Home » বাংলা সিনেমার হারিয়ে যাওয়া নায়িকা

বাংলা সিনেমার হারিয়ে যাওয়া নায়িকা

0 মন্তব্য 425 ভিউজ

এলাম, দেখলাম, জয় করলাম। উক্তিটি মোটামুটি সবারই জানা৷

এমন অনেক মানুষই আছেন যারা অল্প সময়ে নিজেদের দীর্ঘমেয়াদি ছাপ ফেলতে সক্ষম হয়েছেন। ক্ষণজন্মা কিংবা খুব অল্প কাজ দিয়ে সবার মনে জায়গা করে নিয়ে, তারপর নিজেকে লুকিয়ে ফেলেছেন। বাংলা চলচ্চিত্রেও এমন কিছু নায়িকার আবির্ভাব হয়েছিল, যারা কালের স্রোতে হারিয়ে গেলেও তাদের সাময়িক পর্দার উপস্থিতি এখনো দর্শকমনে সজীব জায়গা ধরে রেখেছে। হঠাৎ আলোর ঝলকানি দিয়ে ধ্রুবতারা হয়ে ওঠা ঢালিউডের এসব নায়িকার কথা এখনো মনে করেন চলচ্চিত্রপ্রেমীরা।

নিজেকে লোকচক্ষুর অন্তরালে রাখলেও আজও মানুষের অন্তরে বাস করা একজন নায়িকা হলেন ‘হৃদয়ের আয়না’ সিনেমার নায়িকা জেবা। ১৯৯৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হৃদয়ের আয়না’ সিনেমাটির কথা হয়তো অনেকেরই মনে আছে। সিনেমাটিতে তখনকার হিট নায়ক রিয়াজের বিপরীতে অভিনয় করেন নবাগত জেবা। মিষ্টি প্রেমের এ ছবিতে ‘হৃদয়’ চরিত্রে রিয়াজ এবং ‘আয়না’ চরিত্রে অভিনয় করে বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন জেবা। ওই এক সিনেমা করেই হারিয়ে যান এই সম্ভাবনাময়ী নায়িকা। আর কখনোই তাকে পর্দায় দেখা যায়নি।

নায়ক রিয়াজের ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ধরা হয় ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’ সিনেমাটিকে। ১৯৯৭ সালে মহম্মদ হান্নান পরিচালিত ব্লকবাস্টার সিনেমা ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’তে রিয়াজের বিপরীতে অভিনয় করে নজর কেড়েছিলেন নবাগত রাভিনা। পরবর্তী সময়ে রিয়াজের সঙ্গে আরও একটি সিনেমায় তিনি অভিনয় করলেও সেটি ফ্লপ হয়। এরপর আর অভিনয়ে দেখা মেলেনি রাভিনার। এই নায়িকা কোথায় আছেন, কেমন আছেন তা-ও অজানা।

এবার বলি বাংলা চলচ্চিত্রের আরেক সম্ভাবনাময় নায়িকার কথা। প্রথম সিনেমায় তার অতুলনীয় অভিনয় পৌঁছে দিয়েছিল বাংলার কোটি দর্শকের হৃদয়ে। বলছি নায়িকা শিমলার কথা। যিনি অভিষেক সিনেমায় ‘ফুলি’ এবং ‘শিমলা’ নামের দুটি চরিত্রে অভিনয় করে জিতে নিয়েছিলেন ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’। পরিচালক শহিদুল ইসলাম খোকনের ১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ওই সিনেমায় শিমলার অভিনয় দেখে অনেক চলচ্চিত্র বোদ্ধাই তাকে নিয়ে নানা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আর আলো ছড়াতে পারেননি এ নায়িকা। বরং ছড়িয়েছেন সমালোচনা।

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে শিশুশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্র জগতে এসেছিলেন অন্তরা। ঐতিহাসিক ঘটনার ওপর নির্মিত ‘সিরাজউদ্দৌলা’ ছবিতে প্রবীর মিত্রের মেয়ের ভূমিকায় প্রথম অভিনয় করেন তিনি। বড় হয়ে ‘পাগল মন’ ছবিতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেও ব্যাপক আলোচনায় আসেন অন্তরা। এরপর তিনি আরও বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন। ২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে হঠাৎ তার মৃত্যু হয়। তবে অন্তরাকে হত্যা করা হয় বলে দাবি করে তার পরিবার। চোখের আড়াল হলেও মনের আড়াল হননি অন্তরা। আজও তিনি রয়ে গেছেন বহু দর্শকের অন্তরে।

