Home » আমার বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করা হলো কেন?

আমার বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করা হলো কেন?

0 মন্তব্য 44 ভিউজ

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ছুটিতে থাকা অবস্থাতেই সাদা পোশাকে রাজধানীর রামপুরায় হামলাকারীদের হাতে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হন পিবিআইয়ের পরিদর্শক মাসুদ পারভেজ ভুঁইয়া। গত ১৯ জুলাই অফিস করে ঢাকায় বনশ্রীর বাসায় ফেরেন। পরদিন শুক্রবার সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ পড়ে ওষুধ কেনার জন্য বাসা থেকে বের হন। ওই সময় এ এলাকায় ২০/২৫ জন লোক ছিল। সেখানে হঠাৎ করে কয়েকজন তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর ফোনে ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছিল। বিষয়টি খুবই রহস্যজনক। নাশকতায় মারা হয়েছে, নাকি তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
পরিবারের সদস্যরা বলেন, তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা তদন্ত করেছেন। তার অফিস নারায়ণগঞ্জের পিবিআই। আন্দোলনের মধ্যে ১৮ জুলাই কয়েক হাজার মানুষ গিয়ে তালা ভেঙে মাসুদের কর্মক্ষেত্র নারায়ণগঞ্জের পিবিআই কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। সেদিন তিনি কার্যালয়ে ছিলেন না।
মাসুদের সারা শরীরজুড়ে ছিল অসংখ্য দায়ের অস্ত্রের কোপ আর রড দিয়ে পেটানোর জখম। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে উম্মে মাইশা স্নেহা ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। মেঝ মেয়ে উম্মে মাহিরা নেহা এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। সবার ছোট ছেলে আহনাফ মাহিন ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। সন্তানদের অভিন্ন বক্তব্য।
তারা বলেন, আমার বাবাকে কেন পিটিয়ে মারা হলো? আমার বাবার অপরাধ কি? ওষুধ কিনতে গিয়ে কেন লাশ হলেন আমার বাবা? সন্তানদের আহাজারিতে আশপাশের বাসিন্দারা চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। আমার বাবা মানুষের নিরাপত্তা দিয়েছেন। আজ আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এতিম হয়ে গেছি। মাসুদকে তার গ্রামের বাড়িতেই দাফন করা হয়েছে।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের কালান্দর গ্রামের আব্দুল জব্বার ভুঁইয়া ও নূরজাহান বেগমের চার ছেলে ও চার মেয়ে। ভাইদের মধ্যে মাসুদ পারভেজ তৃতীয়। ১৯৯৬ সালে উপ-পরিদর্শক হিসেবে পুলিশে যোগদান করেন মাসুদ। পরে পদোন্নতি পেয়ে পরিদর্শক হন। কর্মক্ষেত্র নারায়ণগঞ্জ হলেও স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে ঢাকার রামপুরা বনশ্রী এলাকায় বসবাস করতেন মাসুদ পারভেজ-মেরিনা আক্তার বীনা দম্পতি।
তার মা নূরজাহান বেঁচে আছেন। ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, আমার ছেলেকে কেন মারা হলো। যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে।
পরিবারের পক্ষ থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, মাসুদ পারভেজ ভুঁইয়াকে কেউ হয়তো দেখিয়ে দিয়েছে এটা পুলিশ। এ কারণে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তার স্ত্রী বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ২৫ মার্চের প্রথম প্রহরে প্রথমে পুলিশ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হয়েছেন পুলিশ ভাইরা। তবে এখন স্বাধীন বাংলাদেশে কেন এভাবে পুলিশের জীবন দিতে হবে। এই প্রশ্ন এখন পুলিশে মুখে মুখে। এদেরকে চিহ্নিত করতেই হবে। এরা কারা? পুলিশের কাজ হলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। তাহলে পুলিশকে টার্গেট করে হামলা হবে কেন? আমাদের অপরাধ কি? যারা জড়িত তাদের অবশ্যই খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতেই হবে। অপরাধীকে ধরতে একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশের যেকোন দুর্যোগ ও ক্রান্তিকালে পুলিশ জনগণের পাশে থাকে। করোনার সময় পিতা-মাতা তার সন্তানের লাশ রাস্তায় ফেলে রেখে পালিয়ে গিয়েছিল। সন্তান তার পিতা-মাতাকে রাস্তায় রেখেছিল। ওই সময় পুলিশ এই সকল লাশ উদ্ধার করেছে, গোসল ও দাফন করেছিল। সেই মানুষদের হাতে আমাদের জীবন দিতে হবে। এটা ভাবতে অবাক লাগে। আমরা জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করছি। আমরা কারোর প্রতিপক্ষ না। আমরা মানুষের সেবা করে যাচ্ছি।
আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, তাদের পরিবারের খোঁজ-খবর নিচ্ছি। যা যা সহযোগিতা করার দরকার সবই করছি। আহতদের অত্যাধুনিক চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। দেশে না হলে বিদেশে নিয়েও চিকিৎসা করানো হবে। নিহত ও আহতদের পরিবারকে সব ধরনেরর সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে, এটা অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, যারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না। অতীতে পুলিশ কখনো পিছপা হয়নি, এখানো হবে না, ভবিষ্যতেও হবে না। দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ বদ্ধপরিকার।

আরও পড়ুন

মতামত দিন


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.

আমাদের সম্পর্কে

We’re a media company. We promise to tell you what’s new in the parts of modern life that matter. Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo. Sed consequat, leo eget bibendum Aa, augue velit.