ঢাকা: হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকের মুক্তির জন্য গোপন স্বাক্ষর অভিযান শুরু করেছে একটি গোষ্ঠী। সারাদেশে গোপনে বিভিন্ন মানুষ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে সই নিচ্ছে তারা। সম্প্রতি ওই গোষ্ঠীকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় কয়েকজনের কাছ থেকে সই নিতে দেখা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে মাঠে তৎপর রয়েছে বলেও জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাঠে কর্মরত একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক সদস্য জানান, মামুনুল হকের মুক্তির জন্য গোপনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের কাছ থেকে বিশেষ করে স্কুল, মাদরাসা এবং বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে স্বাক্ষর নিচ্ছে একটি গোষ্ঠী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের প্রধান উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘তথ্যটি আমাদের জানা নেই। তবে আমরা হেফাজতসহ সব অপশক্তির ওপর কড়া নজর রাখছি। আমরা শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য এবং বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে মাঠে তৎপর রয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মামুনুল হক জেলখানায় বন্দি রয়েছেন। তার পক্ষের লোকজন জামিনের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে পারে। সেটি তাদের পলিটিক্যাল স্ট্যান্ড। আদালত মামলার ধারা দেখে জামিন দিয়ে থাকেন। জামিনের জন্য আদলতে স্বাক্ষর গ্রহণযোগ্য কি না আমার জানা নেই। যাই হোক আমরা সার্বিক বিষয়ে নজর রাখছি।’
তবে বিষয়টি নিয়ে হেফাজত ইসলামের নেতা মীর ইদ্রিসসহ কয়েকজনকে মোবাইল ফোনে কল করা হলে তাদের নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল মামুনুল হক সোনারগাঁওয়ের একটি রিসোর্টে এক নারীসহ অবকাশ যাপন করছিলেন। এ খবর পেয়ে স্থানীয় কিছু লোকজন এবং ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাকে অবরুদ্ধ করে রেখে লাঞ্ছিত করে। পরে প্রশাসনকে খবর দেওয়া হয়। এ সময় মামুনুল ওই নারীর নাম আমিনা তৈয়বা উল্লেখ করে তাকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে দাবি করেন। তবে সেই নারী জিজ্ঞাসাবাদে নিজের নাম জান্নাত আরা বলে পরিচয় দেন।
এক পর্যায়ে মামুনুলকে রিসোর্টে জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন মাদরাসা থেকে হেফাজতের কর্মীরা সেখানে জড়ো হয়ে ওই রিসোর্টে ভাংচুর চালিয়ে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে সেই রিসোর্টে এবং পার্শ্ববর্তী মহাসড়কসহ বিভিন্ন জায়গায় হেফাজত কর্মীরা বিক্ষোভ, ভাংচুর চালায়। ওই সময় মামুনুল হক দাবি করেন, জিজ্ঞাসাবাদের নামে কিছু লোক তাকে ও তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে হেনস্তা করেছেন। এই ঘটনায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রিসোর্টে যাকে মামুনুল আমিনা তৈয়বা এবং দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে দাবি করেন, সেই আমিনা তৈয়বা মূলত তার প্রথম স্ত্রীর নাম। আর ওই নারীর প্রকৃত নাম জান্নাত আরা ঝর্ণা। তিনি আমিনার (প্রথম স্ত্রী) নামেই রিসোর্টে সেদিন কক্ষ বুকিং দিয়েছিলেন।
পরে মামুনুল হক ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাসে জানান, তাদের মধ্যে একটি মানবিক বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। তিনি সেখানে দাবি করেন হাফেজ শহিদুল ইসলাম তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। শহিদুল ও তার স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদের পরে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি ওই নারীকে বিবাহ করেছেন।
এর পর মামুনুলের পরিবারের বিভিন্ন সদস্য ও তার সহযোগীদের একাধিক ফোনালাপ ফাঁস হয়। মামুনুল হক ৩ এপ্রিল তার সংগঠনের কর্মীদের সাহায্যে রিসোর্ট থেকে বের হয়ে কল করেন তার প্রথম স্ত্রী আমিনা তৈয়বকে। সেই ফোন কলে তিনি ওই নারীকে জনৈক শহীদুল ইসলামের স্ত্রী বলে উল্লেখ করেন। পরিস্থিতির কারণে তাকে দ্বিতীয় স্ত্রী বলতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান মামুনুল হক।
মামুনুল হকের কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীর বড় পুত্রর একটি ভিডিও ৫ এপ্রিল ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সেখানে সে মামুনুলের পরকীয়াজনিত কারণে তাদের জন্মদাতা পিতা-মাতার মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটেছে বলে দাবি করে। সেইসঙ্গে রিসোর্টঘটিত ঘটনার জন্য তাদের দুই ভাইয়ের মানসিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে। ১০ এপ্রিল সে তার ও তার মায়ের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম