ঢাকার যানজট নিরসনে স্কুলবাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। প্রাথমিকভাবে ডিএনসিসির আওতাধীন ৪টি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলকে বেছে নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করতে চাচ্ছেন ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিরাপদে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের বিষয়ে অভিভাবকদের আস্থা অর্জন করতে পারলে এতে সফলতা আসবে।
অভিভাবকরা বলছেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ বাস সার্ভিস চালু করে বাচ্চাদের বাসা থেকে নিরাপদে আনা-নেওয়া করার ব্যবস্থা করতে পারলে তাতে অভিভাবকদের দ্বিমত নেই। তবে নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। সঠিকভাবে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব না হলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতির শিকার হতে পারেন।
ঢাকার একটি নামি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে নিজের মেয়েকে পড়াচ্ছেন প্রকৌশলী মো. মুশফিকুর রহমান। এতদিন ওই স্কুলের ক্যাম্পাস ছিল ধানমন্ডিতে। সম্প্রতি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় স্থানান্তর করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাদের বাসা ধানমন্ডিতে হওয়ায় তিনি স্কুল পরিবর্তনের চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে উন্নত মানের বাস সেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বসুন্ধরা ক্যাম্পাসে ওই শিক্ষার্থীকে রাখার অনুরোধ করেন। অনুরোধ রেখে মহাবিপদে পড়েছেন বলে অভিযোগ এই অভিভাবকের।
তার মতে, বাসসেবায় চরম বিশৃঙ্খলা চলছে। কোনদিন তার মেয়ে কোন বাসে যাচ্ছে, তা তিনি বুঝতে পারছেন না। যে সময়ে পৌঁছানোর কথা বলা হয়েছিল, সে সময়ে পৌঁছে দিতে পারছে না। যে ধরনের সেবা নিশ্চিত করবে বলেছিল সেটাও দিতে পারছে না। তিনি বলেন, এত টাকা দিয়ে মেয়েকে পড়াচ্ছি। কিন্তু স্কুল থেকে ন্যূনতম সেবাও মিলছে না। বিষয়গুলো নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে গেলেও তারা অভিভাবকদের সম্মান দেখান না।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন হাসান যুগান্তরকে বলেন, ঢাকার স্কুলের শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত গাড়ি বা রিকশার পরিবর্তে স্কুলবাসে আনা-নেওয়ার উদ্যোগ ভালো। তবে এটি বাস্তবায়ন করতে হলে অভিভাবকদের মধ্যে নিরাপত্তা ও নির্বিঘ্নে চলাচলের বিষয়ে আস্থা তৈরি করতে হবে। এ ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক ধরনের নিরাপত্তার বিষয় জড়িত থাকে। সে বিষয়গুলো কীভাবে নিশ্চিত করা হবে তা পরিষ্কারভাবে জানাতে হবে। চারটি বাস নামিয়ে দিলেই হবে না। কীভাবে ব্যবস্থাপনা করলে উদ্যোগ সফল হবে, সে বিষয়গুলো নির্ধারণ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, স্কুলবাসে বাচ্চাদের সিটগুলো যেন তাদের বসার উপযোগী হয়। পাশাপাশি কেউ যেন ধরে ওঠানামা করায়। এছাড়া বাংলাদেশের বাস্তবতায় বাচ্চাদের বাসে ওঠার পর এবং নামানোর পর যেন অভিভাবকরা তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে জানতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞ ড. এসএম সালেহ উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, উদ্যোগ ভালো, তবে খুবই বুঝে-শুনে করতে হবে। নইলে একটা সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে নতুন অনেক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। কেননা ঢাকায় যত্রতত্র স্কুল। শত শত, হাজার হাজার স্কুল। শিক্ষার্থীও অনেক। এই অবস্থায় স্কুলগুলোতে বাস সার্ভিস চালু করলেও ঢাকা শহর স্কুলবাসে ভরে যাবে। তিনি বলেন, ঢাকার একটি বড় স্কুল ভিকারুননিসা নূন। এই স্কুলের শিক্ষার্থীদের বাসে করে আনা-নেওয়া করতে হলে কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০টি বাস লাগবে। এমন অবস্থা হলে স্কুল কর্তৃপক্ষ স্কুল চালাবে, নাকি বাসের ব্যবস্থা করবে?
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসির আওতাধীন ৪টি স্কুলে পাইলট প্রকল্প হিসাবে স্কুলবাস চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুরুতে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে চালু হলেও পর্যায়ক্রমে সব স্কুলেই এই সার্ভিস চালু করা হবে। স্কুলবাস চালুর বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে কথা হয়েছে। অনেক শিক্ষক এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে ঢাকা শহরে যানজট কমে যাবে। দূষণ ও কার্বন নিঃসরণও অনেকাংশ হ্রাস পাবে।
তিনি বলেন, অনেক স্কুলে একজন শিক্ষার্থীর জন্য একটি গাড়ি ব্যবহার করা হয়। এতে অসংখ্য গাড়ি রাস্তায় চলাচল করে। স্কুলবাস চালু হলে প্রাইভেট গাড়ির ব্যবহার অনেক কমে যাবে। ছেলেমেয়েরা স্কুলবাসে একসঙ্গে যাওয়া-আসা করলে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টি হবে, সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় হবে।
মেয়র বলেন, বাচ্চাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্কুলবাসগুলোতে সিসি ক্যামেরাসহ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হবে। অ্যাপসের মাধ্যমে ট্র্যাকিং করার ব্যবস্থা থাকবে। স্কুল বাসের চালক ও স্টাফদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। একটি হটলাইন নম্বর থাকবে, যেটির মাধ্যমে অভিভাবকরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করতে পারবে।