Home » আমেরিকার চোখরাঙানি উপেক্ষা করে রাশিয়া থেকে গোপনে কয়লা এল ভারতে!

আমেরিকার চোখরাঙানি উপেক্ষা করে রাশিয়া থেকে গোপনে কয়লা এল ভারতে!

0 মন্তব্য 43 ভিউজ

ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে বিশ্বের একটা বড় অংশের সামনে কোণঠাসা রাশিয়া। কিন্তু তারপরও বিশ্ববাজারে রাশিয়া ব্যবসা-বাণিজ্য করে আয় করছে প্রচুর। আর তার অনেকাংশ আসছে বন্ধু রাষ্ট্র ভারত থেকে। মস্কোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখায় আমেরিকার চোখরাঙানিও দেখতে হয়েছে নয়াদিল্লিকে। তবে তা উপেক্ষা করেই রাশিয়ার দিকে বন্ধুত্বের হাত আরও বাড়িয়ে দিল ভারত।
এবার এক প্রকার গোপনেই রাশিয়া থেকে কয়লা এল ভারতে। জলপথে নয়, ট্রেনে করে রাশিয়া থেকে টন টন কয়লা পৌঁছল দেশটিতে। একটা নয়, দুটি ট্রেন ভর্তি কয়লা এসেছে।
দিন কয়েক ধরেই আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ ট্রান্সপোর্ট করিডোর নিয়ে আলোচনা চলছে। বিভিন্ন প্রতিবেদন সূত্রে খবর, ওই করিডোর ধরেই কয়লা ভারতে পৌঁছেছে।
এই করিডোরকে ‘মাল্টি ট্রান্সপোর্ট করিডোর’ বলা হয়। কারণ রেলপথ ছাড়াও সড়ক এবং জলপথ ব্যবহার হয় এই যাত্রাপথে। রাশিয়া থেকে ইরান হয়ে কয়লাবোঝাই ট্রেন এসে পৌঁছায় চাবাহার বন্দরে। সেখান থেকে জাহাজে করে ভারতে আনা হয়েছে কয়লা।
আগে বাল্টিক সাগর, সুয়েজ খাল হয়ে রাশিয়া থেকে কোনও জিনিস ভারতে আসত। যাতে সময় লেগে যেত কমপক্ষে ৪৫ দিন। কিন্তু উত্তর-দক্ষিণ করিডোরের মাধ্যমে ট্রেনে করে কয়লা আসায় সময় লেগেছে মাত্র ২৫ দিন।
সম্প্রতি ইরানের সঙ্গে চাহাবার বন্দর নিয়ে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি সই করেছে ভারত। চুক্তি অনুযায়ী, ইরানের চাবাহার সমুদ্রবন্দর আগামী ১০ বছরের জন্য ভারতের হাতে এসেছে।
ভৌগোলিক অবস্থানগতভাবে চাবাহার সমুদ্রবন্দর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভারতের কাছে এই সমুদ্রবন্দর পশ্চিম এশিয়া, ইউরেশিয়ার মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং পরিবহণ খরচ ও সময় কমানোর ক্ষেত্রে প্রাণকেন্দ্র।
এই চুক্তির পর অনেকেই দাবি করেছিলেন, চাবাহারের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ায় আফগানিস্তান, ইরান হয়ে রাশিয়া পর্যন্ত জলপথ পরিবহণে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারবে ভারত।
পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে আফগানিস্তান এবং পশ্চিম এশিয়ায় পৌঁছতে বিকল্প রাস্তা হিসেবে চাবাহার বন্দরকে ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছিল ভারত। সম্প্রতি রাশিয়া থেকে কয়লা আমদানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিল এই বন্দর।
কোন পথে কয়লা এল ভারতে?
সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, কয়লা কাজাখস্তান এবং উজবেকিস্তান হয়ে এসে ইরান হয়ে পৌঁছায় চাহাবার সমুদ্রবন্দরে।
এই গোপন আমদানি কি ভারতের জন্য ‘ভারী’ হবে?
চাহাবার বন্দর নিয়ে ভারতকে আগেই হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে আমেরিকা। চুক্তি স্বাক্ষরের পর ভারতের উপর তারা নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে, এমন এক ইঙ্গিত দিয়েছিল।
ভারত-ইরান চুক্তি প্রসঙ্গে আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রিন্সিপাল ডেপুটি মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল হুঁশিয়ারির সুরে বলেছিলেন, “কেউ যদি ইরানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপনের কথা ভাবে, তাহলে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তাকে সতর্ক থাকতে হবে।”
কূটনৈতিক মহলের একাংশের মতে, ইরানের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক ভাল নয়। আমেরিকা চায় না, ইরানের সঙ্গে তার ‘বন্ধু’ দেশগুলো কোনও সম্পর্ক রাখুক। সেদিক থেকে ভারত আমেরিকার ‘ইচ্ছা’র বিরুদ্ধে গিয়ে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করেছে।
সম্প্রতি সেই সম্পর্কের ফলস্বরূপই রাশিয়া থেকে ইরান হয়ে কয়লা ট্রেনে করে ভারতে এসেছে। কূটনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এই আমদানিতে রাশিয়া এবং ইরানের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ভারত। যা আমেরিকা ভালভাবে না-ও নিতে পারে।
যদিও আমেরিকা এ ব্যাপারে সরকারিভাবে কোনও মন্তব্য করেনি। অন্যদিকে, এই কয়লা আমদানি নিয়ে ভারতও সরকারিভাবে মুখ খোলেনি।
এখন প্রশ্ন হল, ভারতের মতো দেশের কয়লা কেন প্রয়োজন পড়ল? কয়লা উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত। তারপরও ভারতে কয়লার ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতে কয়লা উৎপাদন হলেও ভাল গুণগত মানের কয়লার পরিমাণ খুবই কম।
সেই ঘাটতি মেটাতেই বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি করতে হয় ভারতকে। কয়লা রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়ার পরেই আছে রাশিয়া।
সম্প্রতি অতিরিক্ত গরমের কারণে ভারতে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। আর বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা বড় ভূমিকা নেয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লার প্রয়োজনেই রাশিয়া থেকে তা আমদানি করল ভারত।
তবে রাশিয়া থেকে কত পরিমাণ কয়লা আমদানি হয়েছে, তা জানা যায়নি। কিন্তু উল্লেখযোগ্য হল উত্তর-দক্ষিণ করিডোরের ব্যবহার। এর ফলে ভবিষ্যতে ভারত আরও লাভবান হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

মতামত দিন


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.

আমাদের সম্পর্কে

We’re a media company. We promise to tell you what’s new in the parts of modern life that matter. Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo. Sed consequat, leo eget bibendum Aa, augue velit.