দেবীর বোধন ও ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। তিথি অনুযায়ী আজ শনিবার সন্ধ্যায় দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস অনুষ্ঠিত হবে।
মন্দির ও মণ্ডপে স্থাপন করা হয় বোধনের ঘট। ভক্তের ভক্তি, নিষ্ঠা আর পূজার আনুষ্ঠানিকতায় মাতৃরূপে দেবী দুর্গা অধিষ্ঠিত হবেন মণ্ডপে মণ্ডপে।
তিথির কারণে একই দিন মহাষষ্ঠী পূজা হবে। দেবী দুর্গার আগমনে উচ্ছ্বসিত ভক্তকুল।
হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশ্বাস, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তকালে তিনি এই পূজা আয়োজন করেছিলেন বলে এ পূজাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। কিন্তু রাজা রাবণের হাত থেকে স্ত্রী সীতাকে উদ্ধারের জন্য রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্র শরৎকালে দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন। তাই শরৎকালের এই পূজাকে অকাল বোধনও বলা হয়। বাঙালি হিন্দুদের হৃদয়ে শরৎকালের দুর্গার অধিষ্ঠান কন্যারূপে। প্রতিবছর বিভিন্ন বাহনে সপরিবারে শ্বশুরবাড়ি কৈলাস থেকে কন্যারূপে দেবী মর্ত্যলোকে আসেন বাপের বাড়ি বেড়াতে।
দেবীকে বরণে আয়োজনের কমতি নেই। এরই মধ্যে পাঁচ দিনব্যাপী পূজার সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। আজ মহাষষ্ঠীর পর আগামীকাল মহাসপ্তমী, ৩ অক্টোবর মহাঅষ্টমী, ৪ অক্টোবর মহানবমী এবং ৫ অক্টোবর মহাদশমীর মধ্য দিয়ে উৎসবের সমাপ্তি হবে।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এবার দেবী দুর্গা হাতির পিঠে চড়ে পৃথিবীতে আসবেন। এতে ঝড় বৃষ্টি হবে, শস্য-ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে বিদায় নেবেন নৌকায়। যার ফলে জগতের কল্যাণ সাধিত হবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক কালের কণ্ঠকে জানান, সারা দেশে ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে পূজার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার মণ্ডপের সংখ্যা ৫০টি বেশি। সব মণ্ডপেই নিরাপত্তা নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। গত বছরের সহিংসতার কথা মাথায় রেখে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অনেক বেশি সক্রিয়। তিনি বলেন, ‘গত বছরের হামলার কথা বিবেচনায় নিয়ে আমরা প্রত্যেক মন্দিরে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করেছি, যারা রাতেও মণ্ডপ পাহারা দেবে। ’ ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
কোনো মণ্ডপ-মন্দির অরক্ষিত নেই : এবারের দুর্গাপূজায় দেশের কোনো মণ্ডপ-মন্দির অরক্ষিত অবস্থায় নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রনাথ পোদ্দার। গতকাল শুক্রবার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি আয়োজিত মতবিনিময়সভায় তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে এবার সুষ্ঠুভাবে দুর্গোৎসব সম্পন্ন হবে। বাকি বিষয় সরকার ও প্রশাসন দেখবে। যাতে নির্বিঘ্নে পূজা করা যায়, সেটা নিশ্চিত করা তাদেরই দায়িত্ব। এরই মধ্যে পূজার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ’