আজ শুরু হয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের লড়াই। এ লড়াইয়ে টাইগাররা মাঠে নামবে পাঁচ ম্যাচে। বিশ্বকাপ শুরুর আগেই দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত ও পাকিস্তান বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হিসেবে নির্ধারিত ছিল। এবার সুপার টুয়েলভের বাছাইপর্ব থেকে টাইগাররা পেয়েছে দুই প্রতিপক্ষ। এ গ্রুপের রানার্সআপ নেদারল্যান্ডস এবং বি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে লড়বে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
আগামী ২৪ অক্টোবর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। এরপর ২৭ অক্টোবর বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, সিডনিতে। ৩০ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে। পরের দুটি ম্যাচ অ্যাডিলেডে। ২ নভেম্বর প্রতিপক্ষ ভারত। এরপর ৬ নভেম্বর বাংলাদেশ লড়বে পাকিস্তানের বিপক্ষে।
স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে গতকাল গ্রুপ বি এর চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সুপার টুয়েলভে জায়গা করে নিয়েছে জিম্বাবুয়ে। তারা পড়েছে বাংলাদেশের গ্রুপে। হোবার্টে আগে ব্যাট করে জিম্বাবুয়ের সামনে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৩২ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল স্কটল্যান্ড। জবাব দিতে নেমে ৯ বল আগেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় জিম্বাবুয়ে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার লড়াই ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত ও নামিবিয়ার। না থেকেও এই ম্যাচে ছিল নেদারল্যান্ডস। ফলের ওপর যে নির্ভর করছিল তাদের ভাগ্য। নিজেদের প্রথম প্রতিপক্ষের নাম জানতে হয়তো চোখ রেখেছিল বাংলাদেশও। রোমাঞ্চের নানা ধাপ পেরিয়ে নাটকীয় জয় পেয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। তাতে ‘এ’ গ্রুপের রানার্সআপ হয়ে সুপার টুয়েলভে জায়গা পায় নেদারল্যান্ডস।
অস্ট্রেলিয়ায় পা রাখার পর থেকে বাংলাদেশ দল অনুশীলন করছে ব্রিজবেনের অ্যালান বোর্ডার মাঠে। নেট অনুশীলন থেকে শুরু করে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এখানে। বাংলাদেশ তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে পুরোপুরি। প্রস্তুতি ম্যাচ শেষেও এখানে বাড়তি দুই দিন থেকে যেতে হওয়ায় দল থেকে আপত্তি খুব একটা নেই এখানকার সুযোগ-সুবিধার কারণেই। তবে প্রস্তুতির একটা বড় অংশ ফিল্ডিং ও রানিং বিটুইন দা উইকেট অনুশীলন এখানে পর্যাপ্ত ও আদর্শ হচ্ছে না। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের বড় দুর্ভাবনার জায়গা ছিল অস্ট্রেলিয়ায় মাঠের বড় আকৃতি। বড় মাঠ মানেই বেশি ফাঁকা জায়গা আর এক-দুই-তিন রানের সুযোগ অনেক বেশি। রানিং বিটুইন দা উইকেট তাই এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচের ভেন্যু হোবার্টের বেলেরিভ ওভালে মাঝখানের উইকেট থেকে সোজাসুজি সীমানা এক প্রান্তে ৮০ মিটার। সেই অংশের ঠিক পাশে, ডানহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য যেটি হবে ওয়াইড লং অন, সেখানে সীমানা ৮২ মিটার। ঠিক উল্টোদিকে যদি সীমানা ধরা হয়, সোজাসুজি একদিকে সীমানা ৭০ মিটার, আরেক দিকে ৫৯ মিটার। মাঝখানের উইকেট থেকে এক প্রান্তের সীমানা ৫৬ মিটারও আছে।