খুলনার আলোচিত রহিমা বেগম ‘অপহরণ’ মামলার জট খুলতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তারা নিশ্চিত হয়েছেন তাকে অপহরণ করা হয়নি। রহিমা বেগম স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে গিয়েছিলেন। তবে, কী কারণে, কীভাবে ও কার সহায়তায় তিনি আত্মগোপনে গিয়েছিলেন তা জানতে অধিকতর তদন্ত করছে পিবিআই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিবিআইকে প্রথমে যে তথ্য দিয়েছিলেন রহিমা বেগম, মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তা উল্টে যায়। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে রয়েছে ভিন্ন তথ্য। আবার তদন্তে বেরিয়ে আসছে অন্য তথ্য। সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী কথিত এই অপহরণ মামলায় ফেঁসে যেতে পারেন তার স্বামী বেল্লাল হওলাদার ওরফে বেল্লাল ঘটক। সন্দেহের তালিকায় আছেন তার সন্তানরাও।
খুলনা পিবিআই পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানান, গত ৬ সেপ্টেম্বর রহিমা বেগম বান্দরবান যান। ঐ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আর্মিপাড়ার রিজিয়া বেগমের বাসায় প্রথমে আশ্রয় নেন তিনি। রহিমা বেগম তাকে জানান, বরিশাল থেকে এসেছেন এবং পথিমধ্যে সব কিছু হারিয়ে গেছে। সেখানকার নারীরা ধূমপায়ী বিধায় পাঁচ দিন পর চলে যান ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কামরুন নাহার মনি নামে আরেক নারীর কাছে। তার একটি ছোট ভাতের হোটেলে কাজ করতে চেয়েও পরে অস্বীকৃতি জানান। এ সময় তিনি ভিক্ষার দুই কেজির একটু বেশি চাল ১৪০ টাকায় বিক্রি করেন। এরপর মনির সহযোগিতায় তিনি স্থানীয় একটি সরকারি দপ্তরে রান্নার কাজ করতে যান। ঐ সংস্থা জাতীয় পরিচয়পত্র চাইলে সেটি নেওয়ার কথা বলে মনির কাছ থেকে ১ হাজার টাকা ধার করে গত ১৬ সেপ্টেম্বর বান্দরবান থেকে রওনা করেন তিনি। পরদিন ১৭ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার বোয়ালমারী ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের বাড়িতে আসেন। এরপর তিনি সেখানে স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে জন্মনিবন্ধন করার জন্যও বারবার যোগাযোগ করেন।
পুলিশ সুপার বলেন, রহিমা বেগমকে খুলনার বাসা থেকে বের হতে সহায়তা করাসহ তার অন্তর্ধানের বেশিরভাগ ঘটনাই জানতো বর্তমান স্বামী বেল্লাল ঘটক। এছাড়া বেল্লাল ঘটকই একমাত্র ব্যক্তি যিনি রহিমা বেগম নিখোঁজের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তার সঙ্গে ছিলেন। ঐ দিন নিখোঁজের পূর্বে রহিমা বেগমকে তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান কেন ১ হাজার টাকা বিকাশে পাঠালেন সেটিও তদন্তের বিষয়। তবে ২৭ আগস্ট থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি কোথায় ছিলেন এ হিসেব এখনো মেলাতে পারছে পিবিআই। এদিকে, রহিমা বেগম অপহরণ মামলায় গ্রেফতার ও পরবর্তীতে জামিন পেয়েছেন দুই ভাই মো. মহিউদ্দিন ও গোলাম কিবরিয়াসহ আরও তিনজন।
মহিউদ্দিন বলেন, ঐ রাতে রহিমা বেগম নিখোঁজ হওয়ার পরই বেল্লাল ঘটক এসে আমাদের বলেন, তোমরা আমার স্ত্রীকে গুম করেছো, আমি তোমাদের নামে মামলা করবো। তাই আমাদের প্রশ্ন আগে খোঁজ না করে তিনি কেন আমাদের হুমকি দিলেন? এছাড়া রাতে খবর পাওয়ার পর মরিয়ম মান্নান কেন পরদিন এলেন। তাহলে কি তিনি ঢাকাতে তার মাকে রিসিভ করে তারপর খুলনা এলেন?
গোলাম কিবরিয়া বলেন, কারাগারে থাকাকালীন বেল্লাল ঘটকের সঙ্গে তাদের একাধিকবার সাক্ষাৎ হয়েছে। পিবিআই তাকে রিমান্ডে নিতে পারে এমন সংবাদে বেশ দুশ্চিন্তায় আছেন বেল্লাল। এছাড়া বাড়িতে থাকাকালীন রহিমা বেগম টিভিতে ক্রাইম পেট্রোল দেখতেন বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ২৭ আগস্ট খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা এলাকা থেকে গৃহবধূ রহিমা বেগম (৫২) নিখোঁজ হন। পরদিন তার মেয়ে আদুরী আক্তার বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর ২৪ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ১১টার দিকে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার বোয়ালমারী ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের বাড়ি থেকে পুলিশের একটি টিম তাকে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে। উদ্ধারের সময় তিনি বাড়ির লোকজনের সঙ্গে হাসিখুশি অবস্থায় গল্প করছিলেন। এর আগে ২৩ সেপ্টেম্বর সকালে রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নান ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর থানায় উদ্ধার হওয়া এক নারীর মৃতদেহের সালোয়ার দেখে তার মায়ের লাশ বলে দাবি করেন।