এখন পর্যন্ত ব্যতিক্রম বলতে শুধু একটিই। আগের দিন নিয়মরক্ষার ম্যাচে টস হারা ভারতই শুধু আগে ব্যাটিং করে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিতেছিল। না হলে দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এবারের এশিয়া কাপে রান তাড়া করা দলের হারার ঘটনা নেই আর একটিও। শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দাশুন শানাকাও তা-ই করলেন।
এই আসরেই যেখানে দুবাইয়ের মাঠে সর্বোচ্চ রান তাড়ার নতুন রেকর্ড গড়েছে লঙ্কানরা, সেখানে প্রতিপক্ষের ১২০-এর আশপাশে থাকা সংগ্রহ তো নস্যি! আগামীকালের ফাইনালের আগে এর মহড়ায় পাকিস্তান ১২২ রানের লক্ষ্য দিতে না দিতেই ম্যাচের নিয়তিও নির্ধারিত হয়ে যায়। লঙ্কানদের ফাইনালের প্রস্তুতি সেরে নেওয়া জয়টি ধরা দেয় ৩ ওভার বাকি থাকতেই। ৫ উইকেটের অনায়াস জয়ে তাই ক্রিকেট ক্যানভাসে অপ্রতিরোধ্য শ্রীলঙ্কার ছবিও আঁকা হলো আরেকবার।
আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে আফগানিস্তানই শুধু তাদের প্রতিরোধ করতে পেরেছিল। সেই ম্যাচে লঙ্কানদের বিধ্বস্ত হওয়া যেন এখন কোনো সুদূরের ঘটনা! এরপর থেকেই জয়ের সচল চাকায় পিষ্ট বাংলাদেশ থেকে শুরু করে আফগানিস্তান, ভারত এবং সবার শেষে পাকিস্তানও। টানা চতুর্থ জয়ে বাবর আজমদের বিপক্ষে ফাইনালের আগে আত্মবিশ্বাস আরো বাড়িয়েই নিলেন শানাকারা। অবশ্য অল্প পুঁজি নিয়েও লড়াইয়ের অদম্য মানসিকতা শারজায় দেখিয়েছিল আফগানিস্তান। পাকিস্তানের ঘাম ছুটিয়ে ছেড়েছিল তারা। সেই একই ছবি এবার দুবাইতেও দেখা যায় কি না, রান তাড়ার শুরুতে সেই সম্ভাবনার ঝিলিক ছিল পাকিস্তানের বোলিংয়েও।
ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই মোহাম্মদ হাসনাইন তুলে নেন আগের তিন ম্যাচে দুই ফিফটি করা কুশল মেন্ডিসকে। অবশ্য বলা ভালো যে এই লঙ্কান ওপেনারকে সাজঘরের পথ দেখিয়েছেন আসলে মোহাম্মদ রিজওয়ান। নিজের বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে প্রথম স্লিপের জায়গা থেকে বল গ্লাভসবন্দি করেন এই উইকেটরক্ষক। পরের ওভারে কুশলের মতো দানুশকা গুনাতিলকেও ফেরেন শূন্য হাতে। এই শিকারটি ধরেন হারিস রউফ। ২ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে বসা লঙ্কানরা তখন বিপদে। বিপদ ঘনীভূত হয় দলকে ২৯ রানে রেখে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার বিদায়েও।
তবে লঙ্কানদের জয় নিয়ে অনিশ্চয়তা বলতে ওই পর্যন্তই। এরপর পাথুম নিশাঙ্কার সঙ্গে জমে গেলেন ভানুকা রাজাপক্ষে (১৯ বলে ২৪)। পরেরজন এই আসরে শেষ দুটি ম্যাচে লঙ্কানদের জয়ের অন্যতম নায়ক। ওপেনার নিশাঙ্কার সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে তাঁর ৩৯ বলে ৫১ রানের জুটিতে ম্যাচ থেকে অনেকটাই ছিটকে যায় পাকিস্তান। এই জুটি ভাঙলেও দাঁড়িয়ে যায় আরেকটি। এবার গত দুই ম্যাচে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে আনা শানাকা (১৬ বলে ২১) আউট হওয়ার আগে ৩০ বলে ৩৩ রানের আরেকটি জুটি গড়ে যান নিশাঙ্কার সঙ্গে। জয় থেকে তখন মাত্র ৯ রান দূরে লঙ্কানরা। হার না মানা ফিফটিতে বাকি কাজ সারা নিশাঙ্কার (৪৮ বলে ৫ চার ও ১ ছয়ে ৫৫*) সঙ্গী ওয়ানিন্দু হাশারাঙ্গাও শেষ বেলায় ব্যাট হাতে জয়ে রেখেছেন ছাপ।
জয় নিশ্চিত করা বাউন্ডারিটা তাঁর ব্যাটেই। হাসনাইনের টানা তিন বলে দুই বাউন্ডারি আর একটি ডাবলে ১০ রান নিয়ে ম্যাচ শেষ করে দেওয়া এই লেগস্পিনিং অলরাউন্ডার এর আগে বোলিংয়েও শেষ করেছেন পাকিস্তানকে। ফিল্ডিংয়েও কি নয়? ২১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হওয়া হাশারাঙ্গা তো দুটি ক্যাচ নেওয়ার পাশাপাশি করেছেন একটি রানআউটও!