এ যেন এক ইতিহাস গড়ে ফেলেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ফুটবল দল। ভাবা যায়, ভারতবর্ষের অন্যতম জনপ্রিয় ও শক্তিশালী দল ইস্ট বেঙ্গলের বিপক্ষে ২-২ গোলে ড্র করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। যে দলটা ডুরান্ড কাপের মতো ঐতিহ্যবাহী টুর্নামেন্টে খেলতে গেছে। যাদের কোনো সুযোগই ছিল না। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচেই মোহন বাগানের কাছে ৫-০ গোলে হেরে গেল। সেই দলটা ইস্ট বেঙ্গলের মতো দলের বিপক্ষে পিছিয়ে থেকে ড্র করল।
২-০ গোলে পিছিয়ে ছিল। সেই দলটা ২ গোল শোধ করে দেশের ফুটবলে বড় উপহারই দিয়েছে। কয়েক দিন আগে ইস্ট বেঙ্গল ১০৪ বছর পূর্তি করল। উৎসব করল। এখনো সেই উৎসবের গন্ধ কলকাতার ফুটবলে ভেসে বেড়াচ্ছে। সেই উৎসবটায় জল ঢেলে দিয়েছে সেনাবাহিনী। ২-২ গোলে ড্র করে যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গন ছাড়ল বাংলার দামাল ছেলেরা। ইস্ট বেঙ্গলের স্প্যানিশ ফুটবলার ক্রেসপো ও সেভেরিও গোল করেন। বাংলাদেশের শাহারিয়ার ইমন ও মিরাজ প্রধান গোল করেন।
পরশু কলকাতায় সংবাদ সম্মেলনে স্প্যানিশ কোচ কার্লস কুয়াদ্রাতও জানিয়েছিলেন ভালো পারফরম্যান্স করতে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ফুটবল দলের প্রশংসাও করেছিলেন তিনি। সেনাবাহিনীর ফুটবল দলের ওপর আস্থা রাখা যায় না, সেটি কার্লস কুয়াদ্রাতের মনে ছিল। সব শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেও ড্রয়ের কষ্ট নিয়ে ফিরলেন।
ডুরান্ড কাপ ফুটবলে ইস্ট বেঙ্গলের প্রথম খেলা। প্রতিপক্ষ সেনাবাহিনী। তার পরও লাল-হলুদ সমর্থকদের ভাবনায় ছিল বড় ম্যাচ। গ্রুপ পর্বের খেলা। বৃষ্টিভেজা মাঠে লড়াইয়ে নেমেই আওয়াজ শোনা গেল ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের সমর্থকদের। বাংলাদেশের কোনো সমর্থক নেই। এই খেলাটাই ঢাকার মাঠে হলে অন্তত এটা বলা যায় যে স্টেডিয়ামমুখী হতেন দর্শক।
ডুরান্ড কাপ ফুটবলে বড় ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা ছিল না সেনাবাহিনীর। সেই সুযোগটা নিয়েছিল মোহন বাগান। কাল দ্বিতীয় ম্যাচে সেনাবাহিনীর রাকিব, মুরাদ, সাজ্জাদ, ইমন, মেহেদি, জাফর ইকবাল, সাব্বির, রায়হান মিয়া, মিরাজ প্রধান, রাজিব হোসেন, মামুন মোল্লা, ইমতিয়াজরা অন্যরকম ফুটবল খেললেন। প্রথম ম্যাচের দলটাই যেন বদলে গেছে। কথা বলার মতো নৈপুণ্য ছিল। ইস্ট বেঙ্গলে স্প্যানিশ ফুটলার দুজন খেলেছেন, জাতীয় দলের তিন ফুটবলার খেলেছেন। নামিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ান ফুটবলার। আর দেশিদের অভিজ্ঞতার ভান্ডার পূর্ণ। স্কিলফুল ফুটবলার। নিজেদের মাঠে দাপট দেখিয়েছেন মোহাম্মদ জামালের কিকঅফ বাঁশি থেকেই। কিন্তু ম্যাচের প্রথমার্ধের ২টি গোলই স্বস্তি দেয়নি সেনাবাহিনী ফুটবল দলকে।
