Home » ওপারে গোলাগুলি, ক্যাম্পে বাড়ছে রোহিঙ্গা খুন

ওপারে গোলাগুলি, ক্যাম্পে বাড়ছে রোহিঙ্গা খুন

0 মন্তব্য 431 ভিউজ

মিয়ানমারে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সঙ্গে সে দেশের সেনাবাহিনীর কথিত সংঘাত ক্রমে বাড়ছে। সীমান্ত জুড়ে ওপারে মর্টারশেল নিক্ষেপ ও গোলাগুলি যেন থামছেই না। ফলে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে সীমান্তে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী। 

ওপারের গোলাগুলির মধ্যেই রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরগুলো দিনদিন অস্থির হয়ে উঠছে। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে অবস্থানরত সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যত দেরি হচ্ছে তত বাড়ছে অপরাধ। ক্যাম্পে খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, গ্রুপে গ্রুপে গোলাগুলি, আধিপত্য বিস্তার, মাদক, অস্ত্র নিয়ে সংঘাত লেগেই আছে। এ নিয়ে কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দারা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। মানবিক আশ্রয় এখন সবার গলার কাঁটা ও বিষফোড়ায় পরিণত হয়েছে।

সূত্র মতে, গত চার মাসে ক্যাম্পে টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হয়েছেন ১৫ জন নেতা ও স্বেচ্ছাসেবক। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বেচ্ছাসেবক দল মাঠে নামার পর থেকে মাঝিরা টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। হত্যার শিকার হচ্ছেন রোহিঙ্গা নেতারাও। এছাড়া হত্যার শিকার হচ্ছেন বিভিন্ন সংস্থাকে অপরাধীদের তথ্য সরবরাহকারীও।

বৃহস্পতিবার উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে এরশাদ নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তিনি এক্সটেনশন ক্যাম্প-৪ এইচ ব্লকের বাসিন্দা। কুতুপালং ক্যাম্পে এই ঘটনা ঘটে। ১৪-এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মাসুদ আনোয়ার জানান, ক্যাম্পে এরশাদ নামে একজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এই হত্যাকাণ্ডের কারণ এখনো অজানা। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

এদিকে মঙ্গলবার রাতে উখিয়ার বালুখালী ১৮ নম্বর ক্যাম্পে রাতের বেলায় পাহারায় নিয়োজিত থাকা মো. জাফর (৩৫) নামে এক স্বেচ্ছাসেবককে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। শরণার্থী ক্যাম্পে একের পর এক হামলা ও হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে বিদ্রোহী রোহিঙ্গা গ্রুপগুলো। পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে রাতে পাহারার পদ্ধতি তারা অকার্যকর করার চেষ্টা করছে বলে মনে করছেন পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবীরা।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১১৫টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে গত চার মাসে ১৫টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। আর এসব খুনের শিকার হওয়া রোহিঙ্গারা ক্যাম্পভিত্তিক ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতা (মাঝি) ও স্বেচ্ছায় পাহারারত স্বেচ্ছাসেবক ছিলেন। উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে আর্মড পুলিশের তিনটি ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে।

৮ এপিবিএন এর উপ-অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম জানান, ২০২১ সালের গত ২৩ অক্টোবর থেকে চালু হওয়া স্বেচ্ছায় পাহারা ব্যবস্থার কারণে ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মতো অপরাধ কমেছে কয়েক গুণ। অপরদিকে মাদক উদ্ধার বেড়েছে ৩ দশমিক ৬৬ গুণ, অস্ত্র উদ্ধার বেড়েছে ৬ দশমিক ৫ গুণ আর গ্রেফতারের সংখ্যা বেড়েছে ৩ দশমিক ৬৩ গুণ। রবিউল ইসলাম জানান, জামতলী ক্যাম্প থেকে চালু হওয়া স্বেচ্ছায় পাহারা ব্যবস্থা এখন উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলছে। তিনি জানান, স্বেচ্ছায় পাহারা দেওয়ার এই পদ্ধতির কারণে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা প্রতিবন্ধকতায় পড়েছে। এর জের ধরে এসব অপরাধী এখন স্বেচ্ছাসেবক এবং মাঝিকে প্রতিপক্ষ হিসেবে টার্গেট করেছে। এ পরিস্থিতিতে ক্যাম্পের নিরাপত্তা আরো জোরদার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

অভিবাসন ও রোহিঙ্গা বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর জানান, রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ স্বদেশে ফেরত নিতে কাজ শুরু করেছিলেন। আন্তর্জাতিক মহলে তিনি হয়ে উঠেছিলেন রোহিঙ্গাদের মুখপাত্র। কিন্তু ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বন্দুকধারীদের হাতে নিহত হন তিনি। মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে ওঠা মেনে নিতে না পেরে রোহিঙ্গাদেরই একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে মামলার তদন্তে উঠে এসেছে।

আরও পড়ুন

মতামত দিন


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.

আমাদের সম্পর্কে

We’re a media company. We promise to tell you what’s new in the parts of modern life that matter. Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo. Sed consequat, leo eget bibendum Aa, augue velit.