বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে সুলেমান দিয়াবাতের। তার এই আগ্রহকে বেশ ইতিবাচকভাবেই নিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। আর এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মোহামেডান স্পোর্টিংয়ের ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকিব। এখন শুধু নাগরিকত্ব আর কাগজপত্রের হিসেব মিলে গেলেই লাল-সবুজের জার্সিতে দেখা যাবে আফ্রিকার দেশ মালির এই কুশলী ফরোয়ার্ডকে।
যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না বললেও কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছেন সুলেমান, ‘ইনশাল্লাহ, শীঘ্রই সামনে ভালো কিছু ঘটতে পারে।’ স্বভাবতই তার মুখের এই কথা আশা জোগাচ্ছে বাংলাদেশী ফুটবলপ্রেমীদের। কেননা বহু বছর ধরেই যে বাংলাদেশের ফুটবলে ‘খরা’ চলছে। আর সেই খরা হচ্ছে শিরোপার।
মোহামেডান কোচ আলফাজ আহমেদের ‘তুরুপের তাস’ দিয়াবাতের জাওয়া লাল-সবুজের জার্সিতে খেলা। এ প্রসঙ্গে তিনি মে তে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের হয়ে খেলতে পারলে খুশি হবো।’ সুলেমানের সেই আশা পূরণ হতে চলেছে। তবে তার জন্য পেরুতে হবে কিছু বাধা। যেমন নিজ দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করা ও বাংলাদেশে স্থায়ী হবার জন্য নিজ পরিবারের সম্মতি আদায়। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) শেষ। মোহামেডানের অধিনায়ক দিয়াবাতে ছুটি কাটাতে গেছেন মালিতে। সেখান থেকে ফিরেই পরিষ্কার করে জানাবেন সেই বাধা দুটি পেরুতে পেরেছেন বা পারবেন কি না।
দিয়াবাতের সঙ্গে ইতোমধ্যেই যোগাযোগ করেছে বাফুফে। এ প্রসঙ্গে দিয়াবাতের ভাষ্য, ‘বাফুফের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তবে কি কথা হয়েছে, সেটা বলা সম্ভব নয়। তবে আশা করছি শীঘ্রই শুভ সংবাদ আসবে। বাংলাদেশের হয়ে খেলতে পারলে অনেক খুশি হবো।’
মাস দুয়েক আগে দিয়াবাতে বাংলাদেশের হয়ে খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করার পর এটাকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখেছে বাফুফে। এরই মধ্যে বাফুফে ডেকেছিল দিয়াবাতেকে। বাফুফে ভবনে গিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন মোহামেডান ম্যানেজার নকিব। তিনি বলেছেন, ‘বাফুফের বর্তমান (ভারপ্রাপ্ত) সেক্রেটারির সঙ্গে আমি ও দিয়াবাতে দেখা করে কথা বলেছি। তিনি জানতে চেয়েছেন দিয়াবাতের পাসপোর্ট-কাগজপত্র ঠিক আছে কি না, ঢাকা লিগে কত বছর ধরে খেলছে… এসব কিছুর ডকুমেন্টস চেয়েছেন। এগুলো পেলে বাফুফে সেসব যাচাই-বাছাই করবে। সুলেমানেরও আগ্রহ আছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল টিমের হয়ে খেলার জন্য।’ নকিব আরও যোগ করেন, ‘বাফুফে পজিটিভ। তবে কাগজপত্রের প্রক্রিয়া আছে। এগুলো প্রসেসিং হতে দুই-তিন মাস সময় লাগবে। এগুলো চেক করে আমাদের জানাবে।’
সদ্যসমাপ্ত লিগে ১৬ গোল করে হয়েছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন দিয়াবাতে, অ্যাসিস্ট ৫টি। এবং করেছেন সবচেয়ে বেশি ৩টি হ্যাটট্রিক। বয়সটা যদিও ৩২, তবে ফিটনেস বলছে অনায়াসেই আরও ৪-৫ বছর সার্ভিস দিতে পারবেন দলকে।
জাতীয় দলের শক্তি বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এ পথে হাঁটার চেষ্টা করে আসছে ২০১৩ সাল থেকে। তা হলো বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত দক্ষ ও কুশলী ফুটবলার দলে নেয়া। সেজন্য ইন্টারনেটে এ জাতীয় বিজ্ঞপ্তিও দেয়া হয় বাফুফের তরফ থেকে। এর প্রেক্ষাপটে একাধিক ফুটবলার যোগাযোগ করেন। টিকে যান ডেনমার্কের জামাল ভুঁইয়া এবং ফিনল্যান্ডের তারিক কাজী। অনেক জটিলতার পর নাইজিরিয়ার এলিটা কিংসলে বাংলাদেশী নাগরিকত্ব দিয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলাতে সক্ষম হয় বাফুফে। তবে এলিটার বয়স হয়ে যাচ্ছে, ফর্মও পড়তি। তার ওপর জাতীয় দলের আক্রমণে দক্ষ আর কোন ফরোয়ার্ড নেই (সাফে অবশ্য শেখ মোরসালিনকে পাওয়া গেছে, কিন্তু সেটাই যথেষ্ট নয়)। কাজেই আরেকজন বিদেশীকে যদি বাংলাদেশের পাসপোর্ট দিয়ে জাতীয় দলে খেলানো যায়, তাহলে নিশ্চয়ই মন্দ হয় না। আর সেই বিদেশী থেকে যদি স্বদেশী বনে যান সুলেমান দিয়াবাতে, তাহলে কি মন্দ হবে?
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেলছেন বেশ ক’জন বিদেশী ফুটবলার। এদের অনেকেই কয়েক মৌসুম ধরেই খেলছেন। তবে কেউই বাংলাদেশের জাতীয় দলের হয়ে খেলার কথা বলেননি। কিন্তু একজন বলেছেন। তিনি সুলেমান দিয়াবাতে। মাস দু’য়েক আগেই ফেডারেশন কাপের অবিস্মরণীয়-রোমাঞ্চকর ফাইনালে একাই হ্যাটট্রিকসহ চার গোল করে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের বিরুদ্ধে ফেডারেশন কাপে ১৪ বছর পরে এবং যে কোনো পর্যায়ে ৯ বছর পর মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে শিরোপা জেতাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। শুধু তাই নয়, ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়, টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় এবং টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা (৮ গোল) … তিনটি পুরস্কার একাই বগলদাবা করে আরেকটি কীর্তি গড়েন। টানা পাঁচ মৌসুম ধরে খেলছেন ‘ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট’ খ্যাত মোহামেডানে।
করেছেন ৬০ গোল। এর আগে খেলেছেন ভিয়েতনামের কান থু এফসি (২০১০-২০১৪) এবং লং আন এফসি (২০১৫)-তে। গত মৌসুমে দিয়াবাতে লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা (২১ গোল)। সেবার মোহামেডান লিগে হয়েছিল পঞ্চম। ফিফার নিয়ম হচ্ছে কোন দেশের হয়ে টানা ৫ বছর লিগে খেললে এবং এর মধ্যে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অন্য ক্লাব বা দেশের হয়ে না খেললেই সেই দেশের নাগরিকত্ব লাভের জন্য আবেদন করা যাবে। এই দুটি শর্তই পূরণ করা হয়ে গেছে দিয়াবাতের। তিনি জাতীয় দলে এলে দক্ষ স্ট্রাইকার ও গোল সংকটে ভোগা জাতীয় দল যে তাতে উপকৃতই হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।