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচের ভেন্যু সিডনি ক্রিকেট মাঠে দুই প্রান্তে সোজাসুজি সীমানা ৮০ মিটার ও ৭৬ মিটার পর্যন্ত। মাঝখানের উইকেট থেকে স্কয়ার সীমানা আবার নেমে আসে ৬৮ ও ৬৬ মিটার পর্যন্ত। ব্রিজবেনের গ্যাবায় সোজাসুজি সীমানা ৭১ মিটার, পাশেই ৭৫ মিটার। এই মাঠেই আবার উল্টোদিকের সোজাসুজি সীমানা ৬৩ মিটার। অ্যাডিলেইড ওভালে একইভাবে সোজাসুজি সীমানা দুই প্রান্ত ৭৯ ও ৮০ মিটার, তেমনি মাঝখানের উইকেট থেকে স্কয়ার বাউন্ডারি ৬২-৬৩ মিটার।
এদিকে দলের টেকনিক্যাল কনসালট্যান্টের শ্রীধরন শ্রীরামের দাবি, তার দলের সুবিধাই হবে এসব বড় মাঠে। তার ভাষ্য,‘(বড় সীমানা) আমাদের সহায়তাই করবে। কারণ আমাদের ব্যাটসম্যানরা পছন্দ করে বলের গতি কাজে লাগাতে। আমরা পাওয়ার হিটার নই, বলের গতির ওপর নির্ভর করি। বড় সীমানা তাই ব্যাটসম্যানদের সহায়তা করবে, যদি তারা সঠিক পকেটে বল ঠেলতে পারে এবং রানিং বিটুউন দা উইকেট ভালো হয়। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি, ফিল্ডিং পজিশন অনুযায়ী জায়গামতো বল ঠেলে দ্রুত দৌড়ানো এবং সুযোগমতো বাউন্ডারি আদায় করা। সঠিক গতিটা ধরতে পারলে আমরা ভালো করব।’
এদিকে বাংলাদেশ দল হারের বৃত্তে বন্দী অনেকদিন ধরেই। ত্রিদেশীয় সিরিজের সব ম্যাচ হারের পর আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচও হেরেছে সাকিব আল হাসানের দল। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচ ভেসে গেছে বৃষ্টিতে। এখন অপেক্ষায় বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মূল লড়াই শুরুর। এর আগে গতকাল থেকে ব্রিজবেনে অনুশীলন শুরু করেছে টাইগাররা।
নতুন টেকনিক্যাল পরামর্শক শ্রীধরন শ্রীরাম এতদিন দল নিয়ে ‘পরীক্ষা’ চালাচ্ছিলেন বলে শোনা যাচ্ছিল। নিজের একাদশ খুঁজে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি,‘ফলাফল আমাদের পক্ষে আসছে না, এটা নিয়ে আসলে কিছু বলতে চাইছি না। তবে ড্রেসিংরুমের পরিস্থিতি ঠিকঠাকই আছে। দলের সবাই ফুরফুরে মেজাজে আছে, সবাই ইতিবাচক। ছেলেরা প্রতিনিয়তই নতুন কিছু শিখছে।’ তিনি যোগ করেন,‘তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলে নিচ্ছে, বিশেষ করে সাকিব সবার সইে কথা বলছে। মিটিংয়ে খেলোয়াড় থেকে শুরু করে কোচেরা নিজেদের মতামত জানাচ্ছে যেটা আমাদের জন্য খুবই ভালো দিক।’
এবার বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে সরাসরি খেলছে বাংলাদেশ দল। পাঁচ ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশ দলের তিন ম্যাচ জেতা সম্ভব বলে মনে করেন শ্রীরাম,‘পাঁচটা ম্যাচের মধ্যে তিনটা ম্যাচ জেতা সম্ভব। তবে আমাদের বাস্তবতা মানতে হবে। ক্রুশাল মোমেন্টে ছোট ছোট ব্যাপারগুলোই ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দেয়। আমাদের এই ব্যাপারে আরো সতর্ক থাকতে হবে। একসাথে সব ম্যাচ নিয়ে না ভেবে ম্যাচ বাই ম্যাচ আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’