দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানি হুন্দাই। বিশ্বখ্যাত অটোমোবাইল নির্মাতা এ প্রতিষ্ঠানের ‘ক্রেটা’ মডেলের এসইউভি গাড়ি বাংলাদেশের বাজারে এসেছে চলতি বছরের জানুয়ারিতে। এ গাড়ি সংযোজন হয়েছে হুন্দাইয়ের যৌথ বিনিয়োগে এ দেশে গড়ে ওঠা কারখানায়। কয়েক বছর হলো স্যামসাং ও এলজির মতো কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদন শুরু করেছে। ইলেকট্রনিকস, অটোমোবাইল, মেশিনারি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের পাশাপাশি অর্থনৈতিক অংশীদারত্বের নতুন ক্ষেত্র হিসেবে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাত নিয়েও আগ্রহ বাড়াচ্ছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশটি। কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থনৈতিক সম্পর্কের পাশাপাশি ভৌগোলিক অবস্থান ও ভূরাজনীতি বাংলাদেশের প্রতি দক্ষিণ কোরিয়াকে আকৃষ্ট করছে। তাই অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা বা কৌশলগত ও সাংস্কৃতিক—সবদিকেই সম্পর্ক আরো নিবিড় করার পথে দেশটি। এ সম্পর্কের শুরু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঠিক পরেই, গত পাঁচ দশকে যা ক্রমেই বেড়েছে। অতিসম্প্রতি উন্নয়ন প্রকল্পেও বড় আকারের ঋণ চুক্তি হয়েছে দুই দেশের মধ্যে।
বাংলাদেশকে ১৯৭২ সালের ১২ মে স্বীকৃতি দেয় দক্ষিণ কোরিয়া। এর ছয় বছরের মধ্যেই এ দেশের শ্রম দক্ষতা উন্নয়নে সম্পৃক্ত হয় তারা। কোরীয় দাইয়ু কোম্পানির প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের হাত দিয়েই ১৯৭৮ সালে যাত্রা করে দেশের প্রথম রফতানিমুখী পোশাক শিল্প। কালক্রমে যাত্রা করে বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী অন্যতম প্রথম বিদেশী কোম্পানি ইয়াংওয়ানও। সেটিও কোরীয় প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার দেশটিও দক্ষিণ কোরিয়া। অতিসম্প্রতি ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচিরও ঘোষণা এসেছে। সব মিলিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব আরো নিবিড় হচ্ছে।
এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ থেকে ২০২১ সাল—এ তিন দশকের মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি গতি পেয়েছে। এ সময়ের মধ্যে দেশটি ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন ফান্ডের (ইডিসিএফ) আওতায় ১ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাংলাদেশে দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগ রয়েছে এমন খাতগুলোর মধ্যে আছে বস্ত্র ও পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ব্যাংকিং, সিমেন্ট, নির্মাণ, বিদ্যুৎ, খাদ্য, মেটাল ও মেশিনারি পণ্য এবং রাসায়নিক খাত।
পণ্য আমদানি ও রফতানির মাধ্যমে কোরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক অনেকদিনের। পর্যায়ক্রমে বেড়েছে বিনিয়োগপ্রবাহ। সাম্প্রতিক সময়ে ইলেকট্রনিকস, অটোমোবাইল ও অবকাঠামো খাতে এ দেশকে ঘিরে আগ্রহ বাড়ছে কোরীয়দের। কয়েক বছর হলো স্যামসাং ও এলজির মতো প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদন শুরু করেছে। চলতি বছর অটোমোবাইল সংযোজন শুরু করেছে হুন্দাই। বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণে সম্পৃক্ত হওয়ার পরিকল্পনা নিয়েও এগোচ্ছে কোরীয় প্রতিষ্ঠানটি। অর্থনৈতিক অংশীদারত্বের অংশ হিসেবে ব্যাপ্তি বাড়াতে চায় বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতেও।
দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ইফতিখারুল করিম এ বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্কের ধারাবাহিকতা স্বাধীনতার পর পরই শুরু হয়। পোশাক খাতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে অংশীদারত্বের শুরু। ওই সম্পর্কের পরিণতিই হলো বর্তমান সম্পর্ক। বর্তমানে দেশটির কোম্পানি ইয়াংওয়ান বাংলাদেশের অন্যতম বড় রফতানিকারক। গত দুই দশকে সে সম্পর্ক সবদিক থেকে অনেকটাই সম্প্রসারণ হয়েছে। বর্তমানে অটোমোবাইল খাতেও যুক্ত হয়েছে কোরীয় কোম্পানি। বাংলাদেশের অভিবাসী শ্রমিকদেরও অন্যতম বড় গন্তব্য হয়ে উঠেছে দক্ষিণ কোরিয়া। এ দেশের প্রতিরক্ষা খাতেও দেশটির অবদান রয়েছে। আগামী দিনগুলোয় সব খাতেই এ সম্পর্ক আরো দৃশ্যমান হবে বলে মনে করছি।’
সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক আরো গভীর হওয়ার আভাস মিলছে। কয়েক বছরে এ দেশে অবকাঠামো খাতের ৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে কোরীয় প্রতিষ্ঠান। আলোচনা চলছে আরো প্রকল্প নিয়ে। কোরীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উন্নত প্রযুক্তির অভিজ্ঞতাও বাংলাদেশে কাজে লাগানোর বিষয়ে উৎসাহী।
বাংলাদেশে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ইপিজেডের যাত্রা শুরু হয় আশির দশকে। সেই সময় থেকে বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) আওতায় তিন শতাধিক কোম্পানি ইপিজেডে বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে ৭৩টি কোম্পানিই দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক। এ কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে কর্মসংস্থান হচ্ছে ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষের। কোরিয়া ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ফরেন পলিসির তথ্য অনুযায়ী দেশটিতে বাংলাদেশী অভিবাসী রয়েছেন ১৬ হাজারেরও বেশি।
কোরিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (কেবিসিসিআই বলেন, ‘দুই দেশের অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব আগের চেয়ে এখন অনেক ইতিবাচক। পোশাক খাত এ দেশে পরিচিত হয় দক্ষিণ কোরিয়ার মাধ্যমে। ঋণ, অনুদান ও বিনিয়োগ মিলিয়ে দেড় বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থায়ন রয়েছে। প্রতি বছরই তা বাড়ছে। সম্প্রতি গাড়ি সংযোজনের কাজও শুরু হয়েছে। নিকটভবিষ্যতে বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণে দক্ষিণ কোরিয়া বড় অংশীদার হবে, এমন সম্ভাবনা বাস্তবায়নের কার্যক্রম চলছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো নিবিড় করতে দেশটি যে সফল হবে এটা নিশ্চিত। কারণ এ দেশের শ্রম খাতের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়া অনেক আগে থেকেই জড়িত।’
কেবিসিসিআই সূত্র জানায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত ২৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। কোরীয় বাণিজ্য বিনিয়োগ প্রচারণা সংস্থ কেওটিআরএ বা কটরার তথ্য অনুযায়ী, উল্লেখযোগ্য প্রকল্পের মধ্যে সাসেক রোড কানেক্টিভিটি সুপারভিশনে যুক্ত কোরীয় প্রতিষ্ঠান কুহ্নয়া ইঞ্জিনিয়ারিং, সিলেট এয়ারপোর্ট স্টেনদেনিং প্রকল্পে হাল্লা করপোরেশন, ঢাকা ওয়াটার পিউরিফিকেশন প্লান্টে হুন্দাই রোটেম, পদ্মা সেতু সুপারভিশনে কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন। এছাড়া আখাউড়া-লাকসাম রেলওয়ে সুপারভিশনে যুক্ত কোরীয় প্রতিষ্ঠানটি হলো দোহওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং, হযরত শাহজালাল এয়ারপোর্ট এক্সপানশন প্রকল্পে আছে স্যামসাং সিঅ্যান্ডটি, ভান্ডালজুরি ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্পে