বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, পূর্বাঞ্চলের উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জের নিচে নেমে যায় এবং আন্ডার ফ্রিকোয়েন্সির কারণেই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা আনস্টেবল হয়েই পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুৎকন্দ্রগুলো ট্রিপ করে। এতে বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের সৃষ্টি হয়। আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে গত মঙ্গলবার গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের প্রতিবেদনের বিষয়ে করা সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান প্রতিমন্ত্রী।
নসরুল হামিদ বলেন, এ ধরনের বিভ্রাট এড়াতে হলে অটোমেশনের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের সঞ্চালনব্যবস্থা অনেক পিছিয়ে আছে। আরো আধুনিক ব্যবস্থা করতে হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান, পিডিবির চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন।
লিখিত বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত ৪ অক্টোবর দুপুর ২ টার দিকে পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ঘাটতি ছিল এবং পশ্চিমাঞ্চলে বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছিল। এ অবস্থায় পশ্চিমাঞ্চল থেকে পূর্বাঞ্চলে ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছিল। ঘটনার সময় আশুগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জের ২৩০ কেভির দুটি সার্কিট এবং ঘোড়াশালের দুটি সার্কিট ট্রিপ করায় পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে পূর্বাঞ্চলের উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জের নিচে নেমে যায় এবং আন্ডার ফ্রিকোয়েন্সির কারণেই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা আনস্টেবল হয়েই পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুৎকন্দ্রগুলো ট্রিপ করে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সৃষ্টি হয়।
নসরুল হামিদ বলেন, গ্রিড ফেল করার পর রাত ৯টার মধ্যে দেশের পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। প্রথমে রাত ৯টা ৮ হাজার ৪৩১ মেগাওয়াট, এরপর আস্তে আস্তে বেড়ে তা রাত ১২টায় ১০ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়। বিদ্যুৎ বিভাগের সংশিস্নষ্ট সবার প্রচেষ্টায় সাত ঘণ্টার মধ্যে পূর্বাঞ্চলের পুরো এলাকায় বিদ্যুত্ সরবরাহ করতে পেরেছি আমরা। অনাকাঙ্ক্ষিত বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ উদঘাটনে পিজিসিবির পক্ষ থেকে একটি সাত সদস্যের কমিট গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে বুয়েট ছাড়াও অনেক বিশেষজ্ঞ রয়েছ।
এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের থেকে বাইরের লোক নিয়ে আরো একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুটি কমিটি এখন তদন্তের কাজ করছে। কমিটির সদস্যরা ৫ অক্টোবর ঘোড়াশাল গ্রিড উপকেন্দ্র পরিদর্শন করেন। তারা জানান, গ্রিড বিপর্যয় হলেও বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে কোনো ফিজিক্যাল ড্যামেজ পরিলক্ষিত হয়নি। সে জন্য তদন্ত কমিটি গ্রিডের নানা বিষয়ে তথ্য পর্যালোচনা করতে কিছুটা সময় চেয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যত দ্রুত অটোমেশনে যাবো, তত দ্রুত সমস্যা কমে আসবে। আমরা বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলাম। করোনার কারণে দুই বছর আমাদের অনেক কাজ পিছিয়ে গেছে। তিনি বলেন, পিজিসিবি অনেক কাজে পিছিয়ে আছে। বিতরণে আমরা যতটা এগিয়েছি, সঞ্চালনে সেই পরিমাণ এগোতে পারিনি। আরও আধুনিকভাবে আমাদের কাজ করতে হবে। ’
২০১৪ সালের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সেদিনের ঘটনা আর আজকের ঘটনা একেবারেই আলাদা। সেই সময়ের তুলনায় আমরা অনেক এগিয়ে গিয়েছি। এবার যত দ্রুত আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেছিলাম, গতবার সেটা হয়নি। এবার সাত ঘণ্টার মধ্যেই বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। ঢাকায় আমরা দেরি করেছি, কারণ ঢাকার চাহিদা বেশি, তাই আবার ট্রিপ করার ঝুঁকি নিইনি। আস্তে আস্তে ঢাকায় সরবরাহ শুরু করা হয়। ’