রাশিয়ার জ্বালানি সম্পদের ওপর যেসব দেশ মূল্যসীমা বেঁধে দেবে তাদের কাছে তেল বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন।
মূল্যসীমা বেঁধে দেওয়ার এ পদক্ষেপ বিশ্বের তেলের বাজারকে উল্লেখযোগ্যভাবে অস্থিতিশীল করে তুলবে বলে মন্তব্য করেছে মস্কো।
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “যেসব কোম্পানি মূল্যসীমা আরোপ করবে তারা আর রাশিয়ার তেল পাবে না। বাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন নীতিতে আমরা তাদের সঙ্গে আর সহযোগিতা করবো না।”
এর আগে রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেকসান্দর নোভাকও এমন মন্তব্য করেছিলেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার নোভাক সাংবাদিকদের বলেন, “যারা বিধি-নিষেধ আরোপ করবে আমরা সেসব কোম্পানি অথবা দেশগুলোর কাছে তেল এবং পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেব।”
বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি আর ইউক্রেইনে যুদ্ধে রাশিয়ার লাগাম টেনে ধরতে রাশিয়ার তেলের দাম বেঁধে দিতে একাট্টা হয়েছে পশ্চিমা বড় অর্থনীতির দেশগুলো।
শুক্রবার জি- ৭ জোটের অর্থমন্ত্রীরা জানিয়েছেন, নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি ‘বিনিময় মূল্যের’ চুক্তির ওপর তারা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন।
সাগরপথে রাশিয়ার পেট্রোল এবং অপরিশোধিত তেল পরিবহনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এমন চুক্তি রয়েছে। এর ফলে বিমা কমার পাশাপাশি তেলের চালানে অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
শক্তিশালী অর্থনীতির জি-৭ জোটের দেশগুলো হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি ও যুক্তরাজ্য।
যৌথ একটি বিবৃতিতে জোটের অর্থমন্ত্রীরা জানিয়েছেন, তেলের সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করবে দেশগুলোর বড় একটি জোট। যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরবর্তী নিষেধাজ্ঞাগুলোর সঙ্গে কার্যকর হবে।
তেল রপ্তানি থেকে রাশিয়ার আয় হ্রাস করাই এসব পদক্ষেপের লক্ষ্য। রাশিয়ার তেলের মূল্যসীমা বেঁধে দিতে গত কয়েক মাস ধরে জি-৭ জোটের দেশগুলোকে চাপ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। পশ্চিমা দেশগুলো ইতোমধ্যে রাশিয়ার বেশ কিছু জ্বালানি পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
এর আগে চলতি বছর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাশিয়ার তেল ক্রয়ের ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এ নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি কার্যকর হলে রাশিয়ার তেল রপ্তানি ৯০ শতাংশ হ্রাস পাবে বলে ধারণা ইইউয়ের।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডার লায়েন শুক্রবার বলেছেন, ইইউয়ের জন্য এখন সময় রাশিয়ার গ্যাস আমদানির ওপরও এ ধরনের মূল্যসীমা বেঁধে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা।
অপরদিকে পেসকভ বলেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপের মূল্য ইউরোপের নাগরিকদেরই চুকাতে হচ্ছে।
তিনি জানান, রাশিয়ার তেল রপ্তানিতে মূল্যসীমা বেঁধে দেওয়ায় তাদের অর্থনীতিতে সম্ভাব্য কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে তা পর্যালোচনা করে দেখছেন তারা।
আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেইনে রাশিয়ার কথিত ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু হওয়ার আগে দেশটির প্রায় অর্ধেক অপরিশোধিত তেল ও পেট্রলিয়াম পণ্য ইউরোপে রপ্তানি হতো। জার্মানি, পোল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস ছিল রাশিয়ার জ্বালানির সবচেয়ে বড় ক্রেতা।