বাংলাদেশের ক্রিকেটে সেরা তিন সাফল্যের একটি এসেছে মেয়েদের হাত ধরে। ২০১৮ উইমেন্স এশিয়া কাপের শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছিল সালমা খাতুনের দল। কুয়ালালামুপরের শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে সেদিন তারা হারিয়ে দিয়েছিল পরাশক্তি ভারতকে, যারা আট আসরে সাতবারই চ্যাম্পিয়ন! সেই সাফল্যে টাইগ্রেস ক্রিকেটে কার্যত একটা রেভ্যুলেশন তৈরি হয়েছিল,‘এশিয়া কাপ আমাদের মেয়েদের ক্রিকেটের জন্য অন্যরকম একটা আবেগের জায়গা।
২০১৮ সালের এশিয়া কাপ জয়ের পর বাংলাদেশের মেয়েদের ক্রিকেটে কিন্তু বড় রেভ্যুলেশন (বিপ্লব) হয়েছে। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় সুযোগ, পাশাপাশি বিশ্বকাপের (অক্টেবরে ঘরের মাঠে) আগে নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়া যাবে।’ মঙ্গলবার নবম নারী এশিয়া কাপ খেলতে দেশ ছাড়ার আগে বলছিলেন এবারের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। মাঝের সময়টা মোটেই ভালো কাটেনি, বিশেষ করে সর্বশেষ সিরিজ ও টুর্নামেন্টগুলোতে। ২০২২ সালে ঘরের মাঠে (সিলেট) অষ্টম এশিয়া কাপে লিগ-পর্ব থেকেই বাদ পড়েছিল বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ দুটি সিরিজে একটি ম্যাচেও জয় নেই। ভরাডুবির কারণ সেই ব্যাটিং-ব্যর্থতা।
টুর্নামেন্টটাকে টি২০ বিশ্বকাপের বড় প্রস্তুতি হিসেবেও দেখছেন অধিনায়ক, ‘এটা আমাদের জন্য অনেক বড় সুযোগ, বিশ্বকাপের আগে নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়া যাবে এশিয়া কাপের মাধ্যমে। শেষ দুটি সিরিজ খারাপ গেছে, একটা ম্যাচও জিততে পারিনি। এরপর একটা লম্বা বিরতি গেল, এ সময় ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছি। সেখানে যারা ভালো করেছে, তারা দলে আছে। সর্বশেষ ক্যাম্পেও (সাভারের বিকেএসপিতে) দেখলাম, সবাই ভালো ছন্দে আছে। আমরা এখন ভালো ক্রিকেট খেলার জন্য মুখিয়ে আছি।’
এশিয়া কাপের লক্ষ্য প্রসঙ্গে জ্যোতি বলেন, ‘সর্বশেষ এশিয়া কাপে আমরা সেমিফাইনালে যেতে পারিনি। এবার স্বাভাবিকভাবেই প্রথম লক্ষ্য সেমিফাইনাল। এর জন্য আমাদের প্রথম ম্যাচটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, লম্বা সময় ধরে আমরা ভালো করছি না। কিছু ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স দেখেছি, কিন্তু দল হিসেবে ভালো করিনি। আমাদের মোমেন্টামের জন্য শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটা ভালো করে শুরু করতে চাই।’ গতবার সাত দল অংশ নিলেও এবার আট দল নিয়ে শুক্রবার শুরু নারী এশিয়া কাপ। ২০ জুলাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু জ্যোতিদের মিশন।
‘এ’ গ্রুপে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে আছে নেপাল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। ‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশের সঙ্গী স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড। ফাইনাল ২৮ জুলাই। টি২০ ফরম্যাটের এশিয়া কাপে সবগুলো ম্যাচই হবে ডাম্বুলার রঙ্গিরি ডাম্বুলা স্টেডিয়ামে। এবারের এশিয়া কাপ দিয়ে জাতীয় দলে ফিরেছেন দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার জাহানারা আলম ও রুমানা আহমেদ। দুজনের অভিজ্ঞতা দলকে শক্তিশালী করবে বলে বিশ্বাস জ্যোতির, ‘অভিজ্ঞতা সব সময় কাজে লাগে। তারা দুজনই সর্বশেষ দুটি এশিয়া কাপে খেলেছেন।
রুমানা আপু অনেকদিন পর ফিরলেন, জাহানারা আপুও। দুজনই কিন্তু সর্বশেষ ঘরোয়া টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন। এ দুজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আমার মনে হয় দলে অনেক বড় প্রভাব ফেলবে। আমরা তি ম্যাচগুলোতে দেখেছি, তারা অভিজ্ঞতা কাজে লাগাচ্ছেন। এটা দলের জন্য সুবিধা হবে।’ জাহানারার ফিরে আসা নিয়ে আলাদা করে না বললেই নয়। বয়স তিরিশের কোটায়, অফ-ফর্ম ও অনিয়মের বিতর্ক সঙ্গী করে যখন জাতীয় দল থেকে বাদ পড়লেন, অনেকেই তার শেষ দেখছিলেন। বরাবরই ফিটনেস-ফ্রিক জাহনারা তাদের ভুল প্রমাণ করেছেন।
বাংলাদেশের হয়ে সর্বশেষ খেলেছেন গত বছরের মে মাসে শ্রীলঙ্কা সফরে। এবারের লঙ্কা অভিযান এশিয়া কাপের জন্য। বাইরে থাকার সময়টায় নিজেকে ঘষেমেজে মরচে ছাড়ানোর চেষ্টা করেছেন তিনি একটি ক্রিকেট একাডেমিতে। ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিচিত কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের তত্ত্বাবধানে চেষ্টা করেছেন আরও শাণিত হয়ে উঠতে। বিকেএসপিতে জাতীয় দলের ক্যাম্পেও ছিলেন বেশ সিরিয়াস, ‘দীর্ঘ এই এক বছরের ৯ মাস আমি মাসকো একাডেমিতে অনুশীলন করেছি।
সালাউদ্দিন স্যারসহ ওখানে যারা কোচিং স্টাফ ছিলেন, উনারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন আমার সঙ্গে এবং চেষ্টা করেছেন আমি যেন ভালো পারফরম্যান্স করতে পারি।’ বলছিলেন বরাবরাই ফিটনেস সচেতন জাহানারা। এবারের প্রিমিয়ার লিগে ৯ ম্যাচে ২৫ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন তিরিশোর্ধ এ পেসার। এই পারফরম্যান্স তো বটেই, দলে ফেরায় বড় ভূমিকা রেখেছে তার ফিটনেসও।
৩১ বছর বয়সী পেসারের মতে, সবসময় ফিটনেসকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়াতেই ক্যারিয়ারের নানা পথ মাড়িয়ে এত বছর পরও এতটা তরতাজা ও চনমনে তিনি, ‘আমি সবসময়ই ফিটনেস-ফ্রিক। ৯ বছর বয়স থেকেই খেলাধুল করি, সেটা হ্যান্ডবল, ভলিবল সবাই জানেন এসব আন্তঃস্কুল, আন্তঃজেলা, আন্তঃবিভাগ, তখন থেকেই আসলে শুরু। ২০০৭ সালে যখন ক্রিকেট শুরু করি, তখন থেকে চেষ্টা করেছি যেন ফিটনেস ভালো পর্যায়ে থাকে।’
পূর্ববর্তী পোস্ট