‘আপনারাই তো বলেন যে, রাতে ভোট হয়, সকালে ভোট হয়, দুপুরে ভোট হয়, সেহরি খায়, ইফতারি খায়। আপনারা কী চান আবারও ব্যালটে ভোটের মাধ্যমে সেই সেহরি, ইফতারি খাক?’ গতকাল রবিবার আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে এমন কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। তিনি বলেন. ‘যেখানে ইভিএম হয়েছে, সেখানে কোনো মারামারি, রক্তপাত হয়নি, কোনো কারচুপি হয়নি এবং একটি নির্বাচন নিয়েও কোনো অভিযোগ আসেনি, চ্যালেঞ্জ করা হয়নি। তাই সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আমরা ইভিএম নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা আমাদের সিদ্ধান্ত-১৫০ আসনে যদি নির্বিঘ্নে ভোট নিতে পারি, বাকি ১৫০ আসনে ব্যালটে হলে যেন প্রয়োজনীয় ফোর্স মোতায়েন করতে পারি, সেভাবেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
ইভিএম নিয়ে যেসব সংশয়ের কথা বিরোধীরা তুলে ধরছেন, সেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই বলে মনে করেন মো. আলমগীর। তিনি বলেন, ভোটার তালিকার সঙ্গে ইভিএমে ফটোও দেখা যায়। কাজেই কারও আঙুলের ছাপ না মিললেও এক জনের ভোট অন্য জন দেওয়ার সুযোগ নেই। কারও আঙুলের ছাপ না মিললে সেই ফটো মিলিয়ে দেখা হয়। সব দিক থেকেই আমরা নিশ্চিত হয়েছি ইভিএমে কারচুপি করা যায় না।
ইভিএমে পেপার ট্রেইল না থাকার যে বিষয়টি বিরোধীরা তুলে ধরছেন, তার জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমরা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও কথা বলেছি। তারা আমাদের বলেছেন, এই মুহূর্তে এটা সংযোজন করা সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তি দেখিয়েছে যে, ১৭টি দল এই যন্ত্রের পক্ষে কথা বলেছে। অভিযোগ উঠে এসেছে, ইভিএমের বিরোধিতাকারী কয়েকটি দলের বক্তব্য পালটে দিয়েছে কমিশন। এই বিষয়ে ওঠা প্রশ্নেরও জবাব দেন মো. আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘দলগুলোর সঙ্গে যে সভা করেছি, তা আপনারা সরাসরি দেখেছেন। আমাদের কর্মকর্তারা এগুলো লিপিবদ্ধ করেছেন, ভিডিও ক্লিপ আছে। সেগুলো দেখে আমাদের লিখিতভাবে দিয়েছেন। তিন বার মিলিয়ে দেখা হয়েছে। আমরা দলগুলোর লিখিত বক্তব্য এবং ভিডিও ক্লিপের ভিত্তিতে ইভিএম নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর অনেকেই বলেছেন, যদি কারচুপি করা না যায়, তবেই ইভিএম চায় তারা। কাজেই সেই হিসেবেই আমরা দেখেছি মোট ১৭টি দল ইভিএম চায়।
তবে অভিযোগ যেহেতু এসেছে, সেহেতু এটি খতিয়ে দেখার কথাও বলেন এই নির্বাচন কমিশনার। বলেন, যেহেতু পত্রিকায় এসেছে, আমরা দেখব আমাদের কোনো ভুলত্রুটি আছে কি না। যদি ভুল থাকে আমরা সংশোধন করব। ১৭০ জিবি রেকর্ড আছে আমাদের কাছে। অনেকেই লিখে নিয়ে এসেছেন বিপক্ষে, কিন্তু আলোচনা পর মাইন্ড চেঞ্জ করেছেন, আমরা তাদের পক্ষে রেখেছি।
বর্তমান কমিশনের অধীনে এখন পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের যেসব এলাকায় ভোট হয়েছে, তার সবগুলোই হয়েছে ইভিএমে। এসব নির্বাচন নিয়ে বলার মতো কোনো অভিযোগ ওঠেনি।
ইভিএমে ভোট হলে যদি ভোট সুষ্ঠু করা যায় তাহলে ৩০০ আসনের সবগুলোতেই কেন এই যন্ত্র ব্যবহার করা হবে না, এমন প্রশ্ন ছিল নির্বাচন কমিশনারের প্রতি। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের টাকা দেন, তাহলে ৩০০ আসনেই ইভিএম করব। এ ছাড়া প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা যদি করতে পারেন, আমরা ৩০০ আসনেই করব। কমিশনের হাতে যতগুলো ইভিএম আছে, সেগুলো দিয়ে ১৫০ আসনে ভোট করা সম্ভব নয়। কমিশন হিসাব করে দেখেছে, ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ইভিএমে ভোট করা সম্ভব। এ কারণে আরও মেশিন কিনতে চায় নির্বাচন কমিশন।