কোহলির দৃঢ় ব্যাটিংয়ে পাকিস্তানকে হারিয়ে দুর্দান্ত জয় পেল ভারত। লক্ষ্য ছিল ১৬০ রান। শেষ বলে ৪ মেরে ১৬০ রান টপকে যায় ভারত। যদিও শুরুতেই চাপে ছিল ভারত। সেখান থেকে দলকে একাই টেনে তুলে পাকিস্তানকে হারালেন বিরাট কোহলি।
শাহিন শাহ আফ্রিদির প্রথম ওভারে ওঠে মাত্র ৫ রান। পরের ওভারে বল হাতে নিয়েই উইকেট তুলে নেন নাসিম শাহ। লোকেশ রাহুল (৪) তার দারুণ এক ডেলিভারিতে ইনসাইডেজ হয়ে বোল্ড।
এর এক ওভার পর হারিস রউফ ফেরান ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে। ডানহাতি এই পেসারের ১৪৫ কিলোমিটারের বলে ব্যাট ছুঁইয়ে স্লিপে ক্যাচ হন তিনি (৪)।
তৃতীয় উইকেট জুটিটাই ছিল ভারতের ভয়ঙ্কর। বিরাট কোহলি এবং সুর্যকুমার যাদব। এই দুই ব্যাটারের ওপর পুরো আস্থা ছিল ভারতীয় সমর্থকদের। কিন্তু মাত্র ১৬ রানের জুটি গড়ার পর পাকিস্তানি পেসের সামনে উইকেট বিলিয়ে দিতে বাধ্য হলেন সুর্যকুমার যাদব। ভেঙে গেলো ভয়ঙ্কর জুটিটি।
ইনিংসের ৬ষ্ঠ ওভারে হারিস রউফের বলটি অফস্ট্যাম্পের ওপর পরে বাউন্স করে এবং ভেতরের দিকে প্রবেশ করে। পেছনে সরে জায়গা করে নিয়ে শট খেলতে চেয়েছিলেন যাদব। কিন্তু ব্যাটের উপরের প্রান্ত চুমু দিয়ে বলটি চলে যাচ্ছিল উইকেটরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে। মোহাম্মদ রিজওয়ান লাফ দিয়ে উঠে ক্যাচটি তালুবন্দী করেন। ১০ বলে ১৫ রান করে বিদায় নিলেন সুর্যকুমার যাদব।
সপ্তম ওভারের প্রথম বলে আবারও বিপদে পড়ে ভারত। এবার রান নিতে গিয়ে আউট হলেন অক্ষর প্যাটেল। শাদাব খানকে মিডউইকেটে ঠেলে দিয়ে একটি রান নিতে চেয়েছিলেন অক্ষর। কিন্তু কোহলি তাকে ফিরিয়ে দিলে ক্রিজে পৌঁছার আগেই বাবর আজমের থ্রো এবং রিজওয়ান ক্ষিপ্র গতিতে স্ট্যাম্প ভেঙে দিলে আউট হয়ে যান তিনি। ৩ বলে ২ রান করে বিদায় নেন অক্ষর।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভারতের সংগ্রহ ৮ ওভারে ৪ উইকেটে ৩৮ রান। ৯ রানে বিরাট কোহলি এবং ৩ রানে ব্যাট করছেন হার্দিক পান্ডিয়া।
এর আগে ভারতীয় বোলারদের তোপের মুখে বিপদে পড়েছিল পাকিস্তান। তবে স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে দুর্দান্ত জোড়া হাফসেঞ্চুরি উপহার দেন ইফতিখার আহমেদ আর শান মাসুদ।
ইফতিখার ঝড় তুলে ফিরলেও শান মাসুদ দায়িত্ব নিয়ে খেলেন একদম শেষ ওভার পর্যন্ত। বিপদ কাটিয়ে ৮ উইকেটে ১৫৯ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি দাঁড় করায় পাকিস্তান।
মেলবোর্ন ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিং করছে পাকিস্তান। শুরু থেকেই তাদের চেপে ধরেন ভুবনেশ্বর-অর্শদীপরা। একের পর এক বল মিস হতে থাকে। বারকয়েক হয় আবেদন।
