সাবিনারা যেতে না পারলেও রুমা-জয়নবরা ঠিকই গিয়েছে সিঙ্গাপুরে। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্ব খেলতে সোমবার সিঙ্গাপুরে পৌঁছায় বাংলাদেশের মেয়েরা। নারী ফুটবলে প্রথম ধাক্কাটা আসে গত মার্চে সিঙ্গাপুর সফর বাতিলে। ফিফা উইন্ডোতে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলার ঘোষণাটি গত ৫ ফেব্রুয়ারি কমলাপুর স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলন করেই ঘোষণা দিয়েছিলেন বাফুফে নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ। দু’দিন পরই ‘অনিবার্য’ কারণবশত সফর বাতিলের বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছিল ফুটবল ফেডারেশন।
বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, নিজেদের খরচে সেই সফর করতে হবে বলে তা বাতিল করে দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এরপরই বেরিয়ে আসে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে ইতিহাস গড়া সাবিনা খাতুনদের নিয়ে বাফুফের উদাসীনতার খবর। আর্থিক সংকটের কথা বলে ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিক বাছাইপর্ব খেলতে মিয়ানমারে পাঠায়নি বাংলাদেশ নারী জাতীয় দলকে।
এ নিয়ে ফুটবল অঙ্গনে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। ঠিক এমন সময়ই এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইয়ের প্রথম রাউন্ড খেলতে গোলাম রব্বানী ছোটনের দলকে সিঙ্গাপুর পাঠিয়েছে বাফুফে। আর বয়সভিত্তিক এই দল পাঠানো নিয়ে কোনো আর্থিক সংকটের কথা বলেনি ফেডারেশন। কারণ এই সফরের খরচ বেশিরভাগই বহন করছে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি)। শুধু সিঙ্গাপুর যাওয়া-আসার বিমান ভাড়া বহন করছে বাফুফে। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ বাছাইপর্বের জন্য গ্রুপ ‘ডি’তে স্বাগতিক সিঙ্গাপুর ছাড়া বাংলাদেশের আরেক প্রতিপক্ষ তুর্কমেনিস্তান। আগামীকাল তুর্কমেনিস্তান এবং ৩০ এপ্রিল সিঙ্গাপুরের মুখোমুখি হবে রুমা-জয়নবরা।
সাফ এবং এএফসির টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ নারী দলের অংশগ্রহণ নিয়মিতই। এসব প্রতিযোগিতায় নিয়মানুযায়ী দলগুলোর খরচ বহন করে দুটি সংস্থায়ই। তাই তো মেয়েদের মিয়ানমার সফর বাতিল বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বড় গলায় বলেছিলেন, ‘টাকা ম্যানেজ করতে পেরেছি বলেই তো সিঙ্গাপুরে দল পাঠাচ্ছি। টাকা নেই বলে মিয়ানমারে পাঠাতে পারছি না।’
কিন্তু সেদিন তিনি খোলাসা করেননি নিয়মানুযায়ী এএফসির টুর্নামেন্টের বেশিরভাগ খরচই বহন করে এশিয়ান ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। কিন্তু ফুটবল সংশ্লিষ্টরা জানেন যে শুধু থাকা-খাওয়ার সুবিধাই নয়, এএফসির টুর্নামেন্টে দলগুলোকে পার্টিসিপেশন্স মানিও দেয় সংস্থাটি। সিঙ্গাপুরে বয়সভিত্তিক এ প্রতিযোগিতায় তার ব্যত্যয় ঘটেনি। সাধারণভাবে নিজেদের প্রতিযোগিতাগুলোতে আয়োজকদের বেশ বড় অঙ্কের অর্থ দিয়ে থাকে এএফসি। তাদের দেওয়া অর্থ দিয়েই স্বাগতিক দেশগুলো অতিথি দলগুলোর থাকা-খাওয়াসহ যাবতীয় খরচ বহন করে।
বাছাইপর্বে থাকা বাংলাদেশ ও তুর্কমেনিস্তানের সব খরচ এএফসির টাকা থেকে ব্যয় করবে স্বাগতিক সিঙ্গাপুর। এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে শুধু বহন করতে হচ্ছে বিমানের টিকিট বাবদ খরচ। সেটাও বাফুফের নিজস্ব ফান্ড থেকে নয়, পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ঢাকা ব্যাংক বিমানের খরচসহ আরও আনুষঙ্গিক খরচ দিয়েছে। অথচ সাবিনাদের মিয়ানমার সফরের জন্য ঢাকা ব্যাংকের কাছে কোনো প্রস্তাবই দেয়নি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে প্রশ্নবিদ্ধ বাজেট দিয়ে ফেডারেশন কর্তারা হয়েছেন সমালোচিত। দরপত্রে অনিয়ম, ফিফা ফান্ডের অপব্যবহার, নারী জাতীয় দলের পেছনে খরচ নিয়ে নয়ছয় করাসহ নানা অভিযোগে সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এরপরই একে একে বেরিয়ে আসে দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার নানা অনিয়মের তথ্য।
পূর্ববর্তী পোস্ট