচলিত বাজার। বর্তমান অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে নতুন বাজারে ৬৪৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা বাংলাদেশের প্রায় ৬৭ হাজার ৬২০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১০৫ টাকা ধরে)। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে ৩ হাজার ৫২৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি। গত বছর একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৩ হাজার ১৪৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির ১৮ দশমিক ২৮ শতাংশের গন্তব্য ছিল নতুন বাজার। গত বছরও যা ছিল ১৫ দশমিক ২২ শতাংশ।
আলোচ্য সময়ে নতুন বাজারের মধ্যে পূর্ব এশিয়ার দেশ জাপানে সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। দেশটিতে ১২২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪১ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেশি।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। দেশটিতে গত ৯ মাসে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৪২ শতাংশ। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ৮৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ভারতে। এ ক্ষেত্রে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার ৫৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
বর্তমান অর্থবছরের জুলাই–মার্চ ৯ মাসে অন্যান্য নতুন বাজারের মধ্যে রাশিয়ায় ৩০ কোটি, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪৫ কোটি, চীনে ২৩ কোটি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) ২৩ কোটি, মেক্সিকোয় ২৬ কোটি, মালয়েশিয়ায় ২৪ কোটি, সৌদি আরবে ১৬ কোটি, তুরস্কে ২০ কোটি, দক্ষিণ আফ্রিকায় ১০ কোটি, নিউজিল্যান্ডে ১০ কোটি, চিলিতে ১২ কোটি ও ব্রাজিলে ১৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার ভোক্তাদের প্রকৃত আয় কমে গেছে। অন্য দেশগুলোতে যুদ্ধের প্রভাব অতটা তীব্র না। সে কারণে নতুন বাজারে তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই আমরা নতুন বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য নানাভাবে চেষ্টা করছি। সরকারও নতুন বাজারে পোশাক রপ্তানিতে ৪ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। এসব উদ্যোগের ইতিবাচক প্রভাবও রয়েছে।’