ফুটবলাররা মনে করছেন, পেনাল্টি দেওয়ার মতো ফাউল হয়নি। রেফারির চোখ খুব সূক্ষ্মভাবে ফাঁকি দিয়েছেন নিশু কুমার। ডিফেন্ডার কামরুল ইসলামের হাত নিশুর ঘাড় স্পর্শ হতেই নিশু মাটিতে পড়ে রেফারির নজর কাড়তে চাইলেন। রেফারি জামাল সেটা দেখেও খেলা চালিয়েছেন। সবাই বুঝল ফাউল হয়নি। কিন্তু সহকারী রেফারি নাগুরাকানি পতাকা উচিয়ে রেফারির নজর কাড়লেন। পেনাল্টির নির্দেশ দিতে বললেন। সেনাবাহিনীর ফুটবলাররা দৌড়ে গেলেন রেফারির দিকে। ততক্ষণে বল বসিয়ে গোল করলেন স্প্যানিশ স্ট্রাইকার ক্রেসপো।
৩২ মিনিটের এই গোলের আগে শুরুতেই নিখুঁত ক্রসের বল সেনাবাহিনীর সাজ্জাদ হোসেন হেড করে গোলকিপার প্রভুসুখননের হাতে তুলে দিয়েছেন। একটু ডানে-বাঁয়ে হেড করলেই গোল আদায় করতে পারতেন সাজ্জাদ। এমন আরেকটি সুযোগ পিছিয়ে পড়ার পরও পেয়েছিল বাংলাদেশের সেনাবাহিনী। সেবার রায়হান হেড নিতে পারেননি। এবারও গোলের সুযোগ নষ্ট। ৪৫ মিনিটে দ্বিতীয় গোল হজম করে সেনাবাহিনী। এই নিয়েও সেনাবাহিনীর আপত্তি দেখা গেছে মাঠে। খাবড়ার বলটা নামিয়েছেন কর্নার ফ্ল্যাগের কাছে। আপত্তি ওঠে—বল বাইরে ছিল। সহকারী রেফারি নাগুরাকানি কাছেই ছিলেন। সেই বল গোলে ঢুকল স্প্যানিশ স্ট্রাইকার সিভেরিও তোরর মাথা স্পর্শ করে। এই গোলের পরও সেনাবাহিনীর ফুটবলাররা আপত্তি তুলেছেন রেফারির দিকে।
২-০ গোলে পিছিয়ে ইস্ট বেঙ্গলের সেই নিশু কুমার সরাসরি লাল কার্ড পেয়ে মাঠ ছেড়েছেন। অভিজ্ঞ ফুটবলার নিশু সেনাবাহিনীর ফুটবলারকে কুনই মেরে লাল কার্ড দেখেন। ১০ জনের ইস্ট বেঙ্গলকে পেয়ে সেনাবাহিনী দারুণ সাহস দেখিয়েছে। আক্রমণ করেছে। ৮৮ মিনিটে অধিনায়ক মেহেদি হাসানের থ্রো বক্সে রাজিব নামিয়ে দিলে শাহরিয়ার ইমন বাঁ পায়ে গোল করেন ব্যবধান কমিয়ে আনেন ২-১গোলে। অতিরিক্তি সময়ের ৯৭ মিনিটে ইস্ট বেঙ্গলের অধিনায়ক খাবরার কাছ থেকে বল নিয়ে ইমন, মামুন মোল্লার চেষ্টা ফিরিয়ে দেন ইস্ট বেঙ্গলের গোলকিপার প্রভুসুখন তিনবার ফিরিয়েও ঠেকাতে পারেননি। বদলি নামা মিরাজ প্রধান ইস্ট বেঙ্গলের জালে বল জড়িয়ে ২-২ গোলে সমতায় ফেরান সেনাবাহিনীকে।
পূর্ববর্তী পোস্ট