এনবিএর ‘বেস্ট অব ফাইভ’, ‘বেস্ট অব সেভেন’ সিরিজের কথা হয়তো শুনেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এই বাস্কেটবল লিগের শিরোপা নির্ধারণ হয় কখনো ৫ ম্যাচের সিরিজে, কখনো ৭ ম্যাচের সিরিজে। এবারের এশিয়া কাপকেও বলা হচ্ছে ভারত-পাকিস্তানের ‘বেস্ট অব থ্রি’ সিরিজ। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল সূচিটাই এমনভাবে করেছে, যেন দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপ পর্বের পর সুপার ফোরেও মুখোমুখি হয়। এরপর দুই দলের ভাগ্য ভালো থাকলে আবার দেখা হতে পারে ফাইনালেও। সব মিলিয়ে এবারের এশিয়া কাপটাই যেন হয়ে উঠেছে ভারত-পাকিস্তান তিন ম্যাচের দ্বিপাক্ষিক সিরিজ।
কথাটা এত দিন সংযুক্ত আরব আমিরাতে এশিয়া কাপ কাভার করতে আসা ভারত, পাকিস্তানের সাংবাদিকদের আড্ডায় ঘুরেফিরে এসেছে। বাংলাদেশ এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে পড়ায় বাংলাদেশি সাংবাদিকদেরও মূল আকর্ষণ এখন এই দুই দলের লড়াই। টুর্নামেন্টের এই পাক-ভারত ফাইনালের আলাপটা পাকিস্তানের ড্রেসিংরুমেও ঢুকে গেছে।
হংকংকে মাত্র ৩৮ রানে অলআউট করে ১৫৫ রানের বিশাল জয়ের পর পাকিস্তান দলের সহ-অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ানও বলেছেন, ‘আমরাও বেস্ট অব থ্রি নিয়ে মজা করছিলাম। হিসাব করছিলাম, কীভাবে দুই দলের আবার ফাইনালে দেখা হতে পারে।’
ফাইনালের আগে আজ দুই দলই সুপার ফোরে তাদের প্রথম ম্যাচ খেলবে। গত ২৮ আগস্টের পর দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম আবার আরও একটি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের মঞ্চ। সর্বশেষ দেখায় শেষ ওভারে গড়ানো ম্যাচে জিতেছিল ভারত। টি-টোয়েন্টিতে দুই দলের দেখা হয়েছে মাত্র ১০ বার, ৮টিতেই ভারত জিতেছে। এই যে একই টুর্নামেন্টে এতবার ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ হচ্ছে, এতে এসিসির ভালোই লাভ হচ্ছে। কাল এক পাকিস্তানি সাংবাদিক বলছিলেন, ‘এসিসি তো ফুলেফেঁপে উঠবে। এই ম্যাচের পর যদি ফাইনালও হয়, তাহলে তো কথাই নেই।’
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে আগ্রহ কেমন, সেটা কাল আইসিসি একাডেমিতে সাংবাদিকদের ভিড় দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। আগের দিন হংকংয়ের বিপক্ষে জয়ের পর কাল পাকিস্তান দলের কোনো অনুশীলন ছিল না। কিন্তু ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলন করতে দলের মিডিয়া ম্যানেজারের সঙ্গে মাঠে আসতে হয় পাকিস্তানি পেসার হারিফ রউফকে। সংবাদ সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের ভিড় দেখে পাকিস্তান দলের মিডিয়া ম্যানেজারও বললেন, ‘আজ সংবাদ সম্মেলন একটু লম্বা হোক। সমস্যা নেই।’ ভিড়টা আরও বেড়েছে পরে ভারতীয় কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের সংবাদ সম্মেলনে।
এমনিতে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আগে যে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব থাকত, সেটা এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। দুই দলের ক্রিকেটাররা একে–অন্যের সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করেন, একজন আরেকজনকে জার্সি উপহার দেন, সংবাদ সম্মেলনে প্রশংসায় ভাসান। বিরাট কোহলি মাঠে এসে আফ্রিদির চোটের খোঁজ নিচ্ছেন, হারিসকে নিজের জার্সি উপহার দিচ্ছেন। বাবর আজমকে নিয়ে রোহিত শর্মা খুনসুটি করছেন। একসঙ্গে দুজন সেলফি তুলছেন। বাগ্যুদ্ধও নেই বললেই চলে।
অবশ্য মাঠের বাইরের এই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ মাঠের খেলায় প্রভাব ফেলে না বলেই দাবি হারিস রউফের। বিরাট কোহলির কাছ থেকে জার্সি পেয়ে পাকিস্তানি পেসার বলেছেন, ‘খেলাটাকে আমরা খেলা হিসেবেই নিই। তিনি (কোহলি) নিজ দেশের হয়ে যেভাবে পারফর্ম করেছেন, এখন তো কিংবদন্তির কাতারে। আপনি তাঁর সঙ্গে কথা বলে অনেক কিছু শিখতে পারবেন। তিনি আমাকে শার্ট দিয়েছেন, কথা বলেছেন। আমি খুব সম্মানিত বোধ করছি।’
দুই দলের সমস্যাও একই—চোট। হাঁটুর চোটে পড়ে ভারতের রবীন্দ্র জাদেজা এশিয়া কাপ থেকে তো বটেই, বিশ্বকাপ থেকেও ছিটকে পড়েছেন। সুস্থ হতে তাঁকে যেতে হবে অস্ত্রোপচারের টেবিলে। তাঁর জায়গায় সুযোগ পেতে পারেন অক্ষর প্যাটেল। ওদিকে এশিয়া কাপের আগে থেকেই একের পর এক চোটের সমস্যায় ভুগছে পাকিস্তান। শাহিন শাহ আফ্রিদি থেকে শুরু।
এরপর চোটের কারণে ছিটকে পড়েন মোহাম্মদ ওয়াসিম। তালিকায় সর্বশেষ সংযুক্তি শাহনেওয়াজ দাহানি। আপাতত পেসার বলতে আছেন হারিস রউফ, নাসিম শাহ ও হাসান আলী। তবে দারুণ ছন্দে থাকা সূর্যকুমার যাদব, হার্দিক পান্ডিয়াদের সামনে এই বোলিং আক্রমণেই আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছে পাকিস্তানকে।