১৯৯৫ সালে আফজাল হোসেনের নির্দেশনায় একটি বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে কাজ করার মধ্য দিয়ে মিডিয়ায় অভিষেক ঘটে চিত্রনায়িকা তামান্নার। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র সাইফুল আজম কাশেম পরিচালিত ‘ত্যাজ্যপুত্র’। এতে তার নায়ক ছিলেন বাপ্পারাজ। প্রথম ছবিতেই নজর কেড়েছিল তার অভিনয়। এরপর শহিদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘ভণ্ড’ সিনেমায় কুংফু হিরো রুবেলের বিপরীতে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান তামান্না। তার অভিনীত শেষ সিনেমা ২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘পাগল তোর জন্য রে’। এরপর হঠাৎই দেশ ছেড়ে, অভিনয় ছেড়ে সুইডেনে পাড়ি জমান নায়িকা। স্বামী নিয়ে স্থায়ীভাবে সেখানেই বসবাস করছেন।

২০০২ সালে ক্লাস সেভেনে পড়া অবস্থায় ‘কেন ভালোবাসলাম’ সিনেমার মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে নাম লেখান রত্না। নায়ক ছিলেন ফেরদৌস। একই বছর কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘ইতিহাস’ ছবিতে কাজী মারুফের বিপরীতে অভিনয় করে সবার নজরে আসেন এই নায়িকা। প্রায় ৫০টির মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। ২০১৫ সালে হঠাৎই ধস নামে রত্নার ক্যারিয়ারে। সেই ধসেই হারিয়ে যান সম্ভাবনাময় এই নায়িকা।

অভিনয় দিয়ে একসময় বেশ সাড়া ফেলেছিলেন চিত্রনায়িকা একা। নামি পরিচালক কাজী হায়াতের ‘তেজী’ এবং ‘ধর’সহ বেশ কয়েকটি ছবিতে নায়ক মান্নার বিপরীতে তাকে দেখা গিয়েছিল। সে সময় এ জুটিকে বেশ গ্রহণ করেছিল দর্শক। কিন্তু নায়ক মান্না মারা যাওয়ার পর একাধিক নায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধেও অভিনয় করলেও নিজেকে আর মেলে ধরতে পারেননি একা। দীর্ঘদিন তিনি অভিনয় থেকে দূরে। ছোট-বড় কোনো পর্দাতেই তার দেখা নেই।

অভিনেত্রী ইরিন জামান অভিনয় জগতে আসেন ১৯৯৯ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘অনন্ত ভালোবাসা’ ছবির মাধ্যমে। নায়ক ছিলেন বর্তমান সুপারস্টার শাকিব খান। দুজনেরই প্রথম ছবি ছিল এটি। ওই ছবিতেই যা একটু নজর কেড়েছিলেন চিত্রনায়িকা মৌসুমীর ছোট বোন ইরিন জামান। এরপর বেশ কয়েকটি ছবিতে তাকে দেখা গেলেও সফলতা পাননি। প্রথম ছবির নায়ক শাকিব চলচ্চিত্রে রাজ করলেও হারিয়ে গেছেন ইরিন। স্বামী-সন্তান নিয়ে বর্তমানে তিনি বাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায়।

এক বা একাধিক সিনেমা দিয়ে পর্দায় আসা এসব নায়িকা সময়ের সঙ্গে নিজেদের আড়াল করে নিলেও কারো কারো কাজ আজও বাংলা সিনেমার দর্শকের মনে করিয়ে দেয় তার প্রিয় মুখকে।

আরও পড়ুন

মতামত দিন


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.

আমাদের সম্পর্কে

We’re a media company. We promise to tell you what’s new in the parts of modern life that matter. Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo. Sed consequat, leo eget bibendum Aa, augue velit.