স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালুর পর এবার জাপানের হাত ধরে এগিয়ে চলছে বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর কাজ। এটি দেশের দীর্ঘতম রেলসেতু। এর ৫০টি পিলারের মধ্যে ৩৮টির পাইলিংয়ের কাজ শেষ, পাশাপাশি শেষ হয়েছে ১১টি পিলারের কাজ। দেশিবিদেশি প্রকৌশলী আর কর্মীদের তত্ত্বাবধানে রাতদিন সমান তালে চলছে পাইলিং ও সুপার স্ট্রাকচার বসানোর কাজ। সেতুর পিলারের ওপর টুংটাং শব্দে এগিয়ে চলছে স্প্যান বসানোর কাজও। এরই মধ্যে প্রায় ৩৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। যথাসময়ে কাজ শেষ করা গেলে এ সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে। বড় এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহনে আরো গতি আসবে। চলবে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার যাত্রীবাহী ট্রেন আর পণ্যবাহী ট্রেন চলবে ৮০ কিলোমিটার গতিতে।
এরই মধ্যে সেতুর ৪৭ ও ৪৮ নম্বর পিলারের ওপর স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ স্প্যান। চলতি মাসের শেষের দিকে আরো একটি স্প্যান বসানো হবে। আগামী মাসে পাশাপাশি তিনটি স্প্যান দৃশ্যমান হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা।
প্রকল্পের টাঙ্গাইল অংশের (ডব্লিউ ডি-১) সুপার স্ট্রাকচারের সাইড চিফ ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক জানান, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার থেকে আমদানি করা উন্নতমানের বিশেষ ধরনের বড় বড় স্টিলের কাঠামো দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে স্প্যানগুলো। প্রথম স্প্যান স্থাপন হয়েছে, এখন দ্বিতীয় স্প্যান স্থাপনের কাজ চলছে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, আধুনিক সব সুযোগসুবিধার সমন্বয়ে নির্মিত হচ্ছে রেলসেতুটি। বঙ্গবন্ধু সেতু ইস্ট (বিবিই) স্টেশন ও বঙ্গবন্ধু সেতু ওয়েস্ট (বিবিডব্লিউ) স্টেশনে স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলিংকিং (সিবিআই) সিগন্যালিং সিস্টেম থাকবে। সেতু বরাবর গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপলাইনও থাকবে। ডুয়েলগেজ ডাবল-ট্র্যাকের এই সেতুটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় রেলসেতু।
সেতুটি নির্মাণ হলে বঙ্গবন্ধু সেতুর পুরোনো রেললাইন তুলে নেওয়া হবে বলে জানায় রেল কর্তৃপক্ষ। রেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, জাপানি অর্থায়নের জাপানি দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্মাণকাজ করছে। নতুন সেতুতে ডবল লাইনে ট্রেন চলাচল আরো সহজ হবে।
কাজের অগ্রগতি বেশ ভালো জানিয়ে এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান বলেন, ২০২৪ সালের ১০ আগস্টে নির্ধারিত সময়ে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে আমরা আশা করছি। টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ সীমান্তে ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হলে রাজধানীর সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ শুরু হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। পণ্য পরিবহনও নিষিদ্ধ রয়েছে সেতুটি দিয়ে। এই পরিপ্রেক্ষিতে পৃথক রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এতে সময়ক্ষেপণসহ শিডিউল বিপর্যয়ে যাত্রীরা প্রায়ই ভোগান্তিতে পড়েন। এরপরই বঙ্গবন্ধু রেলসেতু নির্মাণের চিন্তা সামনে আসে।
২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর সেতু নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হবে ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেবে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। বাকি ৪ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে।