অভিভাবকদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ফেল করেছে বলে গালমন্দ করবেন না। ফেল করেছে এতেই তো তাদের মনোকষ্ট। তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে হবে। পড়াশোনার দিকে আরো মনোযোগী করতে হবে। গালমন্দ করলে তারা সেটা নিতে পারবে না।
রবিবার (১২ মে) সকাল ১০টার পর গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ২০২৪ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলের সারসংক্ষেপ ও পরিসংখ্যান তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এরপর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এবারের পরীক্ষায় যারা কৃতকার্য হয়েছে তাদের অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। সঙ্গে অভিভাবক ও শিক্ষকদেরও অভিনন্দন জানান তিনি। যারা অকৃতকার্য হয়েছে তাদের মন খারাপ না করে আগামীতে আরো ভালো করার তাগিদ দেন তিনি।
এ সময় তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে করে বলেন, গালমন্দ করলে ছেলে-মেয়েরা সেটা সহ্য করতে পারে না। কিছু ঘটনা তারা ঘটিয়ে ফেলে, তা তো নিশ্চয়ই অভিভাবকরা চাইবেন না। তারা চাইবেন না তাদের সন্তান হারাতে। সেজন্য তাদের সহানুভূতির সঙ্গে দেখেন, কেন সে পারল না? সেটা খুঁজে বের করে তার সেই সমস্যা দূর করতে হবে। পড়াশোনার দিকে আরো মনোযোগী করে তুলতে হবে।
‘আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে, ছেলে-মেয়েদের বেশি বেশি বললে তাদের পড়ার আগ্রহটা হারিয়ে ফেলে। এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে যাতে তাদের পড়ার আগ্রহটা এমনিতেই তৈরি হয়। আর আজকের ডিজিটাল যুগের ছেলে-মেয়ে, তাদের এমনিতেই মেধা বেশি। কাজেই সেই মেধা বিকাশের সুযোগটা দিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ৯৬ সালে যখন সরকারে আসি তখন সাক্ষরতার হার পেয়েছিলাম মাত্র ৪৫ শতাংশ। আমরা উদ্যোগ নেই এবং নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলব, এ প্রকল্প নিয়ে প্রতিটি জেলাভিত্তিক সাক্ষরতার হার বাড়ানো, এমনকি বয়স্ক শিক্ষাব্যবস্থা আমরা চালু করেছিলাম। ফলে আমরা সাক্ষরতার হার ৬৫.৫এ উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছিলাম। দুর্ভাগ্যের বিষয়, বিএনপি যখন ক্ষমতায় এলো তারা সেটা বন্ধ করে দিল। ২০০৯ সালে যখন আবার ক্ষমতা আসি তখন দেখি সাক্ষরতার হার কমে ৪৪ ভাগে নেমে এসেছে। আবার আমরা উদ্যোগ নিই, আজ আমাদের ৭৬ ভাগের মতো সাক্ষরতার হার। এটা আমাদের ১৫ বছরের বিরাট অর্জন বলে মনে করি। সেই সঙ্গে আমাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে।
‘আমরা প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করে দিচ্ছি। প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিটি বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। কারিগরি শিক্ষায় অংশগ্রহণের হার ২২ ভাগে উন্নীত হয়েছে। এটা ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ ভাগ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৪১ ভাগ করার পরিকল্পনা আছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ করতে হলে আমাদের ছেলে-মেয়েদের শিখাতে হবে। জাতির পিতা বলতেন, সোনার বাংলা গড়তে হবে। সোনার বাংলার জন্য সোনার মানুষ অপরিহার্য।
মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, মেয়েরা একটা সময় স্কুলে যেতেই পারত না। এখন কিন্তু সেটা নেই। ৯৮ ভাগ মেয়ে স্কুলে যায়। মেয়েদের শিক্ষার পরিবেশ আমরাই করে দিয়েছি।
মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পাসের হারে ছাত্রীদের চেয়ে ছাত্ররা পিছিয়ে কেন এর কারণ খুঁজতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ১১টি শিক্ষা বোর্ডে মোট ২০ লাখ ৩৮ হাজার ১৫০ জন পরীক্ষার্থী। ছাত্র ৯ লাখ ৯৯ হাজার ৩৬৪ জন, আর ছাত্রী ১০ লাখ ৩৮ হাজার ৭৮৬ জন। কেন ছাত্ররা কম সে কারণটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে, কী কারণে ছাত্রদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে? পাসের হারেও দেখা যাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে মেয়েরাই অগ্রগামী।
‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, এটা আমরা জানি। শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ছাড়া কখনো উন্নতি করা যায় না। সেজন্য আমাদের সরকার সবসময় শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। শিক্ষা খাতে আমরা যে ব্যয় করি, এটাকে আমরা ব্যয় বলি না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলে গেছেন, এটা বিনিয়োগ। শিক্ষাতে আমরা বিনিয়োগ করি।’
পূর্ববর্তী পোস্ট