দশ মাসের মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আমূল পালটে গেল জি২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলোর অবস্থান। জোটের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে এটি ‘ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ নয়, ‘ইউক্রেনে যুদ্ধ’। তবে এই সিদ্ধান্তে গর্ব করার মতো কিছুই নেই বলে মন্তব্য করেছে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।
২০২২ সালে নভেম্বরে জি২০ সম্মেলনের বালি ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছিল ‘ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’। কিন্তু ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে নয়াদিল্লি ঘোষণাপত্রে এটিকে ‘ইউক্রেনে যুদ্ধ’ উল্লেখ করা হয়েছে। আর যে ঘোষণাপত্র সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, জি২০ জোটের দেশগুলো ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের সঙ্গে সম্পর্কিত যে ঘোষণা করেছে তাতে ‘গর্ব করার মতো কিছু নেই’। এখানে রাশিয়ার কোনো সমালোচনা না করায় ঘোষণার সমালোচনা করেছে দেশটি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওলেগ নিকোলেঙ্কো ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এটা স্পষ্ট যে ইউক্রেনের পক্ষের অংশগ্রহণ (জি২০ বৈঠকে) অংশগ্রহণকারীদের পরিস্থিতি আরও ভালোভাবে বুঝতে পারত।’
গতবার বালিতে যখন জি২০ সম্মেলন হয়েছিল, তখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারেনি সব দেশ। আমেরিকার মতো দেশ যুদ্ধের জন্য রাশিয়ার ওপর যাবতীয় দোষ চাপিয়েছিল। তবে সেই পথে হাঁটেনি ভারত। এবার মোদির ডেরায় এসে অবশ্য যুদ্ধের জন্য শুধু রাশিয়াকে দোষারোপ করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, ‘ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ এবং ‘ইউক্রেনে যুদ্ধ’-র মধ্যে খালি চোখে বেশি পার্থক্য না থাকলেও কূটনৈতিক মহলে সেটার আকাশ-পাতাল তফাৎ আছে।
কূটনৈতিক মহলের মতে, ইউক্রেনের যুদ্ধের ক্ষেত্রে রাশিয়াকে যে এককভাবে দোষারোপ করা হয়নি, তা ভারতীয় কূটনীতির বড় জয়। কারণ দীর্ঘদিন ধরেই পশ্চিমী দেশগুলো রাশিয়াকে একঘরে করার চেষ্টা করছে। সেটাই জি২০-র ক্ষেত্রে সবথেকে জট ছিল। ভারতীয় কূটনীতির ম্যাজিকে সেই জটও কেটে গিয়েছে।
দিল্লি জি২০ ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রসংঘের সনদের সামঞ্জস্য রেখে কোনও দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব বা রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে গিয়ে কোনও অঞ্চল অধিগ্রহণের জন্য হুমকি দেওয়া বা বাহিনী প্রয়োগ করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকবে সব দেশ। পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের হুমকি দেওয়া বা পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ করার বিষয়টি একেবারে বরদাস্ত করা হবে না।’
দিল্লি ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘সব দেশকে আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব, আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতার বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা-সহ আন্তর্জাতিক আইনের নীতি মেনে চলতে বলা হচ্ছে।’ সেইসঙ্গে দিল্লি ঘোষণাপত্রে সব দেশ একমত হয়েছে যে এটা যুদ্ধের যুগ নয়।
পূর্ববর্তী পোস্ট