স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর যতই সংকট চলুক, আমরা কোনো বাহিনীর সদস্যদের বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করতে দেবো না। সীমান্তে আমাদের বিজিবি সদস্যরা ২৪ ঘন্টা সতর্ক রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশর (বিজিবি) ৯৮তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, মিয়ানমারে অনেক ধরনের সমস্যা চলছে। আরাকান আর্মিসহ বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের তৎপরতা সক্রিয় রয়েছে। এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এর সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু এটাকে কেন্দ্র করে কেউ অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে বিজিবি সদস্যরা বাধা দেবেন। আমাদের বাহিনীর সদস্যরা কাউকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেবে না।
নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শৃঙ্খলা হচ্ছে সৈনিকের মূল পরিচিতি। আদেশ ও কর্তব্য পালনে যে কখনো পিছপা হয় না সে-ই প্রকৃত সৈনিক। সততা, বুদ্ধিমত্তা, নির্ভরযোগ্যতা, আনুগত্য, তেজ ও উদ্দীপনা একটি বাহিনীর শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতার মাপকাঠি।
নবীন সৈনিকরা এসব গুণাবলির প্রতিফলন ঘটিয়ে বাহিনীর ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বিজিবি’র চারটি মূলনীতি-‘মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতা’-এ উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে বিজিবি’র উপর অর্পিত যেকোন দায়িত্ব সুশৃঙ্খল ও সুচারুরূপে পালন করে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরের ৫ তারিখ তৎকালীন বিডিআর এর ৩য় ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত চোরাচালান বিরোধী ও প্রেষণামূলক বক্তব্যের কথা স্মরণ করে চোরাচালান রোধে নবীন সৈনিকদেরকে পেশাগত দক্ষতা অর্জনসহ ব্যক্তিগতভাবে সুদৃঢ়, সুশৃঙ্খল, নির্ভীক ও নির্লোভ চরিত্রের অধিকারী হয়ে নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সবর্দা সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানান। তিনি বিজিবি’র নবীন সৈনিকদের প্রদর্শিত তেজোদীপ্ত কুচকাওয়াজের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন এবং নবীন সৈনিকদের নতুন জীবনে পদার্পণের শুভলগ্নে তাদের স্বাগত জানান।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে তিনি বলেন, কিংবদন্তি মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই বাহিনী তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী দিকনির্দেশনায় আজ একটি সুসংগঠিত, চৌকস, সুশৃঙ্খল ও পেশাদার বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিজিবিকে একটি অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিজিবি’র সাংগঠনিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন এনে বিজিবিকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে উন্নীত করা হয়েছে। বিজিবি এখন জল, স্থল ও আকাশপথে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম। স্মার্ট বর্ডার ম্যানেজমেন্ট এর অংশ হিসেবে অত্যাধুনিক সার্ভেইলেন্স ইকুইপমেন্ট স্থাপন, অত্যাধুনিক যুগোপযোগী ও কার্যকর এন্টি ট্যাংক গাইডেড উইপন্স, এটিভি, এপিসি, রায়ট কন্ট্রোল ভেহিক্যাল ও দ্রুতগামী জলযান সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়াও বিজিবি’র প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ডের কলেবর বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ (বিজিটিসিএন্ডসি), বায়তুল ইজ্জত, সাতকানিয়ার পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গায় আরও একটি আধুনিক প্রশিক্ষণ সুবিধা সম্বলিত ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
৯৮তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ গত ১৭ এপ্রিল ২০২২ তারিখে বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ (বিজিটিসিএন্ডসি) ও চুয়াডাঙ্গা ব্যাটালিয়ন (৬ বিজিবি)-তে শুরু হয়। উভয় প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে সর্বমোট ৮৪৯ জন রিক্রুটের মধ্যে ৮০৩ জন পুরুষ এবং ৪৬ জন নারী রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে। দীর্ঘ ২৪ সপ্তাহের অত্যন্ত কঠোর ও কষ্টসাধ্য এ প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে আজ আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাদের সৈনিক জীবনের শুভ সূচনা হলো।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নবীন সৈনিকদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন এবং বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এসময় বিজিবি’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসন ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিজিবি’র সুসজ্জিত বাদকদল কর্তৃক মনোজ্ঞ ব্যান্ড ডিসপ্লে, থিম ডিসপ্লে এবং বিজিবি’র প্রশিক্ষিত সদস্যদের অংশগ্রহণে আকর্ষণীয় ট্রিক ড্রিল প্রদর্শন করা হয়।