ইরানের পুলিশের সঙ্গে দেশটির একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হওয়ার খবর রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এবং সোশাল মিডিয়ায় পাওয়া যাচ্ছে। খবরে বলা হয়েছে, বহু সংখ্যক শিক্ষার্থী তেহরানের শরিফ ইউনিভার্সিটির গাড়ি রাখার স্থানে আটকে পড়েছে।
সোশাল মিডিয়াতে যেসব ভিডিও ছড়িয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, শরিফ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে ছাত্ররা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। দূর থেকে বন্দুকের গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
অন্য একটা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এক গাড়িতে বসে যারা ভিডিও করছিল তাদের ধাওয়া দিতে মোটরবাইকে করে নিরাপত্তা বাহিনীর লোকেরা আসছেন। খবর বিবিসি অনলাইনের।
ইরান ইন্টারন্যাশনাল সাইটসের খবরে বলা হচ্ছে, ছাত্রাবাসগুলোতে পুলিশ হামলা করেছে এবং গুলি করেছে। অন্য একটা খবরে বলা হচ্ছে, বিক্ষোভকারীদের উপর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়েছে।
রোববার অনেক বিক্ষোভকারী ছাত্র প্রথমবারের মতো ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে সংঘর্ষের খবর শুনে একটু বেশি রাতের দিকে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে বিক্ষোভকারীরা সমবেত হতে থাকেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘটনা বিবিসি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করতে পারেনি।
এদিকে গত দুই রাতে তেহরান এবং দেশের অন্যান্য শহরগুলোতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চরম আকার ধারণ করেছে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, তারা যদি এখনই এর বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ান তাহলে একদিন তাদেরও একই ভাগ্য বরণ করতে হতে পারে।
প্রসঙ্গত, সেপ্টেম্বরে মাহসা আমিনি নামে ২২ বছরের এক তরুণী পুলিশের কাছে আটক এবং নির্যাতনের পর কোমায় চলে যায়। নিরাপত্তা হেফাজতে ওই তরুণীর মৃত্যুর পর থেকে ইরানজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। এই তরুণী পোশাক সংক্রান্ত বিধিনিষেধ ভঙ্গ করেছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছিল।
পুলিশি হেফাজতে থাকার পর হাসপাতালে এই তরুণীর মৃত্যু হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে তাকে মারধরের অভিযোগ করা হয়। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে কর্তৃপক্ষ। পুলিশ বলেছে, তার উপর কোনো নির্যাতন করা হয়নি। তার হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হয়।
এর আগে তেহরানে ১৩ সেপ্টেম্বর দেশটির নৈতিকতা রক্ষা পুলিশ যখন আমিনিকে গ্রেপ্তার করে তখন হিজাবের তলা দিয়ে তার কিছু চুল দেখা যাচ্ছিল বলে অভিযোগ করা হয়। পরে তাকে একটি বন্দিশালায় নেওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই তিনি অজ্ঞান হয়ে যান এবং কোমায় চলে যান।
তিন দিন পর তিনি হাসপাতালে মারা যান। পুলিশ কর্মকর্তারা তার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে এবং তাদের একটি গাড়িতে আমিনির মাথা ঠুকে দিয়েছে বলে অভিযোগ। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে দেশটির পুলিশ বাহিনী।
বিক্ষোভকারীরা আমিনির শেষকৃত্যের দিন থেকে দেশজুড়ে প্রতিবাদ করে আসছে, যা গত চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিক্ষোভ বলে মনে করা হচ্ছে। নরওয়ে ভিত্তিক এনজিও ইরান হিউম্যান রাইটস বলছে, ইরানজুড়ে এখন পর্যন্ত ১৩৩জন নিহত হয়েছে।