Home » আমেরিকা ছাড়ার ধুম! কেন দলে দলে ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছেন মার্কিনিরা?

আমেরিকা ছাড়ার ধুম! কেন দলে দলে ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছেন মার্কিনিরা?

0 মন্তব্য 56 ভিউজ

আমেরিকা, এখনও বিশ্বের বহু মানুষের স্বপ্নের ঠিকানা। পড়াশোনার জন্য হোক কিংবা কর্মসূত্রে, আমেরিকা পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেন অনেকেই।

কিন্তু আমেরিকার সেই চাকচিক্য ভরা দিন হয়তো শেষ হতে যাচ্ছে। কেননা, দেশটির অনেক নাগরিকেই এখন মাতৃভূমি ত্যাগ করে পরিবার নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছেন দূরের দেশে।

কিন্তু কেন? আমেরিকায় কি মড়ক লেগেছে? না কি যুদ্ধ শুরু হয়েছে? হঠাৎ কেন মাতৃভূমি ত্যাগ করতে শুরু করেছেন মার্কিনিরা? কোথায়ই বা যাচ্ছেন তারা?
আমেরিকা থেকে মানুষ সবচেয়ে বেশি যাচ্ছেন ইউরোপে। সেখানকার বিভিন্ন দেশে গিয়ে তারা নতুন জীবন শুরু করছেন। নতুন করে পাতছেন সংসার। মাতৃভূমির মায়া কাটিয়ে ফেলছেন অনায়াসেই।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত নেদারল্যান্ডসে বসবাসকারী আমেরিকাবাসীর সংখ্যা সাড়ে ১৫ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ২৪ হাজার। পর্তুগালে এই সংখ্যাটি তিন গুণ বেড়ে ১০ হাজার হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে স্পেনে মার্কিনির সংখ্যা ২০ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৪ হাজার।

২০২২ সালে ডেনমার্কে ৪,৬৮৯ জন, সুইজারল্যান্ডে ৪,৫১৩ জন, আয়ারল্যান্ডে ৩,৮৩১ জন, চেক রিপাবলিকে ২,৫১৩ জন মার্কিন নাগরিককে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

ফ্রান্স, জার্মানির মতো দেশেও গত কয়েক বছরে মার্কিন প্রবাসীদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রিটেনে বসবাসকারী আমেরিকানদের সংখ্যা ২০১৩ সালে ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার, ২০২১ সালে তা হয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার।

শুধুমাত্র গত বছরেই আমেরিকা থেকে চার হাজারের বেশি মানুষ ডেনমার্ক এবং সুইজারল্যান্ডে পাড়ি দিয়েছেন। সেখানেই পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেছেন।

আমেরিকার নাগরিকদের ইউরোপে চলে যাওয়ার নেপথ্যে উঠে এসেছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ। কোনও একটি বিশেষ কারণে আমেরিকানরা দেশ ছাড়ছেন না। বরং, মাতৃভূমি ত্যাগের নানা কারণ রয়েছে।

অনেকের মতে, আমেরিকায় মানুষের জীবনযাত্রার মান আগের চেয়ে পড়ে গেছে। স্বাচ্ছন্দ, স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারছেন না অনেকেই। উন্নত জীবনধারার খোঁজে তাই ইউরোপে যাচ্ছেন তারা।

আমেরিকায় বাড়ি ভাড়া বা থাকার খরচ আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। বৃদ্ধি পেয়েছে জমির দামও। নাগরিকদের বেতন বা রোজগার সেই অনুপাতে বাড়েনি। ইউরোপের দেশগুলোতে এই খরচ অপেক্ষাকৃত কম।

আমেরিকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিও নাগরিকদের দেশ ছাড়ার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিরক্ত। তবে এ ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়কার প্রভাব সবচেয়ে বেশি।

আমেরিকার কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হলে দেশ ছেড়ে চলে যাবেন— এমন প্রতিজ্ঞা করে বসেছিলেন নাগরিকদের অনেকেই। ২০১৬ সালে ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের কুর্সিতে বসলে কেউ কেউ সত্যিই দেশ ছাড়েন।

বারাক ওবামার আমলে ১১ শতাংশ, ট্রাম্পের আমলে ১৬ শতাংশ আমেরিকান ইউরোপে গিয়ে থিতু হয়েছেন। ২০২২ সালের মধ্যে এই পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ১৭ শতাংশ।

কাজ এবং ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্যের ক্ষেত্রেও আমেরিকার চেয়ে এগিয়ে ইউরোপ। পরিসংখ্যান বলছে, আমেরিকায় চাকরিজীবীদের কাজের গড় সময় বছরে ১,৮১১ ঘণ্টা। ইউরোপে এক বছরে ১,৫৭১ ঘণ্টা কাজ করতে হয়।

আমেরিকা ছাড়ার নেপথ্যে অন্য একটি কারণ হল বর্ণবিদ্বেষ। আমেরিকান সমাজের বড় সমস্যা এটি। কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের এখনও নিচু নজরে দেখে সমাজের একাংশ। ২০২১ সালে জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের পর অনেক কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান ইউরোপে চলে গিয়েছিলেন।

তবে আমেরিকা থেকে ইউরোপে গিয়ে সেখানে থিতু হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা গেছে করোনা মহামারী-পরবর্তী কালে। আমেরিকায় থাকার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক দিক থেকে সমস্যায় পড়েছেন অনেকেই।

মহামারীর পরে সার্বিকভাবে আমেরিকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও নড়বড়ে। সরকারের উপর ঋণের বোঝা চেপেছে। দেউলিয়া হয়েছে একের পর এক জনপ্রিয় ব্যাংক।

অনেকেই তাই আমেরিকায় অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। ইউরোপে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তে ইন্ধন জুগিয়েছে সরকারের এই অর্থনৈতিক জটিলতা।

ইউরোপের যে দু’টি দেশকে অনেক বেশি সংখ্যক আমেরিকাবাসী নির্ঝঞ্ঝাট জীবনের জন্য বেছে নিয়েছেন, সেগুলো হল পর্তুগাল এবং স্পেন। এছাড়া, অন্য ইউরোপীয় দেশেও মার্কিনিদের ভিড় বাড়ছে।

আরও পড়ুন

মতামত দিন


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.

আমাদের সম্পর্কে

We’re a media company. We promise to tell you what’s new in the parts of modern life that matter. Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo. Sed consequat, leo eget bibendum Aa, augue velit.