ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার চতুল ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে কুমার নদের পাড়ে গড়ে উঠেছে পাটকাঠির হাট। সপ্তাহে দুই দিন বৃহস্পতি ও সোমবার হাট বসে থাকে। বিভিন্ন উপজেলা থেকে কৃষকরা এ হাটে পাটকাঠি বিক্রি করতে আসেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাহাপুর বাজারে ঢুকতেই সড়কের পশ্চিম পাশে বিশাল এলাকা নিয়ে বসেছে পাটকাঠির হাট। ব্যাপারীরা পাটকাঠি কিনে ট্রাকে ভরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন অন্য জেলায়।
জানা যায়, চতুল ও পার্শ্ববর্তী দাদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় পানের বরজ রয়েছে। এসব বরজে পাটকাঠির অধিকতর ব্যবহার হয়। এ কারণে এখানে পাটকাঠির হাট গড়ে উঠেছে।
ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, পাটকাঠির প্রকারভেদে বিভিন্ন দামে বিক্রি হয়। প্রতি চারটা পাটকাঠিতে এক গোন্ডা। আট গোন্ডায় এক পৌন। ষোল পৌনে এক কাওন। এক কাওন ভালো মানের পাটকাঠি বর্তমান দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।
সালথা উপজেলার বলিভদ্রদিয়া গ্রামের কৃষক মোশারফ হোসেন গত বৃহস্পতিবার ১০ কাওন পাটকাঠি বিক্রি করতে এসেছেন। তিনি প্রতি কাওন ২৬০ টাকা দরে বিক্রি করেন।
তিনি বলেন, ‘বেশি দামের আশায় রাজাপুর হাটে পাটকাঠি এনেছিলাম কিন্তু আজ দাম কম।’
চতুল ইউনিয়নের পোয়াইল গ্রামের কৃষক লিয়াকত হোসেন বলেন, এবার খরচের তুলনায় বাজারে পাটকাঠির দাম একেবারে কম। কিছুদিন আগেও যার দাম ছিল ৫০০ থেকে ৬০০, তা এখন কমে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা হয়েছে।
পাটকাঠি ব্যবসায়ী অচিন্ত কুমার সেন বলেন, এ এলাকায় পানের বরজে পাটকাঠির অধিক ব্যবহারের কারণে সপ্তাহে দুই দিন হাট বসে। স্থানীয় লোকজন ছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এ হাটে এসে পাটকাঠি নিয়ে যায়।
রাজাপুর গ্রামের পাটকাঠি ব্যবসায়ী মো. দাউদ লস্কর বলেন, এ এলাকার পানের সঙ্গে রাজাপুরের পাটকাঠির হাটও বিখ্যাত। পশ্চিম ও দক্ষিণ অঞ্চলের বিভিন্ন স্থান থেকে পান বরজ ও মিল কারখানার জন্য আমাদের এ হাটে পাটকাঠি কিনতে আসে পাইকাররা।
চতুল গ্রামের বাসিন্দা মো. মতিয়ার রহমান বর্তমানে জাতীয় পর্যায়ের পাটকাঠি ব্যবসায়ী। তিনি জানান, পানের বরজ, ঘরবাড়ির বেড়াসহ নানা কাজে ব্যবহার হয় পাটকাঠি। কার্বন ফ্যাক্টরিতে পাটকাঠির সাহায্যে কার্বন তৈরি করা হয়, যা চারকল নামেও পরিচিত। চারকল বিদেশেও রপ্তানি হয়। চারকল থেকে কার্বন পেপার, ফেসওয়াস, কম্পিউটারের কালি ইত্যাদি তৈরি হয় বলে শুনেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড় বলেন, এক সময় পাটকাঠি শুধু জ্বালানি হিসেবে কাজে লাগত কিন্তু বর্তমানে নানামূখী ব্যবহারের কারণে পাটকাঠির ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। এ বছর উপজেলায় মোট ১৫ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। এবার ভরা মৌসুমে পানির সংকটে চাষিদের পাট উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। অতিরিক্ত খরচ পুষিয়ে নিতে পাটকাঠি ব্যপক ভূমিকা রাখছে। নির্দিষ্ট হাট থাকায় কৃষকদের জন্য সুবিধা হয়েছে।