সুইজারল্যান্ডের পাশাপাশি এখন বিশ্বের অন্য দেশগুলোতেও অর্থ পাচারের তথ্য জানার বিষয়ে মনোযোগ দিচ্ছে সরকার। এ জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কারিগরি সহযোগিতার পাশাপাশি কূটনৈতিক প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী বাংলাদেশ। যে দেশগুলোতে বেশি অর্থ পাচার হয় বলে সন্দেহ করা হয়, সে দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক আইনি সহায়তা (এমএলএটি) চুক্তি সইয়ের বিষয়টি সরকার খতিয়ে দেখতে চায়।
চলতি সপ্তাহে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক আন্তমন্ত্রণালয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সুইজারল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশে পাচার করা অর্থের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট তথ্য যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংগ্রহের বিষয়ে বৈঠকটি হয়।
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়, অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর, সংশ্লিষ্ট অফিস, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, ব্যাংক, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা অংশ নেন।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ সুইস ব্যাংক থেকে মোট জামানতের একটি সংখ্যা পেয়ে থাকে। কিন্তু অন্যান্য দেশেও অর্থ পাচার হয় বলে অভিযোগ আছে। ওই সব দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহে জটিলতা রয়েছে
কোন কোন দেশে টাকা পাচারের অভিযোগ আছে, জানতে চাইলে এক কর্মকর্তা বলেন, আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, হংকং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশের নাম এসেছে। এই দেশগুলো থেকেও তথ্য সংগ্রহের উপায় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।কোন প্রক্রিয়ায় তথ্য সংগ্রহ করা যায়, সেটি খুঁজে বের করার বিষয়ে কাজ করা হবে বলে জানান তিনি।
মুদ্রা পাচারের তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতার প্রসঙ্গ টেনে এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, এগমন্ট গ্রুপের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তথ্য পেয়ে থাকে। কিন্তু তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে বিধি অনুযায়ী নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। ব্যক্তিগত সুরক্ষার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় বলে আমানতকারীর তথ্য অন্যকে জানানোর ক্ষেত্রে কিছু আইনি বাধা রয়েছে।
এই জটিলতা দূর করার জন্য পৃথক একটি কূটনৈতিক প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার করা সম্ভব কি না, সেটি যাচাই করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, যদি পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তি থাকে, তবে তথ্য পাওয়া সহজ হয়। এমনকি আদালতে এসব প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা সম্ভব।
প্রসঙ্গত, অর্থ পাচার, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন ও এ–সংক্রান্ত নানা অপরাধ প্রতিরোধে এগমন্ট গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করা হয়। দেড় শর বেশি দেশ এই সংস্থার সদস্য। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এতে যুক্ত হয়েছে। কারিগরি পর্যায়ে বিভিন্ন দেশের স্বাধীন সংস্থা ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করে। এগমন্ট গ্রুপের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য অন্য কাউকে জানানোর ক্ষেত্রে আইনি বাধা রয়েছে এবং এ তথ্য আদালতে উপস্থাপনের যোগ্য নয়। যে ব্যক্তির সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হচ্ছে তাঁর নাম, যে ব্যাংকে অর্থ গচ্ছিত আছে সেটির নাম, হিসাব নম্বর ও ওই অর্থ অবৈধ উপায়ে অর্জিত হয়েছে, সেটির প্রাথমিক প্রমাণসহ আবেদন করতে হয়। তবে অনুরোধ বিবেচনায় নেওয়া বা অগ্রাহ্য করে তথ্য না দেওয়া একটি দেশের নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়।
এ বিষয়ে কাজ করছেন, এমন একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘ধরা যাক, এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ উপস্থাপন করা হলো। ওই অভিযোগ যদি অর্থ পাচার হওয়া দেশে অপরাধ বিবেচিত না হয়, তবে তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তা ছাড়া তারা বিস্তারিত তথ্য দেয় না। একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন দেবে। ওই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে বাড়তি তদন্ত করতে হবে।’
অর্থ পাচারের তথ্য জানার জন্য পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরে এক কর্মকর্তা বলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের সরকার কূটনৈতিকভাবে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে এবং এটি সব জায়গায় ব্যবহারও করা যায়।