প্রথম ওভারে পাকিস্তান তুলতে পারে মাত্র ১ রান। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই তারা হারিয়ে বসে অধিনায়ককে। গোল্ডেন ডাক (১ বলে ০) নিয়ে সাজঘরে ফেরেন বাবর।
অর্শদীপ সিংয়ের দুর্দান্ত এক ডেলিভারি বাবরের প্যাডে লাগলে আবেদন হয়, আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। পাকিস্তান দলপতি অবশ্য রিভিউ নিয়েছিলেন। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায়, বল তার লেগ স্টাম্পে আঘাত করতো।
দলীয় ১ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারানোর পর ১৫ রানে দ্বিতীয় উইকেটেরও পতন ঘটে পাকিস্তানের। এবারও সেই অর্শদীপ সিং। ভারতীয় পেসারকে হুক খেলতে গিয়ে ফাইন লেগ বাউন্ডারিতে ভুবনেশ্বরকে ক্যাচ দেন রিজওয়ান (১২ বলে ৪)। পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৩২ রান নিতে পারে পাকিস্তান।
উইকেট টিকিয়ে রেখে দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন শান মাসুদ আর ইফতিখার আহমেদ। ১০ ওভারে পাকিস্তানের বোর্ডে উঠে বল সমান ৬০ রান।
১৫ রানেই সাজঘরে ফিরেছিলেন দুই ব্যাটিং স্তম্ভ বাবর আজম আর মোহাম্মদ রিজওয়ান। স্বাভাবিকভাবেই খাদের কিনারায় ছিল পাকিস্তান। সেখান থেকে উইকেট টেকানোর চেষ্টা করেন ইফতিখার আহমেদ আর শান মাসুদ।
তাড়াহুড়ো করেননি তারা। দলকে এগিয়ে নিয়েছেন একটু একটু করে। তবে ১২তম ওভারে এসে হঠাৎ যেন খেপে যান ইফতিখার। অক্ষর প্যাটেল বল হাতে নিয়েই পড়েন ডানহাতি এই ব্যাটারের রুদ্ররূপের সামনে।
অক্ষরের প্রথম চার বলের মধ্যে তিনটি ছক্কা হাঁকান ইফতিখার। ২১ রান তোলা ওই ওভারেই তিনি তুলে নেন ৩২ বলে ফিফটি। তবে তার ঠিক পরের ওভারেই ভয়ংকর এই ব্যাটারকে ফিরিয়ে দেন মোহাম্মদ শামি।
মাসুদ আর ইফতিখারের ৫০ বলে ৭৬ রানের তৃতীয় উইকেট জুটিটি শেষ পর্যন্ত ভাঙেন মোহাম্মদ শামি এলবিডব্লিউয়ে। ফিফটি করেই আউট হয়ে যান ইফতিখার। ৩৪ বলে গড়া তার ৫১ রানের ইনিংসে ছিল ২টি চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কা।
ইফতিখার ফেরার পর দ্রুত আরও কয়েকটি হারিয়ে বসে পাকিস্তান। শাদাব খান (৫), হায়দার আলি (২), মোহাম্মদ নওয়াজ (৯) আর আসিফ আলি (২) ফেরেন তাড়াহুড়ো করে। ২৯ রান তুলতেই ৫টি উইকেট হারিয়ে ফের চাপে পড়ে পাকিস্তান।
শেষদিকে লোয়ার অর্ডারের শাহিন শাহ আফ্রিদি ৮ বলে একটি করে চার-ছক্কায় ১৬ আর হারিস রউফ ৪ বলে ১ ছক্কায় করেন ৬। শান মাসুদ ৪২ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ৫২ রানে অপরাজিত থাকেন।
ভারতীয় বোলারদের মধ্যে ৩টি করে উইকেট নেন হার্দিক পান্ডিয়া আর অর্শদীপ সিং।