কোনো সাংবাদিক তার নিউজের তথ্যের সোর্স (উৎস) কারও কাছে প্রকাশ করতে বাধ্য নয় বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি সাংবাদিকদের সাংবিধানিকভাবে এবং আইনত দুর্নীতি ও দুর্নীতিকারীদের বিরুদ্ধে জনস্বার্থে সংবাদ পরিবেশনেও কোনো বাধা দেওয়া যাবে না।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইজারুল হক আকন্দ সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ৫১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে এই পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে। গত ২১ জুন হাইকোর্টের এই বেঞ্চ রাষ্ট্র বনাম দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক মামলায় এই রায় দেন। বিচারপতিদের স্বার্থরক্ষার শেষে আজ রোববার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
গত ২ মার্চ ‘২০ কোটিতে প্রকৌশলী আশরাফুলের দায়মুক্তি’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে ওই প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে আবেদন করে দুদক। এক পর্যায়ে হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারির পাশাপাশি প্রতিবেদনে উল্লেখিত প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ফের অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় পরে সংশ্লিষ্ট মামলার রায়ের লিখিত কপি প্রকাশিত হয়।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, সার্বিক দিক বিবেচনায় আমাদের মতামত হলো, সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকরা সাংবিধানিকভাবে এবং আইনত দুর্নীতি ও দুর্নীতিকারীদের বিরুদ্ধে জনস্বার্থে সংবাদ পরিবেশন করতে পারবেন। এই মামলার শুনানি পর্যালোচনা করে এটাই প্রতীয়মান যে, কোনো সাংবাদিক তার নিউজের তথ্যের সোর্স কারও কাছে প্রকাশ করতে বাধ্য নন। সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে দেওয়া আছে। গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। এটা গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
রায়ে হাইকোর্ট আরও বলেন, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন রক্ষায় সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আধুনিক বিশ্বে জানার অধিকার সকলেরই আছে। গণমাধ্যমের কাজ হলো জগণকে সজাগ করা। বর্তমান সময়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ছে। আর এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তবে হলুদ সাংবাদিকতা গ্রহণযোগ্য ও সমর্থনযোগ্য নয় উল্লেখ করে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, সমাজের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে গণমাধ্যমের মনোযোগী হওয়া উচিৎ। জনস্বার্থে সাংবাদিকেরা দুর্নীতি, অর্থপাচারসহ অনিয়মের বিরুদ্ধে। সংবাদ প্রকাশে আইন তাদের সুরক্ষা দিয়েছে।
আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।