ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিতে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানোর পর থেকে রুশ নাগরিকেরা (পুরুষ) দেশ ছাড়তে শুরু করেছে। রাশিয়া ছাড়তে অনেকে জর্জিয়া সীমান্তে জমায়েত হয়েছে।
জর্জিয়া সীমান্তে গাড়ির জটলা প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে জর্জিয়া সীমান্ত দিয়ে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ রাশিয়া ছেড়েছে।
তবে রুশ কর্তৃপক্ষ লোকজনের দেশ ছেড়ে পালানোর খবরকে ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, গত বুধবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে যুদ্ধ অংশ নিতে যাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তার মধ্যে সরকারের জন্য কাজ করা তথ্য-প্রযুক্তিকর্মী, ব্যাংকার ও সাংবাদিকরা অন্তর্ভুক্ত নয়।
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে আসছে রাশিয়া। আজ শনিবার দেশটিতে মস্কোর তরফ থেকে আগ্রাসনের সাত মাস পূরণ হচ্ছে। হামলা শুরুর পর থেকে রুশবাহিনী ইউক্রেনে বেসামরিক এলাকায় বোমা ফেলেছে, মানুষজনকে অত্যাচার, যৌন নির্যাতন ও হত্যা করেছে।
ইউক্রেনে রুশ বাহিনী এসব কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধ করেছে। জাতিসংঘের তদন্তকারীরা এসব কথা বলেছেন। যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক তদন্তকারী দলের প্রধান এরিক মোজ গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদকে তাদের অভিমত জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, তদন্ত কমিশন যেসব তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে, তার আলোকে বলা যায়, ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর দ্বারা বড় ধরনের যুদ্ধাপরাধের ঘটনা ঘটেছে।
জাতিসংঘের তদন্তকারীরা সচরাচর এমন অভিমত দেন না। তাই যুদ্ধের সাত মাসে এসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের এমন অভিমত বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে।
যুদ্ধ শুরুর সাত মাসের প্রাক্কালে জাতিসংঘের তদন্তকারী দলের প্রধান এরিক মোজ বলেছেন, রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইউক্রেনের বেসামরিক স্থাপনা ও জনবহুল এলাকায় হামলা চালিয়েছে, বোমা ফেলেছে। এসব ঘটনায় বেসামরিক মানুষজনের প্রাণ গেছে। তাঁরা ক্ষতির শিকার হয়েছেন। আন্তর্জাতিক আইনে যা যুদ্ধাপরাধের শামিল।
তিনি আরো বলেন, তারা তদন্তের কাজে ইউক্রেনের যেসব এলাকা ভ্রমণ করেছেন, সেখানে রুশ বাহিনীর দ্বারা ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের প্রমাণ পেয়েছেন। অনেক মানুষকে পেছনে হাত বাঁধা অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে। অনেকের মাথায় গুলি করা হয়েছে। অনেককে গলা কেটে হত্যা করেছে রুশবাহিনী।
ইউক্রেনের ১৬টি শহর ও বসতিতে রুশবাহিনীর পরিচালিত এমন হত্যাকাণ্ড নিয়ে তদন্ত করছে জাতিসংঘ। এরিক মোজ জানান, এ ছাড়াও ইউক্রেনের আরও অনেক জায়গায় রুশবাহিনীর আইনবিরুদ্ধ কাজের অভিযোগ তাঁরা পেয়েছেন। এসব অভিযোগের নথিপত্র সংগ্রহের কাজ চলছে।
জাতিসংঘের তদন্তকারীর এমন অনেক ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছেন, যারা রুশবাহিনীর দ্বারা সরাসরি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অনেককে নির্যাতনের পর বন্দি করে রাশিয়ার কারাগারে আটক রাখা হয়েছিল। বন্দি হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর মুক্তি পান তারা। তবে অনেকেই নির্যাতনের পর গুমের শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে, এমনটাই জানিয়েছেন এরিক মোজ।
এ ছাড়া ইউক্রেনে রুশ সেনাদের দ্বারা সংঘটিত ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের বিভিন্ন অভিযোগ জাতিসংঘের তদন্তকারীদের হাতে এসেছে। এরিক মোজ জানান, ভুক্তভোগী শিশু ও নারীদের বয়স ৪ থেকে ৮২ বছরের মধ্যে। এই বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত শেষ হলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনতে পারবেন জাতিসংঘের তদন্তকারীরা।