রাজধানী থেকে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে সরাসরি ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চল নিবাসীদের বহুলপ্রতীক্ষিত স্বপ্ন পূরণ হলো।
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ৭ মিনিটে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গার উদ্দেশে ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনসহ সরকারের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা এই ট্রেন যাত্রায় সঙ্গীন ছিলেন।
পরীক্ষামূলক ট্রেন যাত্রা উপলক্ষে সকাল আটটার দিকে রাজধানীর কমলাপুরে রেলওয়ে স্টেশনের ৭ নং প্ল্যাটফর্মে ট্রেনটি এসে পৌঁছে। এসময় প্ল্যাটফর্মে উপস্থিত সাধারণ যাত্রী ও রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে উচ্ছ্বসিত দেখা যায়। কেউ নতুন ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলেন, আবার কেউ স্মরণীয় এই মুহূর্তকে সেলফিবন্দি করে রাখছিলেন।
প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম-বরিশাল-মোংলা-খুলনা মহাসড়কের বেকুটিয়াতে কঁচা নদীর ওপর নির্মিত ‘অষ্টম চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু’। এটি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়ন হলো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের আরও একটি স্বপ্ন।
সেতুটি খুলে যাওয়ায় পিরোজপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে আসবে আমূল পরিবর্তন। বরিশালের সঙ্গে খুলনার সড়ক যোগাযোগে থাকবে না কোনো ফেরি। ব্যবসার ক্ষেত্রে দ্রুত যাতায়াত করা যাবে তাই ব্যবসায়ীরা সুবিধা পাবেন। পাশাপাশি বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা জেলার সঙ্গে যশোর ও খুলনার দূরত্ব এক ঘণ্টারও বেশি কমে যাবে। গুরুত্বপূর্ণ এই সেতু চালু হওয়ায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে খুলনা হয়ে বরিশাল, কুয়াকাটা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার স্বপ্নের দুয়ার খুলে গেল। এর ফলে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে গতি আসবে।
এ উপলক্ষে বঙ্গমাতা সেতু এলাকায় পশ্চিম ও পূর্বপারে দুটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। পশ্চিমপারে পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ও পূর্বপারে সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী পিরোজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু উপস্থিত ছিলেন। এতে যোগ দিয়েছেন সেতুর দুই প্রান্তের হাজারও মানুষ। সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে সড়কের দুই পাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ব্যানার ও ফেস্টুন টানানো হয়েছে।
ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি নতুন একটি লোকমোটিভ (ইঞ্জিন), একটি পাওয়ার কার (ডব্লিউপিসি), শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডাইনিং কার ও গার্ড ব্রেক (ডব্লিউজেডিআর), শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্লিপার কার (ডব্লিউজেসি), দুটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার কার (ডব্লিউজেসিসি) ও একটি শোভন চেয়ার কোচ (ডব্লিউইসি) ক্যারেজ এই সাতটি ক্যারেজ দিয়ে র্যাক তৈরি করে ট্রেনটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, গত আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৮২ শতাংশ। এর মধ্যে প্রথম ভাগে ঢাকা-মাওয়া অংশে অগ্রগতি ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ। এই অংশে শতভাগ রেললাইন হয়েছে। তবে চার স্টেশনের কোনোটির কাজই শতভাগ শেষ হয়নি। দ্বিতীয় ভাগে মাওয়া-ভাঙ্গার কাজের অগ্রগতি ৯৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। এই অংশে ব্যালাস্টেড ট্রাক ও সিগন্যালিংয়ের কাজ বাকি। নতুন চার স্টেশনের দুটির নির্মাণ শেষ, বাকি দুটি বাকি। আর শেষ ভাগে রয়েছে ভাঙ্গা-যশোর অংশের কাজ, যার অগ্রগতি ৭৮ শতাংশ। এই অংশে রেললাইন নির্মাণ প্রায় শেষ, মাত্র এক শতাংশ বাকি। তবে নয়টি স্টেশেনের কোনোটির কাজই শেষ হয়নি।
স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে রেললাইন উদ্বোধনের জন্য আগামী ১০ অক্টোবর দিন নির্ধারণ করা আছে। রেললাইনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের দিন সুধী সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এখনও তা চূড়ান্ত হয়নি।
পূর্ববর্তী পোস্ট