আছে তায়েইয়াং ইঅ্যান্ডসি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল প্রকল্পের কাজ করেছে কোরিয়ার হুন্দাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। পটুয়াখালী-গোপালগঞ্জ পাওয়ার লাইন প্রকল্পের কাজ করছে জিএস ইঅ্যান্ডসি। মেঘনাঘাট পাওয়ার প্লান্ট প্রকল্পে আছে স্যামসাং সিঅ্যান্ডটি। কক্সবাজার এয়ারপোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের দায়িত্বে আছে হাল্লা করপোরেশন। মাতারবাড়ী কোল পাওয়ার প্লান্টে আছে পসকো ইঅ্যান্ডসি। বাঁকখালী রিভার ব্রিজ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে হাল্লা করপোরেশন। মাতারবাড়ী পাওয়ার প্লান্ট পোর্ট ওয়ার্কস প্রকল্পের সঙ্গে আছে হুন্দাই ইঅ্যান্ডসি।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, ‘বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব বাড়ছে। বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতিগুলো এ দেশের পরিবর্তনটা স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছে। গত বছর আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে স্ট্র্যাটেজিক ডায়ালগ শুরু করেছি, কেন? প্রত্যেকেই চাচ্ছে বাংলাদেশের নতুন মাত্রার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক থাকতে। কোরিয়াও দেখছে যে বাংলাদেশের সঙ্গে বহু দেশ তাদের কর্মকাণ্ডের সক্রিয়তা বাড়াচ্ছে যেমন জাপান, চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। সে প্রেক্ষাপটে তারাও সক্রিয়। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে।’
কোরিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (কেবিসিসিআই) সভাপতি শাহাব উদ্দিন খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দুই দেশের অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব আগের চেয়ে এখন অনেক ইতিবাচক। পোশাক খাত এ দেশে পরিচিত হয় দক্ষিণ কোরিয়ার মাধ্যমে। ঋণ, অনুদান ও বিনিয়োগ মিলিয়ে দেড় বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থায়ন রয়েছে। প্রতি বছরই তা বাড়ছে। সম্প্রতি গাড়ি সংযোজনের কাজও শুরু হয়েছে। নিকটভবিষ্যতে বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণে দক্ষিণ কোরিয়া বড় অংশীদার হবে, এমন সম্ভাবনা বাস্তবায়নের কার্যক্রম চলছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো নিবিড় করতে দেশটি যে সফল হবে এটা নিশ্চিত। কারণ এ দেশের শ্রম খাতের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়া অনেক আগে থেকেই জড়িত।’
কেবিসিসিআই সূত্র জানায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত ২৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। কোরীয় বাণিজ্য বিনিয়োগ প্রচারণা সংস্থ কেওটিআরএ বা কটরার তথ্য অনুযায়ী, উল্লেখযোগ্য প্রকল্পের মধ্যে সাসেক রোড কানেক্টিভিটি সুপারভিশনে যুক্ত কোরীয় প্রতিষ্ঠান কুহ্নয়া ইঞ্জিনিয়ারিং, সিলেট এয়ারপোর্ট স্টেনদেনিং প্রকল্পে হাল্লা করপোরেশন, ঢাকা ওয়াটার পিউরিফিকেশন প্লান্টে হুন্দাই রোটেম, পদ্মা সেতু সুপারভিশনে কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন। এছাড়া আখাউড়া-লাকসাম রেলওয়ে সুপারভিশনে যুক্ত কোরীয় প্রতিষ্ঠানটি হলো দোহওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং, হযরত শাহজালাল এয়ারপোর্ট এক্সপানশন প্রকল্পে আছে স্যামসাং সিঅ্যান্ডটি, ভান্ডালজুরি ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্পে আছে তায়েইয়াং ইঅ্যান্ডসি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল প্রকল্পের কাজ করেছে কোরিয়ার হুন্দাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। পটুয়াখালী-গোপালগঞ্জ পাওয়ার লাইন প্রকল্পের কাজ করছে জিএস ইঅ্যান্ডসি। মেঘনাঘাট পাওয়ার প্লান্ট প্রকল্পে আছে স্যামসাং সিঅ্যান্ডটি। কক্সবাজার এয়ারপোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের দায়িত্বে আছে হাল্লা করপোরেশন। মাতারবাড়ী কোল পাওয়ার প্লান্টে আছে পসকো ইঅ্যান্ডসি। বাঁকখালী রিভার ব্রিজ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে হাল্লা করপোরেশন। মাতারবাড়ী পাওয়ার প্লান্ট পোর্ট ওয়ার্কস প্রকল্পের সঙ্গে আছে হুন্দাই ইঅ্যান্ডসি।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. লাইলুফার ইয়াসমিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব বাড়ছে। বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতিগুলো এ দেশের পরিবর্তনটা স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছে। গত বছর আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে স্ট্র্যাটেজিক ডায়ালগ শুরু করেছি, কেন? প্রত্যেকেই চাচ্ছে বাংলাদেশের নতুন মাত্রার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক থাকতে। কোরিয়াও দেখছে যে বাংলাদেশের সঙ্গে বহু দেশ তাদের কর্মকাণ্ডের সক্রিয়তা বাড়াচ্ছে যেমন জাপান, চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। সে প্রেক্ষাপটে তারাও সক্রিয়। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য হয় ২০২ কোটি ডলারের কিছু বেশি। দেশটির পুঞ্জীভূত প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই স্টক) ১৪৫ কোটি ডলারের বেশি। স্টক বিবেচনায় কোরিয়া বাংলাদেশের চতুর্থ শীর্ষ বিনিয়োগকারী দেশ। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত দেশটির প্রতিশ্রুত ঋণ ও অনুদানের পরিমাণ ছিল ১৫৩ কোটি ডলার। ছাড় হয়েছে এমন ঋণ ও অনুদানের পরিমাণ ১১৭ কোটি ডলার।
বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে মূলত জাহাজ, যন্ত্রপাতি, প্লাস্টিক, আয়রন ও স্টিল, কাগজ ও কাগজের বোর্ড, জিংক, তুলা, রাসায়নিক, ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্র ইত্যাদি আমদানি করে বাংলাদেশ। আর রফতানি পণ্যের সিংহভাগই তৈরি পোশাক।
কোরিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে গত বছরই এক গবেষণা প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্য ইস্ট এশিয়া স্টাডি সেন্টার। গবেষণাটির তত্ত্বাবধানে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন। জানতে চাইলে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘মিডল পাওয়ার হিসেবে দেখা হয় দক্ষিণ কোরিয়াকে। তারা হয়তো আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অতটা উচ্চবাচ্য করে না। কিন্তু তাদের ভূরাজনৈতিক স্বার্থ আছে বাংলাদেশকে ঘিরে। বিস্তৃতভাবে বলতে গেলে ইন্দো-প্যাসিফিক যেমন আছে তেমনি দক্ষিণ এশিয়ায় বে অব বেঙ্গল। তাই জাপানের মতোই এ অঞ্চলের বাংলাদেশের দিকে নজর আছে দক্ষিণ কোরিয়ার।’
বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতেও সুযোগ আছে উল্লেখ করে ড. দেলোয়ার বলেন, ‘গত কয়েক বছরে দক্ষিণ কোরিয়ার ডিফেন্স পলিসিতেও পরিবর্তন এসেছে। এখন দেশটি সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক শুধু উন্নয়ন-সহযোগী বা অর্থনৈতিক হিসেবেই তারা দেখে তা নয়, এর সঙ্গে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্কও আছে। আগামীতে কৌশলগত সম্পর্কোন্নয়নের সম্ভাবনাও আছে। বাস্তব কারণেই সে সম্ভাবনা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।’